রবিবার রাতে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ডেমি মুর। মিউজিক্যাল বা কমেডি ফিল্ম বিভাগে ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ সিনেমায় অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য পুরস্কারটি পান হলিউডের এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। এটাই এই তারকার ক্যারিয়ারে প্রথম গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জয়। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ ৪৫টি বছর অভিনয়ের সঙ্গে কাটানো এই অভিনেত্রীর জয় করা প্রথম কোনো মেজর পুরস্কারও এটি।
পুরস্কার গ্রহণের সময় সেই অনুভূতি জানাতে গিয়ে আবেগী মুর বলেন, ‘এটা আমি একেবারেই প্রত্যাশা করিনি। আমি এখন শকড, অবাক। আমি প্রায় ৪৫ বছর ধরে করছি। আজ প্রথমবারের মতো কোনো পুরস্কার পেলাম। আমি সত্যিই অত্যন্ত আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ।’
এসময় ৬২ বছর বয়সী মুর তার ক্যারিয়ারের শুরুতে একজন প্রযোজকের সাথে এক সাক্ষাৎকারের কথা স্মরণ করেন। সেখানে তাকে ‘পপকর্ন অভিনেত্রী’ বলা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘তখন আমি এটা নিজের মধ্যে নেগেটিভভাবে গ্রহণ করেছিলাম এবং বিশ্বাস করেছিলাম যে আমি কখনো বড় কিছু অর্জন করতে পারব না। সেই বিশ্বাস আমার মধ্যে আস্তে আস্তে ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। এমনকি কয়েক বছর আগে আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম হয়তো আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে। হয়তো আমি যা করার তা করে ফেলেছি। নতুন আর কিছুই করার নেই। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।’
‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ সিনেমার কথা উল্লেখ করে মুর জানান, একটি কঠিন পরিস্থিতির সময় এই সিনেমার কাজটি হাতে আসে তার। তিনি কনফিউশনে ছিলেন সিনেমাটি করার ব্যাপারে। অভিনেত্রীর ভাষ্য,‘তখন আমার সামনে এক অদ্ভুত, সাহসী, উল্টোধরণের, একদম অদ্ভুত স্ক্রিপ্ট এলো। তারই নাম ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’। গল্পটি পড়ে শেষ করে আমি বুঝতে পারলাম, আমি এখনো ফুরিয়ে যাইনি সেটা প্রমাণের সুযোগ এসেছে। ছবিটির পরিচালকসহ টিমকে আমার কৃতজ্ঞতা।’
‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ সিনেমাটি একটি নারীবাদী গল্পের কাহিনি নিয়ে নির্মিত। এটি ফ্রান্সের কোরালি ফার্গাট পরিচালনা করেছেন।
পুরস্কার গ্রহণের সময় মুর আরও বলেন, ‘এই সিনেমার মাধ্যমে আমি একটি বিষয় শেয়ার করতে চাই। সেটি হলো যখন আমরা মনে করি আমরা যথেষ্ট স্মার্ট, সুন্দর, পাতলা, সফল নই বা মোটকথা যতটা যথেষ্ট হওয়া প্রয়োজন তা নই তখন জেনে রাখা উচিত যে আমরা কেউই যথেষ্ট নই। এক নারী আমাকে কথাটি বলেছিলেন যে, ‘তুমি কখনোই যথেষ্ট বা নিখুঁত হতে যেও না। কারণ কেউ এটা হতে পারে না। তুমি যদি এই নিখুঁত হওয়ার মাপকাঠিটা ভেঙে দিতে পারো তবে তুমি নিজের মূল্য বুঝতে পারবে।’
মুরের বক্তব্য শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই। তারা করতালি দিয়ে ডেমি মুরকে অভিনন্দন জানান। তার পরিবার ও বন্ধুরাও এই জয়কে দারুণভাবে উদযাপন করছে। ইনস্টাগ্রামে তাদের উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়াও শেয়ার করেছেন তারা। সেখানে ক্যাপশন ছিল, ‘সে এটা করতে পেরেছে!’
সবকিছু মিলিয়ে এবারের গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডসের আসরটি ছিল ডেমি মুরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যেখানে তিনি শুধু তার অভিনয় দক্ষতা নয় বরং তার আত্মবিশ্বাস ও জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন। সেইসঙ্গে যারা স্বীকৃতি বা সাফল্য পান না বলে হতাশ হয়ে যান তাদের জন্য এই মুহূর্তটি এবং ডেমি মুর দারুণ প্রেরণার হয়ে উঠতে পারে।
এলআইএ/জিকেএস