৩০ বছর আগে ইয়াসমিনের সঙ্গে কী হয়েছিল

2 weeks ago 9

১৪ বছরের কিশোরী ইয়াসমিন আক্তার। ঢাকায় এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন। দিনটি ছিল ১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্ট। ইয়াসমিন ঢাকা থেকে দিনাজপুর তার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বাড়ি ফেরা হয়নি জীবন নিয়ে, বাড়িতে ফিরেছিলেন ইয়াসমিন, তবে লাশ হয়ে। যা ছিল একদল পশুর অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত।

৩০ বছর আগের ঘটনা। ইয়াসমিন বাড়ি ফিরছিলেন। সেদিন দিনাজপুরের বাসে উঠতে না পেরে ঠাকুরগাঁওগামী হাছনা এন্টারপ্রাইজের একটি বাসে ওঠে। রাত হয়ে যাওয়ায় দিনাজপুরের দশমাইল মোড় এলাকায় এক চা দোকানির জিম্মায় নামিয়ে দেন বাসের সুপারভাইজার। চা দোকানি ইয়াসমিনের সঙ্গে ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করেন বাসের জন্য।

ভোরের দিকে (২৪ আগস্ট) নৈশ টহল পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান সেখানে পৌঁছে তরুণী ইয়াসমিনকে নানা প্রশ্ন করে। এক পর্যায়ে দিনাজপুর শহরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে জোরপূর্বক তাকে পুলিশ ভ্যানে তোলেন। কিন্তু রক্ষক পুলিশ হয়ে ওঠে ভক্ষক। চা দোকানিকে তারা আশ্বস্ত করে যে ইয়াসমিনকে তারা তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেবে।

কিন্তু পিকআপে তোলার পর অসহায় ইয়াসমিনকে পৈশাচিকভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয়। পরে ইয়াসমিনের মরদেহ দিনাজপুর-দশমাইল সড়কের রানীগঞ্জ ব্র্যাক অফিসের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। অবশেষে ডাক্তারি পরীক্ষাতে মেলে ধর্ষণের আলামত। পরিষ্কায় হয়ে উঠে ইয়াসমিনকে পুলিশ হেফাজতে ধর্ষণ শেষে খুন করার বিষয়।

এ ঘটনায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়েন দিনাজপুরের সর্বস্তরের মানুষ। প্রতিবাদ ধীরে ধীরে রুপ নেয় আন্দোলনে। বিক্ষুদ্ধ জনতা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করে এবং লুটপাট করে। অঞ্চলটিতে কারফিউ জারি করা হয়। ২৭ আগস্ট কয়েক হাজার জনতার বিক্ষোভ মিছিলে নির্দ্বিধায় গুলি চালায় পুলিশ। এতে সামু, কাদের, সিরাজসহ সাতজন নিহত হন। আহত হন তিন শতাধিক মানুষ।

ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যাসহ, বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় মোট ৩টি মামলা হয়। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। এতে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মঈনুল, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার ও পুলিশের পিকআপ ভ্যান চালক অমৃত লাল বর্মণকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।

২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর আসামি এএসআই মইনুল হক ও কনস্টেবল আব্দুস সাত্তারকে রংপুর জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। একই বছর ২৯ সেপ্টেম্বর অপর আসামি অমৃত লাল বর্মণকেও রংপুর জেলা কারাগারেই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ওই ঘটনার পর থেকে ২৪ আগস্ট নানা আয়োজনে এই দিনটি ‘ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস’ বা ‘জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাচ ধারণ ও শোক র্যালিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে এই দিবস পালন করা হয়।

আরও পড়ুন

কেএসকে/এমএস

Read Entire Article