জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, শহীদ পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু, গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়া এবং রিকশাচালকদের ওপর সংঘটিত হয়রানি বন্ধের দাবিতে ‘পদযাত্রা ও সমাবেশ’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী। বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায় অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
আগামী ২৭ নভেম্বর দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত ৫ দফা দাবিতে ‘পদযাত্রা ও সমাবেশ’ কর্মসূচি পালন করবে জোটটি।
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত কর্মসূচির পেছনে ছয় দফা দাবির কথা জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে গণহত্যায় জড়িতদের বিচার, শহীদ পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা, আহতদের সুচিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পাঁয়তারা বন্ধ ও অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য আর্মি রেটে রেশন, সিন্ডিকেট এবং বড় বড় ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু করতে হবে; শ্রমিক আন্দোলনে পুলিশি হামলা বন্ধ, গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ এবং গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে; পুনর্বাসন ছাড়া রিকশা শ্রমিকদের হয়রানি করা বন্ধ করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে সালমান সিদ্দিকী বলেন, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের সংগঠিত করেছে, ধারাবাহিক আন্দোলন পরিচালনা করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্র জোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের সামনের দিনের লড়াই- ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশ এবং শিক্ষাব্যবস্থা নির্মাণ করা। এই লড়াইকে এগিয়ে নিতে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের উদ্যোগে ৫ দফা দাবিতে আগামী ২৭ নভেম্বর দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত ‘পদযাত্রা ও সমাবেশ’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সব ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান- এই ‘পদযাত্রা ও সমাবেশে’ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের সংগ্রামকে এগিয়ে নিন।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে নিহিত ছিল স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা উচ্ছেদ করে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা। ফলে আন্দোলন পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম দায়িত্ব ছিল দ্রুত সময়ে হতাহতের সুনির্দিষ্ট তালিকা তৈরি করে তাদের স্বজনদের পাশে দাঁড়ানো, শহীদ পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করা এবং আহত আন্দোলনকারীদের সুচিকিৎসাসহ পুনর্বাসনের দায়িত্ব পালন করা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে, এ বিষয়ে সরকারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ আমরা দেখিনি। এই আন্দোলনের যৌক্তিক এবং নৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে হলে গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রায় সাড়ে ৩ মাস অতিক্রান্ত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা চোখে পড়ছে না। এ গণহত্যার বিচার আদৌ হবে কি না তা নিয়ে জনমনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সালমান সিদ্দিকী আরও বলেন, গত কয়েক মাসে ভয়াবহভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঘটেছে। বড় বড় ব্যবসায়ী এবং সিন্ডিকেট গ্রুপগুলো এখনো আগের মতোই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এ অবস্থায় শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত মানুষ চূড়ান্ত দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। আমরা চেয়েছিলাম, অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পূর্বের তুলনায় অধিক নিশ্চিত হবে। অথচ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অগণতান্ত্রিকভাবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে মত প্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে। এসব সিদ্ধান্ত বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে দিশাহীন করা এবং গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কী? দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের দখলদারিত্ব এবং প্রশাসনিক স্বৈরতন্ত্র জেঁকে বসেছিল। ফলে শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশ নানাভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান- ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পাঁয়তারা বন্ধ করে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করুন!
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি মিতু সরকার, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) তাওফিকা প্রিয়া প্রমুখ।