৪ ইভেন্টে ৩ রেকর্ডে যে বার্তা দিলেন রিংকি
ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে সব আলো থাকে স্প্রিন্ট ইভেন্টে। বাকি ইভেন্টের ক্রীড়াবিদরা যেন পার্শ্বচরিত্র! মাঝারি ও দূরপাল্লার দৌড়বিদরা তো আরও পেছনের কাতারে, থাকেন আলোর বাইরে। সদ্য সমাপ্ত সামার অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে আলোর বাইরে থাকা ইভেন্ট দিয়েই স্পটলাইটে এসেছেন রিংকি বিশ্বাস।
মোহাম্মদ ইসমাইলকে হারিয়ে ইমরানুর রহমানের দ্রুততম খেতাব জয়। শিরিন আক্তারের রাজত্বে আরও একবার সুমাইয়া দেওয়ানের হানা। নারীদের ১০০ মিটারের পর ২০০ মিটার স্প্রিন্টে ভাগ্য নির্ধারণ ফটোফিনিশে, মাইক্রো সেকেন্ডের ব্যবধানে। শেষ দিনে এসে ২০০ মিটার ইভেন্টে ইমরানুর রহমানের ইনজুরি নিয়ে স্ট্রেচারে করে ট্র্যাক ছাড়া—এমন নাটকীয়তার ভিড়ে রিংকি বিশ্বাসের শিরোনামে আসাটা চমকপ্রদ ঘটনাই বটে! যা সম্ভব হয়েছে অসাধারণ নৈপুণ্যর কারণে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এ ক্রীড়াবিদ চার ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন, সোনা জিতেছেন সব ইভেন্টে। রেকর্ড গড়েছেন তিনটি। তিন দিনের আসরের প্রতিদিন একটি করে রেকর্ড গড়েছেন রিংকি বিশ্বাস।
মেদহীন লিক লিকে গড়ন—মাঝারি পাল্লার দৌড়ের জন্য উপযুক্ত দৈহিক কাঠামোর রিংকি বিশ্বাস। জাতীয় স্টেডিয়ামের মেরুন ট্র্যাকে ১৫০০ মিটার ইভেন্ট দিয়ে শুরু। ৪ মিনিট ৪৮.০৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণ জিতলেন। ১০ হাজার মিটারের স্বর্ণপদক গলায় তোলার পথে গড়লেন রেকর্ড। সময় নিলেন ৩৯ মিনিট ১৪.৫০ সেকেন্ড। ৩ হাজার মিটার ইভেন্টে রেকর্ড গড়ার পথে সময় নিলেন ১০ মিনিট ২৭.৬০ সেকেন্ড। ৫ হাজার মিটার ইভেন্টে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণজয়ের পথে সময় নিলেন ১৮ মিনিট ২০.০০ সেকেন্ড।
চার ইভেন্টের মধ্যে গত এসএ গেমসে পদক জয়ীদের সঙ্গে টাইমিংয়ে সবচেয়ে কাছাকাছি ছিলেন ১৫০০ মিটার ইভেন্টে। শ্রীলংকার নিলানি রত্নায়েকে স্বর্ণজয়ের পথে টাইমিং করেছিলেন ৪ মিনিট ৩৪.৩৪ সেকেন্ড। তার থেকে ১৩.৭৪ সেকেন্ড বেশি সময় নিয়েছেন রিংকি বিশ্বাস। উন্নত প্রশিক্ষণ, সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে ১৩.৭৪ সেকেন্ডের দূরত্ব ঘুচতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে তো দূরপাল্লা ও মাঝারি পাল্লার দৌড়বিদদের কেউ গোনাতেই রাখে না। রিংকি বিশ্বাস কি প্রয়োজনীয় যত্ন পাবেন, যা দিয়ে নিজেকে আরও শানিত করা যায়! উত্তরটা সময় দিতে পারে।
ঈর্ষণীয় সাফল্যর পর এ-সংক্রান্ত দাবি ছিল রিংকি বিশ্বাসের কণ্ঠে, ‘আমাদেরও কিন্তু বৈশ্বিক নানা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পাঠাতে পারে, আমরা আন্তর্জাতিক আসরে অংশগ্রহণ করতে চাই।’ প্রতিযোগিতার শেষ দিন ৫ হাজার মিটার দৌড়ে দেখা গেল খালি পায়ে দৌড়চ্ছেন রিংকি বিশ্বাস! অযত্ন-অবহেলা বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের নিয়মিত চিত্র। তার মধ্যেই রিংকি বিশ্বাসের মতো কেউ মাথা উঁচু করে দাঁড়ান। জানান দেন—আমাদের একটু যত্ন নিলে প্রতিদান হিসেবে দেশকে কিছু দিতে পারি। রিংকিদের দিকে সে দৃষ্টি কি দেবে ক্রীড়া প্রশাসন!