৩ ভাইয়ের মিশ্র বাগানে প্রতি গাছে ২০ কেজি কমলা
নিবিড় পরিচর্যা এবং আধুনিক কৃষি পদ্ধতির প্রয়োগে রাজবাড়ীতে সফল বিদেশি ফল চাষি সরোয়ার হোসেন বাবুসহ ৩ ভাইয়ের মিশ্র ফল বাগানে এ বছর কমলার বাম্পার ফলন হয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বাগানের প্রতিটি কমলা গাছে গড়ে প্রায় ২০ কেজির বেশি ফল ধরেছে। ফল বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারজাত করতে হচ্ছে না। ২০০ টাকা কেজি দরে বাগান থেকেই দর্শনার্থী ও ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। খরচের তুলনায় কমলায় এবার কয়েকগুণ লাভবান হচ্ছেন। এদিকে সরোয়ার হোসেন নিজেই নিজস্ব উপায়ে উৎপাদন করছেন কমলা, মাল্টা ও আঙুরের চারা। এই চারা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে উদ্যোক্তরা নিয়ে করছেন বাগান। দর্শনার্থী ও ক্রেতারা বলছেন, সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও সুস্বাদু ফল হওয়ায় তারা বাগান থেকে ফল কিনছেন। তাছাড়া বাগান দেখতেও অনেক সুন্দর। রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চরবাগমারা এলাকার মৃত আনোয়ার হোসেন বিশ্বাসের ৩ ছেলে পৈতৃক জমিতে ২০২০ সালে অলাভজনক ১০ একর জমিতে শুরু করেন কমলা, মাল্টা, আঙুর, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলের চাষ। চারা রোপণের এক বছর পর থেকেই তারা শুরু করেন ফল হারভেস্ট। বর্তমানে তাদের বাগানে ৫শ’র মতো ফলের গাছ থাকলেও চায়না ও দার্জিল
নিবিড় পরিচর্যা এবং আধুনিক কৃষি পদ্ধতির প্রয়োগে রাজবাড়ীতে সফল বিদেশি ফল চাষি সরোয়ার হোসেন বাবুসহ ৩ ভাইয়ের মিশ্র ফল বাগানে এ বছর কমলার বাম্পার ফলন হয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বাগানের প্রতিটি কমলা গাছে গড়ে প্রায় ২০ কেজির বেশি ফল ধরেছে। ফল বিষমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারজাত করতে হচ্ছে না। ২০০ টাকা কেজি দরে বাগান থেকেই দর্শনার্থী ও ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। খরচের তুলনায় কমলায় এবার কয়েকগুণ লাভবান হচ্ছেন।
এদিকে সরোয়ার হোসেন নিজেই নিজস্ব উপায়ে উৎপাদন করছেন কমলা, মাল্টা ও আঙুরের চারা। এই চারা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে উদ্যোক্তরা নিয়ে করছেন বাগান। দর্শনার্থী ও ক্রেতারা বলছেন, সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ও সুস্বাদু ফল হওয়ায় তারা বাগান থেকে ফল কিনছেন। তাছাড়া বাগান দেখতেও অনেক সুন্দর।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চরবাগমারা এলাকার মৃত আনোয়ার হোসেন বিশ্বাসের ৩ ছেলে পৈতৃক জমিতে ২০২০ সালে অলাভজনক ১০ একর জমিতে শুরু করেন কমলা, মাল্টা, আঙুর, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলের চাষ। চারা রোপণের এক বছর পর থেকেই তারা শুরু করেন ফল হারভেস্ট। বর্তমানে তাদের বাগানে ৫শ’র মতো ফলের গাছ থাকলেও চায়না ও দার্জিলিং জাতের প্রায় ৩শ কমলা গাছ আছে। কমলার রং ও রস দেখে খুশি উদ্যোক্তাসহ দর্শনার্থী। প্রতিদিন বাগান দেখতে দূর থেকে আসছেন অনেকেই।
জানা গেছে, ২০২০ সালের শেষদিকে করোনাকালে বিকল্প অয়ের উৎস হিসেবে বাড়ির পাশে অলাভজনক জমিতে ইউটিউব দেখে সরোয়ার হোসেন বাবুসহ ৩ ভাই চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থেকে চারা সংগ্রহ করে কয়েক জাতের কমলা ও মাল্টার বাগান করেন। পাশাপাশি ড্রাগন, পেয়ারাসহ বিদেশি ১৩ জাতের আঙুর চাষ করছেন।
