৩ মাসেও শব্দদূষণ কমেনি ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায়

2 weeks ago 16

ঢাকা বিমানবন্দরের চারপাশ ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার প্রায় তিন মাস কেটে গেলেও শব্দদূষণ কমেনি। উল্টো এ দূষণ বেড়েছে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়। 

সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফিয়ারিক পলিউশন স্টাডিজের (ক্যাপস) সমীক্ষা অনুসারে, ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার দুই মাসের মধ্যে এ এলাকায় শব্দদূষণ প্রায় ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাস্তবায়নের পর প্রথম ধাপে সার্বিক শব্দদূষণ কমলেও দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে প্রথম ধাপের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে শব্দদূষণ।

ক্যাপসের গবেষণা আনুযায়ী, নীরব এলাকা ঘোষণার আগে বিমানবন্দরের মূল প্রবেশ পথে গড় শব্দমাত্রা ছিল ৮৯ দশমিক ১৯ ডেসিবল। নীরব এলাকা ঘোষণা কার্যকরের পরে গড় শব্দমাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ৯০ দশমিক শূন্য ৩ ডেসিবলে। কার্যকরের দুই মাস পর গড় শব্দমাত্রা দাঁড়ায় ৮৯ দশমিক ৬৮ ডেসিবল, যা ঘোষণার আগের চেয়ে প্রায় শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।

এ গবেষণায় আরও বলা হয়, নীরব এলাকা কার্যকরের পরবর্তী ৫ দিনে বিমানবন্দরের মূল প্রবেশপথে শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল প্রবেশপথে ১ দশমিক ১৯ শতাংশ শব্দদূষণ বেড়েছে। তবে দুই মাস পর লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে শব্দদূষণ ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং স্কলাস্টিকা স্কুল পয়েন্টে ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

কিন্তু বিমানবন্দরের মূল প্রবেশপথে শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল প্রবেশপথে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়েছে শব্দদূষণ।

বিমানবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একদিকে যেমন যানজট, তেমনি শব্দদূষণে বিপর্যস্ত পুরো এলাকা। কিন্তু সিটি করপোরেশন বা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোনো মোবাইল কোর্ট কিংবা মনিটরিং করতে দেখা যায়নি। শব্দদূষণ সংক্রান্ত ২-১টি ব্যানার ঝুলতে দেখা গেছে।

বিমানবন্দর রাস্তা দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী দোলোয়ার হোসেন বলেন, এই রাস্তায় শব্দদূষণ কমাতে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখিনি। ২-১ বার মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করতে দেখেছি, কিন্তু তা চলাকালীন সময়েও হর্নে অতিষ্ঠ হয়ে যাই। বিশেষ করে, পুলিশ কিংবা সরকারি গাড়িগুলোকেও এ রাস্তায় হর্ন বাজিয়ে চলতে দেখি।

শব্দ দূষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ক্যাপসের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নীরব এলাকা ঘোষণার পরও শব্দদূষণ সম্পর্কিত সচেতনতামূলক প্রচারণার অভাব দেখা গেছে। একই সঙ্গে নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার সীমাবদ্ধতা এবং ড্রাইভার ও যাত্রীদের এ সম্পর্কে যথাযথ অবগত না হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।

তিনি বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিকমতো না হওয়ায় ঢাকায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি বেড়ে গেছে। এয়ারপোর্টে বাসস্ট্যান্ডের কারণে শব্দদূষণ হচ্ছে। এয়ারপোর্টের মূল গেটের সামনে ইউটার্নের কারণে সৃষ্ট যানজটে শব্দদূষণের পরিমাণ বাড়ছে।

বিমানবন্দর এলাকায় শব্দদূষণ কমাতে সুপারিশ হিসেবে ক্যাপস চেয়ারম্যান বলেন, এয়ারপোর্ট এলাকায় ভেতর ও চারপাশে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধ করতে হবে, হর্ন বাজানোর শাস্তি বৃদ্ধি ও চালকদের শব্দ সচেতনতা যাচাই করে লাইসেন্স প্রদান করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, সিটি করপোরেশনের ঘোষণার পরে তেমন কোনো কাজই হয়নি। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা ছিল, কিন্তু উদ্যোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকার কারণে সেটি করা সম্ভব হয়নি।

এর আগে, চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ কিলোমিটার উত্তর এবং ১ কিলোমিটার দক্ষিণ পর্যন্ত এলাকা ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণার কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। 

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরের চারপাশের দেড় কিলোমিটার এলাকাকে ‘সাইলেন্ট জোন’ বা ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।  জানানো হয়, ১ অক্টোবর থেকে এই ঘোষণা কার্যকর হবে। বিমানবন্দরের উত্তর এবং দক্ষিণ উভয় দিকের নির্ধারিত অঞ্চলটি স্কলাস্টিকা স্কুল থেকে হোটেল লে মেরিডিয়ান পর্যন্ত এলাকাকে ‘নীরব এলাকার’ আওতায় আনা হয়।

Read Entire Article