৪২তম সম্মেলন উপলক্ষে ১৩ দাবি ছাত্র ইউনিয়নের

4 months ago 49

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ৪২তম সম্মেলন আগামী ৬ থেকে ৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন উপলক্ষে ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার (৪ জুন) সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে ৪২তম সম্মেলন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র ইউনিয়ন। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা।

মাহির বলেন, আমাদের ছোটবেলা থেকেই শেখানো হচ্ছে, শিক্ষা মৌলিক অধিকার। কিন্তু এই মৌলিক অধিকারটুকু দেশের কতজন শিক্ষার্থী পাচ্ছে তা নিয়ে আমরা সন্দিহান। এছাড়াও শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বছর বছর স্কুল, কলেজের বেতন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাবলিক এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন নামে বেনামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করতে যে অর্থের প্রয়োজন হয় তা দেশের সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই চলে গেছে। তাহলে শিক্ষা নামক যেই বস্তুটি রয়েছে তা আসলে কাদের জন্য রয়েছে? তা আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মানসম্মত সর্বজনীন একই ধারার শিক্ষার বদলে এখন চলছে পাবলিক-প্রাইভেট, ইংরেজি-বাংলা-মাদরাসা, গ্রাম-শহর ইত্যাদি নানা ধারায় বিভক্ত বৈষম্যমূলক শিক্ষা।

তিনি বলেন, এক সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জহির রায়হান, শহীদুল্লাহ কায়সার, মুনীর চৌধুরীসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল চিন্তার লেখকদের রচনা আমাদের পাঠ্যবইয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের পর সব যেন পালটে গেলো। একটি সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী গোষ্ঠী দাবি করলো হিন্দু লেখকদের লেখা পাঠ্যবই থেকে বাদ দিতে হবে। সরকার সেই সাম্প্রদায়িক দাবিটি মেনে নিলো। পাঠ্যবই থেকে হিন্দু এবং প্রগতিশীল চিন্তাধারার লেখকদের লেখা বাদ পড়লো। এর বিরুদ্ধে আমরা আপসহীন আন্দোলন করেছি, আমরা বলেছি মৌলবাদী শক্তির প্রেসক্রিপশনে পাঠ্যবই পরিবর্তন করা যাবে না।

শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে মাহির শাহরিয়ার বলেন, শিক্ষাকে এখন ব্যবসায় পরিণত করেছে তথাকথিত সরকার। দেশে শিক্ষার অবকাঠামো দুর্বল হওয়ায় প্রতি বছর হাজারো শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে, কারণ দেশে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয় না, গবেষণার জন্য ভালো গবেষণাগার নেই। আমরা সবসময়ই বলে এসেছি, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে প্রতি বছর জিডিপির ৮ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দের দাবি বহুদিন থেকে জানিয়ে আসছি।

তিনি বলেন, সরকার বারবার বলছে তাদের টাকা নেই। অথচ আমরা দেখেছি গত ১০ বছরে কয়েক লক্ষাধিক কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে, ঋণখেলাপীদের পূর্বের ঋণ মওকুফ করে নতুন করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় বহু মেগাপ্রজেক্ট চলমান রয়েছে। অথচ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর মত টাকা নাকি সরকারের নেই!

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এদেশের জনতার মুক্তির দিশা হয়ে উঠতে হবে ছাত্র সমাজকে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন দীর্ঘদিন দিন ধরে শিক্ষা অধিকার আদায়, সাম্প্রদায়িকতা এবং সাম্রাজ্যবাদের অবসান জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ‘আমাদের শপথের প্রদীপ্ত স্বাক্ষরে নতুন সূর্যশিখা জ্বলবেই’ এই স্লোগানকে ধারণ করে ১৩ দফা দাবিকে সামনে রেখে আগামী ৬ থেকে ৮ জুন ছাত্র ইউনিয়নের ৪২ তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ৬০টি জেলা সংসদ সম্মেলনকে সফল করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে সংগঠনটির নেতারা ১৩টি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলোর হলো:
১. একই ধারার বিজ্ঞানভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতি চালু করতে হবে;
২. শিক্ষাখাতে জিডিপির ৮ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে;
৩. শিক্ষা উপকরণের মূল্য কমাতে হবে;
৪. উচ্চশিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণে ইউজিসির নতুন কৌশলপত্র বাতিল করতে হবে;
৫. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত কমিয়ে ৩০:১ করতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে;
৬. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির পথিকৃৎ এবং গবেষণামুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে;
৭. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে;
৮. শিক্ষা শেষে কাজের নিশ্চয়তা দিতে হবে;
৯ সরকারি চাকুরির পরীক্ষায় আবেদন ফি বাতিল করতে হবে;
১০. প্রয়োজনীয় সংখ্যক গুণ-মান সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগে দলীয় ও স্বজনপ্রীতি পরিহার করে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, যথাযথ কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্বারোপ করতে হবে;
১১. বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে;
১২. বাক-স্বাধীনতা হরণকারী সকল কালাকালুন বাতিল করতে হবে; এবং
১৩. বাজার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য কমাতে হবে।

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি দীপক শীল, সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা সহকারী সাধারণ সম্পাদক প্রিতম যাকির, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজোয়ান হক মুক্তসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচএ/এমআরএম/জেআইএম

Read Entire Article