৩২ বছর ‘রাজনীতিমুক্ত’ কলেজে ছাত্রদলের কার্যক্রমে উদ্বেগ

1 month ago 9

ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় প্রতিষ্ঠার ৩২ বছরেও ছিল না রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। তবে রাজনীতিমুক্ত সেই কলেজে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। রাজনীতির প্রবেশে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কায় এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন কলেজের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

জানা যায়, ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর কলেজে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম হয়নি। রাজনীতি মুক্ত ও নিয়মশৃঙ্খলার জন্য বিশেষভাবে জেলায় বিশেষভাবে পরিচিতি রয়েছে কলেজটির। তবে গত সোমবার (১১ আগস্ট) কলেজে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সদস্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করা হয়। সদস্য সংগ্রহের পর কমিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন।

এদিকে রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমে উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিভাবক ও সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এজন্য কলেজ প্রশাসনের নীরবতাকে দুষছেন তারা।

নূর হোসেন নামে কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, আওয়ামী লীগের মতো দল যে কাজ করেনি, এখন একটি সংগঠনের নেতারা তা করে দেখালেন। বিষয়টি কোনোভাবেই ভালো কিছু বয়ে আনবে না। প্রিয় আঙিনায় এমন কাণ্ড দেখে দূর থেকে খুবই আফসোস হচ্ছে। আশা করি সবাই এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।

ওসমান বিন নবী নামে আরেকজন বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে অভিভাবকদের টাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান হয়, সেখানে রাজনীতি মুক্ত রাখা উচিত। আজকের এমন পরিস্থিতির জন্য কলেজ প্রশাসনের নীরবতা ও মেরুদণ্ডহীনতা দায়ী। কারণ অতীতে এ কলেজ কমিটিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা থাকলেও শুধু কলেজ প্রশাসনের কঠোরতার জন্য কোনো ধরনের কমিটি দিতে পারেনি। এখনই সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।

কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, বিষয়টি আমি অবগত না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরে এসেছে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ কলেজ রাজনীতি মুক্ত ছিল। এসব বিষয় কলেজের অধ্যক্ষ দেখভাল করবেন। আমরা উনার নিয়ন্ত্রণেই কাজ করি। এটির জবাবও উনি দেবেন। শিক্ষকদের ভালো-মন্দের বিষয়গুলো তুলে ধরাই শিক্ষক পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে আমার কাজ। এর বাইরে আমাদের কিছু করার নেই।

৩২ বছর ‘রাজনীতিমুক্ত’ কলেজে ছাত্রদলের কার্যক্রমে উদ্বেগ

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ এনামুল হক বলেন, রোববার (১০ আগস্ট) ছাত্রদলের একজন ছেলে আমাকে মুঠোফোনে কল দিয়ে কলেজে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি করার কথা জানিয়েছিল। আবার সোমবারও কলেজে এসে আমাকে কল দিলে তাদের কর্মসূচি শেষ করে ফেলতে বলি। তখন পরিবারসহ আমি ফেনী ক্যাডেট কলেজে অবস্থান করছিলাম। এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমি আগে থেকে অবগত ছিলাম না।

কলেজ প্রশাসনের নীরবতার অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, বিষয়গুলো কলেজ গভর্নিং বডিকে অবগত করা হবে। কারণ কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে সবাই চান কলেজটি রাজনীতিমুক্ত থাকুক। মূলত এমন কিছুর বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। আশা করি আমরা কলেজটি রাজনীতিমুক্ত রাখতে পারবো।

ফেনী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। এ দেশে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্ররা অসামান্য অবদান রেখেছেন। সেই হিসেবে জয়নাল হাজারী কলেজ কেন পিছিয়ে থাকবে? কলেজে সদস্য সংগ্রহে ফরম বিতরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে কমিটি গঠন করা হবে।

এ ব্যাপারে জয়নাল হাজারী কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক এমএ খালেক বলেন, দীর্ঘসময় ধরে জেলার মধ্যে কলেজটি রাজনীতিমুক্ত ছিল। শিক্ষার্থীদের ফলাফল ভালো ছিল। কোনো ধরনের হানাহানি বা বিশৃঙ্খলা ছিল না। শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই কলেজ ও লেখাপড়ামুখী ছিল। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে অনেকে মনে করছেন এটি আমার ইচ্ছেতে হচ্ছে। জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন ও যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক শওকত আলী জুয়েল পাটোয়ারীকে যেকোনো প্রোগ্রাম কলেজের বাইরে করতে বলেছিলাম। কারণ রাজনীতিতে ঢুকলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হবে, রাজনীতিমুখী হয়ে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ কলেজে ছাত্রদলের ফরম বিতরণের বিষয়টি আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। বিষয়গুলো নিয়ে কলেজ গভর্নিং বডির পাশাপাশি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার ও সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলালের সঙ্গে কথা বলব।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/এমএন/এএসএম

Read Entire Article