৫২ কেজিতে আমের মণ, জিম্মি চাষিরা

4 months ago 29

চাঁপাইনবাবগঞ্জকে বলা হয় আমের রাজধানী। আর এ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম আম বাজার কানসাট। তবে এই আম বাজারে আড়তদারদের কাছে জিম্মি সাধারণ চাষিরা। শুধু এই বাজারেই নয়, জেলায় রহনপুর-ভোলাহাটেও এক মণে অন্তত ১৫-২০ কেজি আম বেশি নিচ্ছেন তারা। এতে বিপাকে পড়েছেন আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। গত তিন বছর ধরে চলা এই অনিয়ম যেন দেখার কেউ নেই।

সরেজমিনে শনিবার (২২ জুন) দিনব্যাপী কানসাট আম বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। আম চাষিদের অনেকটা জিম্মি করেই ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে একমণ ধরে আম কিনছেন আড়তদাররা। বাড়তি ওজনে আম বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করলে চাষিদের সঙ্গে বাজে আচরণেরও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি শুধু ৫২ কেজিতে নয়, মণে আরও ১টি থেকে দুইটি আম নেওয়া হয়। এতে এক মনে অন্তত ১২-১৫ কেজির বেশি নিচ্ছেন আড়তদাররা।

এদিকে জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর আম বাজার ও ভোলাহাট আম বাজারে এক মণে নেওয়া হচ্ছে প্রায় ৬০ কেজি আম। এক কথায় একমণে ১৫-২০ কেজি আম বেশি নিচ্ছেন তারা।

৫২ কেজিতে আমের মণ, জিম্মি চাষিরা

কানসাট বাজারে খিরসাপাত আম বিক্রি করতে এসেছিলেন আব্বাস বাজার এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি বলেন, গত চার বছর আগে আমরা ৪২-৪৩ কেজিতে মণ ধরে আম বিক্রি করেছি। কিন্তু ২০২২ সালে ৪৮ কেজিতে মণ ধরে আম ক্রয় করেন আড়তদাররা। সেই থেকে বছর বছর বাড়ছে ওজনের পরিধি। চলতি বছরে ৫২ থেকে ৫৫ কেজিতে মণ ধরে আম ক্রয় করছেন তারা। আমরা এখন বিপাকে। কোথায় যাবো, কার কাছে বলবো এই অনিয়মের কথা।

মুসলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান বলেন, এ বছর অন্য বছরের থেকে গাছে আম অনেক কম এসেছে। আর এদিকে আম বিক্রি করতে এসে শুনছি ৫২ কেজিতে একমণ ধরা হবে। এতে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। গত বছরও আমাদের জিম্মি করে ৫০ কেজিতে মণ নিয়েছেন আড়তদাররা। আর এবার ফের ৫২ কেজিতে মণ নিচ্ছেন। অনেক সময় টালবাহানা করে অন্তত ৫৫ কেজিতে আমের মণ নিচ্ছেন আড়তদাররা।

শ্যামপুর চৌধুরি পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আসমাউল হাসান বলেন, এবার ৭০ শতাংশ বাগানেই আম নেই। বাগানে গিয়ে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর বাজারে এসে শুনছি মণে ১২-১৫ কেজি আম বেশি দিতে হবে। এখন আপনি বলেন, আমরা কোথায় আম বিক্রি করবো।

এ বিষয়ে কানসাট আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, শুধু কানসাট নয়, রাজশাহী, নওগাঁ, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট সব স্থানেই এই বিষয়টি নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। আমরা চাই রাজশাহী বিভাগের সব আম বাজারে এক ওজন নির্ধারণ করা হোক। এটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। আমারা বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন আগেও বৈঠকে বসেছিলাম। কিন্তু রহনপুর ও ভোলাহাট আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি।

৫২ কেজিতে আমের মণ, জিম্মি চাষিরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব বলেন, আমরা কষ্ট করে আম উৎপাদন করি। কিন্তু আড়তদাররা মণে ১২-১৫ আম বেশি নিয়ে নিচ্ছে। ৫০-৫৫ কেজিতে মণ ধরে আম কিনছেন তারা। এ অনিয়ম কয়েকবছর আগে থেকেই হয়ে আসছে। আমরা এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে মুক্তি চাই।

তিনি আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও রাজশাহীতেও আমের ওজন নিয়ে ঝামেলা হয়। তাই আমরা চাই সব আম বাজারে ওজনের মাপ যেন একই হয়। আমরা কৃষিমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু কোনো ব্যবস্থা হয়নি।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, জেলায় মোট তিনটি আম বাজার, একেক বাজারে একেক ওজন চলে। তাই আমরা তিনটি আম বাজার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছিলাম কিন্তু সমাধান করতে পারিনি। এখন কানসাটে ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম ক্রয় করছেন আড়তদাররা।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মো. উজ্জল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কানসাট আমবাজারে ওজন নিয়ে ঝামেলার বিষয়টি শুনেছি। ঈদের পর আর খোঁজ নেওয়া হয়নি। আর কোনো আম চাষি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি। তারপরও আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।

এবার জেলায় ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। যা গত বছর ছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যামাত্রা বাড়লেও আমের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ চাষিরা বলছেন গত বছরের তুলনায় ৭০ শতাংশ গাছেই এবার আম হয়নি।

সোহান মাহমুদ/এফএ/এমএস

Read Entire Article