দর্শনার্থী ও ক্রেতা মিতা নুর বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পাশে এই বাগান। যার কারণে মাঝে মধ্যেই এখানে ঘুরতে এবং ফল কিনতে আসি। এখানে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত ফল পাওয়া যায়। দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন ফল কিনতে। এর আগে এখান থেকে ফল নিয়ে খেয়েছি, অনেক সুস্বাদু। এখন ফল প্রয়োজন হলে সরাসরি বাগানে চলে আসি।’
আরও পড়ুন
আনারকলি ফল চাষে সফল ঝিনাইদহের স্টালিন
পাবনায় মাল্টা চাষে বাজিমাত, বছরে আয় ১৫ লাখ
কাজী জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাজার থেকে কিনে সাধারণত যে ফল খাই, তার বেশিরভাগই ফরমালিন দেওয়া। সেগুলো খেয়ে নানা ধরনের অসুখ হয়। সুস্থ ও ভালো থাকতে এই বাগান থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে ফল কিনে খাই। বাগানের ফলগুলোতে কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। একেবারে প্রাকৃতিক, খেলে কোনো সমস্যা হয় না। এর আগে এসে ৫ কেজি কমলা নিয়েছিলাম। আবার এসেছি ১০ কেজি নিতে। ৫ কেজি আত্মীয়ের বাড়িতে নেবো। ৫ কেজি নিজেরা খাবো। বাগান না দেখলে বুঝতে পারতাম না, দেশের মাটিতেও বেদেশি জাতের ফল ভালো হয়।’
বাগান মালিক আজিজুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘এই জমিতে আগে অন্য ফসল করতাম কিন্তু ততটা লাভবান হতাম না। ৫ বছর আগে ৩ ভাই জায়গাটা পরিষ্কার করে মিশ্র ফলের বাগান করি। ৪ বছর ধরে বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করছি। এবার অনেক ফলন হয়েছে। বাগানে চায়না ও দার্জিলিং জাতের কমলা আছে। কমলাগুলো খুবই সুস্বাদু ও রসালো। যার কারণে বাজারে নিতে হয় না। বাগান থেকেই সব বিক্রি হয়ে যায়। ঘুরতে এসে বেশিরভাগ দর্শনার্থী কিনে নিয়ে যান। অন্য ফসলের থেকে ফল বাগান খুবই লাভজনক। খরচও কম। আগামীতে বাগানের পরিধি বাড়াবো।’
বাগান মালিক ও মূল উদ্যোক্তা সরোয়ার হোসেন বাবু বলেন, ‘ভিডিও দেখে ২০২০ সালে ফল বাগান করতে উদ্বুদ্ধ হই। বাগানের বয়স ৫ বছর হলেও ৪ বছর ধরেই ফল সংগ্রহ করছি। ফলগুলো সুন্দর ও সুস্বাদু। এই ফলে কোনো ধরনের স্প্রে বা মেডিসিন ব্যবহার করা হয় না। বিকেল হলেই দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই আসেন বাগান দেখতে। দেখতে এসে ফল কিনে নিয়ে যান। সবাই এ রকম ফলের চাষ করলে আমদানি করতে হতো না। এবার বাগানের প্রতিটি কমলা গাছে গড়ে ২০ কেজির বেশি কমলা ধরেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষমুক্ত ফল মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। বাগানের কোনো ফলে কোনো ধরনের বিষ ব্যবহার করি না। বাগানে সাড়ে ৪শ’র বেশি গাছ আছে। যার মধ্যে কমলা, মাল্টা, পেয়ারা ও ড্রাগনের সাথে আছে বিদেশি আঙুর। বর্তমানে কমলা, মাল্টা ও আঙুরের চারা উৎপাদন করছি। বিভিন্ন স্থান থেকে এসে চারা নিয়ে অনেকে বাগান করেছেন। তাদের পরামর্শ এবং সরেজমিনে গিয়ে সহযোগিতা করি। আমি চাই সবাই বিষমুক্ত ফল চাষ করুক। তাতে আমদানির ওপর প্রভাব কমবে।’
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জনি খান বলেন, ‘রাজবাড়ীতে দিন দিন মিশ্র ফল বাগানের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বড় বড় বেশ কিছু উদ্যোক্তা আছেন, তার মধ্যে চর বাগমারার সরোয়ার বাবুদের ৩ ভাইয়ের মিশ্র ফল বাগান উল্লেখযোগ্য। ফল চাষে নতুন চাষিরা আগ্রহী হলে বেকারত্ব কমবে। পূরণ হবে ফলের পুষ্টির চাহিদা। সদর উপজেলায় ১৫টি মিশ্র ফল বাগান আছে। এখন প্রায় সব বাগান থেকেই কমলা ও মাল্টা হারভেস্ট হচ্ছে। সরোয়ার বাবুর বাগান থেকে অনেকেই বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছেন।’
রুবেলুর রহমান/এসইউ/এমএস
What's Your Reaction?