কিশোরগঞ্জের ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বরাদ্দের তিন বছরে উৎপাদনে গেছে মাত্র একটি কারখানা। অথচ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৩৪টি প্লট। বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লটগুলোর বেশিরভাগই পড়ে আছে ফাঁকা। সেখানে গজিয়ে উঠেছে কাঁশবন। দ্রুত বাকি সব কারখানা চালুর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে বিসিক শিল্পনগরী। প্রধান ফটক পেরিয়ে চোখে পড়ে কয়েকটি নির্মাণাধীন কারখানা। তাদের মধ্যে মেসার্স জিলানী ফ্লাওয়ার মিলস অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস নামের একটি কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম চালাচ্ছে। বাকি কয়েকটি কারখানার নির্মাণকাজ চলছে। একটু সামনে এগোতেই দেখা মিলছে সারি সারি কাঁশবন। প্রতিটি প্লটেই ফুটেছে ফুল। নেই কোনো কর্মচাঞ্চল্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কালিকাপ্রসাদ এলাকায় ৪০ একর ভূমিতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য সরকার অনুমোদন দেয়। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। তবে শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ শুরু হলেও আশানুরূপভাবে এগোচ্ছে না ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীর কার্যক্রম।
প্লট বরাদ্দের পর তিন বছরে মাত্র একটি কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে আটটি কারখানা, নির্মাণাধীন সাতটি এবং নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছে ১৮টি। বাকি ২২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে তারা এখনো কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু করেননি।
ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীতে ১২৪ শিল্প ইউনিটে ২৩৪ প্লট বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্য খাদ্য উৎপাদন খাতে ৪০টি, বস্ত্র উৎপাদন খাতে তিনটি, রসায়ন খাতে ৪০টি, চামড়া ও রাবার শিল্প উৎপাদন খাতে ২২টি, প্রকৌশলী উৎপাদন খাতে ১৪টি এবং প্যাকেজিং উৎপাদন খাতে পাঁচটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
আগ্রহ নেই উদ্যোক্তাদের, রাজশাহী বিসিক-২ যেন কাশবন
উদ্যোক্তা সংকটে ধুঁকছে লালমনিরহাটের বিসিক
বিসিক শিল্পনগরীর ৬০ প্লটের ৪০টিই ফাঁকা
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি শিল্পনগরীর সব কারখানা চালু হয়, তাহলে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। বদলে যাবে ভৈরবের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা পাদুকা শিল্পের ক্লাস্টারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে এ শিল্পে জড়িতরা সহজ শর্তে ঋণসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মিলাত মিয়া বলেন, ‘বিসিকের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় এখানে রাত হলেই অপরাধ চক্রের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। ফলে বিসিক সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে।’
কালিকা প্রসাদ ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে দাবি, যেন দ্রুত বিসিকের সব কার্যক্রম শুরু করা হয়। এটা হলে এলাকার হাজারও মানুষের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
ভৈরব চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি জাহিদুল হক জাবেদ বলেন, বিসিক শিল্পে তিন বছরে মাত্র একটি কারখানা উৎপাদনে যেতে পেরেছে। বাকিগুলো এখনো উৎপাদনে যেতে পারেনি। তাদের মধ্য বরাদ্দ পাওয়া বেশিরভাগই এখনো স্থাপনার কাজ শুরু করেনি। যারা বিসিক শিল্পে এখনো তাদের বরাদ্দকৃত প্লটে কোনো কাজ শুরু করেননি, সেসব প্লটের মালিকানা বাতিল করে নতুনভাবে বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে ভৈরব শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবিদুর রহমান খান জানান, শিল্পনগরীর কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হতে কিছু সময় লাগবে। তবে বিসিক শিল্পের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় অফিসিয়াল কার্যক্রমসহ শিল্পের নিরাপত্তা রক্ষায় বিঘ্ন ঘটছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। আশা করছি, খুব শিগগির বিসিক শিল্পের কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে শুরু হবে।
রাজীবুল হাসান/এসআর/জেআইএম