৫০ কেজি পাটের আঁশে তৈরি দুর্গা প্রতিমা

13 hours ago 4

পাট দিয়েই এবার তৈরি হয়েছে দুর্গা প্রতিমা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিমাটি দেখতে। পূজা শুরু হতে এখনো দুই সপ্তাহ বাকি, কিন্তু দর্শনার্থীদের কৌতূহল ব্যতিক্রমী এই প্রতিমায়। দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুর আর মহিষাসুরসহ সবকটি প্রতিমা মোড়ানো হয়েছে পাটের আঁশে। এমন চিত্র সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর সদরের উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়ার পূজামণ্ডপে।

সরেজমিন দেখা গিয়ে দেখা যায়, মোট ১২টি প্রতিমা সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি প্রতিমার গায়ে সোনালি ঝলক, আলোয় যেন ঝলমল করছে পুরো মণ্ডপ। পাটের আঁশ ছোট ছোট টুকরা করে চিরুনি দিয়ে মসৃণ করা হয়েছে। এরপর মাটির প্রতিমার গায়ে একে একে বসানো হয়েছে আঁশ। রং ব্যবহার প্রায় হয়নি বললেই চলে, পাটের প্রাকৃতিক আভাই দিয়েছে সোনালি ঝলক।

প্রতিমাশিল্পীরা ও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২১ জুলাই থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়। ২১ দিনের শ্রমে তৈরি হয় প্রতিমাগুলো। কাঠ, বাঁশ, মাটি ও পাট দিয়ে কাঠামো তৈরি করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বসানো হয়েছে আঁশের টুকরা। শুধু আঁশ বসাতেই সময় লেগেছে পাঁচ দিন। মাঝে কিছু অংশে হালকা সোনালি রং ছিটানো হয়েছে ঝলক বাড়াতে।

তারা দাবি করেন, বাংলাদেশে সোনালি আঁশ দিয়ে প্রতিমা তৈরি এটাই প্রথম। এর আগে ২০২৩ সালে একই মণ্ডপে চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে প্রতিমা তৈরি হয়েছিল, যা সাড়া ফেলেছিল সারা জেলায়।

পালপাড়া পূজা উদ্‌যাপন কমিটির বাসুদেব পাল বলেন, ‘১৯৯৫ সাল থেকে এখানে পূজা হয়ে আসছে। কয়েক বছর ধরে ভিন্ন আঙ্গিক আনার চেষ্টা করছি। ভক্ত-দর্শনার্থীরা যেন আনন্দ পান, সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য।’ 

তিনি জানান, এ বছর প্রতিমা তৈরিতে ৫০ কেজি পাটের আঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। পূজার পাঁচ দিনসহ খরচ হবে আনুমানিক তিন লক্ষ টাকা। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রবাসীরা এই ব্যয় বহন করছেন। সরকারি সহায়তায় এক টন চাল পাওয়া গেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, পাট দিয়ে প্রতিমা এত সুন্দর হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সোনালি ঝলকে চোখ জুড়িয়ে যায়। তবে খরচটা একটু বেশি হয়েছে।

জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায় এ বছর সর্বমোট পূজামণ্ডপের সংখ্যা ৫৮৮টি। এর মধ্যে শ্যামনগরে ৭০টি, কালীগঞ্জে  ৪৯টি, দেবহাটায় ২১টি, আশাশুনিতে ১০৩টি, সাতক্ষীরা সদরে ১০৬টি, কলারোয়ায় ৪৪টি, পাটকেঘাটায় ৮২টি ও তালায় ১১৩টি পূজামণ্ডপ রয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। তার আগে মণ্ডপজুড়ে চলছে আলো ঝলমলে সাজসজ্জা। আর সবার নজর এখন সেই সোনালি আঁশে গড়া দেবীমূর্তিতে, যা এই পূজার মৌসুমে সাতক্ষীরার দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করবে।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি অপপ্রচার, গুজব বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড চালায় কিংবা পূজামণ্ডপে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সহযোগিতায় শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা সতর্ক রয়েছে।
 

Read Entire Article