তিব্বতের পূর্বাঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার গ্রাম ঝোবায় দাঁড়িয়ে আছে এক বিস্ময়কর আঙুর গাছ, যা চার শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে প্রকৃতির ঝড়-তুফান, শীত-তাপ সহ্য করে টিকে আছে।
পাহাড়ি মালভূমির শক্ত মাটিতে এর শিকড় গভীরভাবে গেঁথে আছে, আর ডালপালা যেন সময়ের নিজস্ব বলয়ে জড়িয়ে গেছে।
চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছে, এই আঙুরলতাটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন জীবিত বুনো লতা। এর বয়স এখন ৪১৬ বছর। প্রায় আট মিটার উঁচু এই গাছের গোড়ার পরিধি ২০৯ সেন্টিমিটার ও কাণ্ডের ব্যাস ৬৭ সেন্টিমিটার।
চাংদু শহরে প্রাচীন ও ঐতিহাসিক বৃক্ষের তৃতীয় পর্যায়ের জরিপে প্রথম গাছটি আবিষ্কৃত হয়। পরে চীনের সাউথওয়েস্ট ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটির উড সায়েন্স রিসার্চ ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা এর বয়স নির্ধারণ করেন রিং অ্যানালাইসিস ও শারীরিক পরিমাপের মাধ্যমে।
এর আগে, বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো আঙুরলতা হিসেবে পরিচিত ছিল স্লোভেনিয়ার মারিবরে অবস্থিত দ্য ওল্ড ভাইন, যার বয়স ১৯৭২ সালের গবেষণায় ৩৫০ থেকে ৪০০ বছরের মধ্যে বলে ধরা হয়। তবে গাছটির কেন্দ্রীয় অংশ পচে যাওয়ায় সঠিক বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
চীনা কৃষি বিজ্ঞান একাডেমির ফলগাছ গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক ড. ওয়াং হাইবো বলেন, দুই হাজার চারশ মিটার উচ্চতায় চার শতাব্দীরও বেশি পুরনো এক বুনো আঙুরলতা পাওয়া প্রকৃতির ধৈর্য ও জীবনের স্থিতিস্থাপকতার এক অনন্য নিদর্শন। এটি শুধু একটি বিশ্বরেকর্ড নয়, এ যেন সময়ের জীবন্ত দলিল।
সাধারণত চাষ করা আঙুরগাছ খুব কমই ৫০ বছরের বেশি বাঁচে, আর শতবর্ষী গাছ পাওয়া বিরল। কিন্তু ঝোগাং কাউন্টিতেই এখনো টিকে আছে একশ বছরের বেশি বয়সী অন্তত ৬৪টি আঙুরলতা।
এ অঞ্চলের মদ প্রস্তুতির ঐতিহ্য এক হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। এমনকি, প্রাচীন সাহিত্য দ্য এপিক অব কিং গেসারেও এর উল্লেখ রয়েছে। ২০০৪ সালে ঝোগাংকে ‘চায়নার বুনো লাল আঙুরের জন্মভূমি’ ঘোষণা করা হয়। দুই দশক পর সেই নাম আবারও স্থান পেলো গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে।
বিজ্ঞানীদের মতে, আঙুরলতার বৃত্ত বা রিং শুধু সময়ের হিসাবই ধরে রাখে না, বরং জলবায়ু কখন ঠান্ডা, কখন উষ্ণ, কখন শুষ্ক, কখন স্যাঁতসেঁতে, তারও ইঙ্গিত দেয়। আঙুরলতার প্রতিটি রেখা যেন পাহাড়ি উপত্যকার নিঃশ্বাসের গল্প বলে।
আর হয়তো, এই কুয়াশাচ্ছন্ন উপত্যকার কোথাও, এখনো মাটির গভীরে ঘুমিয়ে আছে আরও প্রাচীন কোনো আঙুরলতা, যা একদিন নতুন করে জেগে উঠবে, সময়ের সাক্ষী হয়ে।
সূত্র: গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ডট কম
এসএএইচ

2 hours ago
4








English (US) ·