দেশের চার লাখ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বদলি প্রক্রিয়া চলতি মাসে স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে। সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলমান। জুলাইয়ের মধ্যেই তা শেষ হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলামের সই করা এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেহেতু বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে একটি নীতিমালার আওতায় বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন, সেহেতু বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য বদলি নীতিমালা, ২০২৫ প্রণয়ন করা হলো।
নীতিমালা অনুযায়ী, সফটওয়্যার ব্যবহার করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীরা অনলাইনে বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলি কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারী শিক্ষকরা সর্বোচ্চ তিনটি কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে বদলির জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে আবেদন করতে পারবেন।
প্রথম যোগদানের পর চাকরি দুই বছর পূর্ণ হলে বদলির আবেদন করার জন্য যোগ্য হবেন। বদলি নতুন কর্মস্থলে যোগদানের পর ন্যূনতম দুই বছর কর্মে নিয়োজিত থাকার পর পরবর্তী বদলির আবেদন করতে পারবেন।
নীতিমালা অনুযায়ী, একজন শিক্ষক কর্মজীবনে সর্বোচ্চ তিনবার বদলি হওয়ার সুযোগ পাবেন। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বছরে দুজন শিক্ষক বদলির সুযোগ পাবেন। যে কোনো শূন্যপদের জন্য একাধিক আবেদন পাওয়া গেলে নারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়া স্বামী কিংবা স্ত্রীর কর্মস্থলকে বিবেচনায় আনতে হবে।
গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী, শুধু মাউশির মহাপরিচালক (ডিজি) পারস্পরিক বদলির আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারবেন। নীতিমালায় এ বদলি স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারে হবে বলে জানানো হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সেই সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে।
জারি করা নীতিমালায় বদলির সাধারণ শর্তে বলা হয়েছে, এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শূন্যপদের চাহিদা বা বিবরণ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনলাইনে প্রকাশ করবে। প্রকাশিত শূন্যপদের বিপরীতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বদলির আবেদন আহ্বান করবে।
সমপদে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে বদলির জন্য আগামী ১ থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বদলির আদেশ জারি হবে এবং ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান সম্পন্ন হবে।
আবেদনকারী শিক্ষক চাকরির আবেদনে উল্লেখ করা নিজ জেলায় বদলির জন্য আবেদন করবেন। তবে নিজ জেলায় পদ শূন্য না থাকলে নিজ বিভাগের যে কোনো জেলায় শূন্যপদের বিপরীতে বদলির আবেদন করতে পারবেন।
বদলির আবেদন নিষ্পত্তি যেভাবে
বদলির সব প্রক্রিয়া সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সফটওয়্যার তৈরি ও অনলাইন আবেদনের ফরম্যাট নির্ধারণ করবে। বদলি করা শিক্ষকের ইনডেক্স আগের প্রতিষ্ঠান থেকে বদলি করা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ট্রান্সফার হবে।
পারস্পরিক বদলির ক্ষেত্রে লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ বদলি পদায়নের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারবেন। বদলিকৃত শিক্ষকের এমপিও, অন্যান্য আর্থিক সুবিধা ও জ্যেষ্ঠতার ধারাবাহিকতা আগের মতো বজায় থাকবে।
মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, সরকারি হাইস্কুলের জন্য ডায়নামিক ওয়েবসাইট ও বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির জন্য বিশেষ সফটওয়্যার জুলাইয়ে চালু হতে যাচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক বদলি নীতিমালা অনুসারে সেই সফটওয়্যার থেকে তথ্য গ্রহণের মাধ্যমে বদলি করা হবে। সব শিক্ষককে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকর তথ্যপ্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
এএএইচ/এমআইএইচএস/এএসএম