৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুদকে

3 months ago 42

সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫ শয্যা বিশিষ্ট নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু করতে ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিল করোনা মহামারিতে প্রাণ হারানো মেধাবী শিক্ষার্থী সাবরিনা কামাল তন্বীর পরিবার। তবে অনুদানের ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করলেও হাসপাতালে এখনো চালু হয়নি কোনো আইসিইউ।

ওই অনুদানের পুরো টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর আলাদা দুটি অভিযোগ দিয়েছেন তন্বীর মা ও ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাসরিন বেগম।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে এসব চিঠি দেন অধ্যাপক নাসরিন বেগম।

অভিযোগে অধ্যাপক নাসরিন বেগম বলেন, আমার বড় কন্যা সাবরিনা কামাল তন্বী উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ মে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। যে টাকা দিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করাতাম সেই টাকায় গরিব মানুষের চিকিৎসা হলে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে, সেই ভাবনা থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করি। তারা বলেন, সাভার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ নাই। সেখানে আইসিইউ প্রতিষ্ঠা করবেন।

অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মানবতার ফেরিওয়ালা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাতে ২টি চেকের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা আইসিইউ অনুদান হিসেবে প্রদান করি। অর্থ হস্তান্তর সভায় প্রধান আলোচক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও অর্থদাতা হিসেবে আমি বক্তব্য রাখি।

আরও পড়ুন

লিখিত অভিযোগে অধ্যাপক নাসরিন বেগম বলেন, আমি টাকা প্রদানের পর থেকে বহুবার আইসিইউ স্থাপন ও কাজের অগ্রগতির বিষয়ে ফোন করে জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার ও গণস্বস্থ্য কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান ডা. মনজুর কাদির আহমেদ সময়ক্ষেপণ ও তালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে আমি ৬ মাস পর, আগস্ট মাসে, ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কাজের ধীরগতির কারণ জানতে চাই। এক মাসের মধ্যে আইসিইউ স্থাপন ও উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণের জন্য মুহিব উল্লাহ খোন্দকারকে তিনি তাৎক্ষণিক কড়া নির্দেশ দেন। আমি গণস্বাস্থ্য ধানমন্ডি অফিস থেকে চলে আসার ৫ মিনিট পর ডা. মনজুর কাদির ফোনে আমাকে রূঢ় ভাষায় জিজ্ঞেস করেন, আমি কেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে আইসিইউ নিয়ে বিচার দিলাম? উত্তরে আমি বলি আপনি জাফরুল্লাহ ভাইকে জিজ্ঞেস করেন। তার ২ মাস পর ‘সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র’ উদ্বোধন হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। এ বিষয়ে অধ্যাপক নাসরিন বেগম অভিযোগ করেন, ডা. জাফরুল্লাহ কেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেই এমন প্রশ্নের জবাবে আমাকে ডা. মুহিব উল্লাহ বলেন, জাফর ভাই অসুস্থ তাই আসেন নাই। অথচ সেদিন রাতে টেলিভিশন ও পত্রিকার নিউজে দেখতে পেলাম সে সময়ে তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখছেন। আমি মনে করি, আইসিইউর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে অনুপস্থিত রাখার অন্যতম কারণ দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেওয়া।

অভিযোগে অধাপক নাসরিন বেগম বলেন, এই কেন্দ্রটি স্থাপনে অতিরিক্ত যে অর্থ প্রয়োজন হবে তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রদান করবে বলে চুক্তিনামায় ছিল। অথচ তারা সেই অর্থ তো দেয়নি, উল্টো সাভারে থাকা ডায়ালাইসিসের বেড ও ঢাকা নগর হাসপাতাল আইসিইউ থেকে ৩টি কার্ডিয়াক মনিটর এনে এবং ডায়ালাইসিসের রোগীদের আইসিইউ সিটে রেখে কোনো রকমে উদ্বোধন নাটক করেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিভিন্ন অনীয়মের উদাহরণ দিতে গিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রিন্ট ও অনলাইনে বিশাল দুর্নীতির নিউজ প্রকাশিত হয়। এখানেও ডা. মনজুর কাদির ও ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকারের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির খবর প্রকাশ হয়।

লিখিত অভিযোগে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন যুক্ত করে দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার জাগো নিউজকে বলেন, এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ।

আরেক চিচিৎসক ডা. মনজুর কাদির আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমি এ প্রকল্পের সমন্বয় করেছিলাম। টাকা জমা হয়েছিল ট্রাস্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। জাফরুল্লাহ চৌধুরী যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সেভাবে কাজ করে আইসিইউ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে সাভারে কাজ করে আসছি। তবে গত দুই বছর ধরে সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আমাকে ঢুকতেই দেয় না। আমি আসার পর তারা আইসিইউ রক্ষণাবেক্ষণও করেনি। সব কিছু তো আছে। চাইলে তারা আইসিইউ সচল করতে পারে।

তিনি আরও জানান, প্রতিষ্ঠানে দুটি দল হয়ে গেছে। একদল আমাদের হেয় করার জন্য এসব কাজ করছে। কেউ কেউ আমার সম্পদের কথা বলে। এসে দেখুক, আমার কাছে কী আছে। আত্মসাৎ করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি যদি টাকাই আত্মসাৎ করতাম তাহলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ব্যবস্থা নিতো। কিন্তু আমি এখনো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রর অন্য বিভাগে কাজ করছি। কিন্তু তাহলে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না?

এএএম/এমএইচআর/এএসএম

Read Entire Article