‘৬ গুলি খেয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই সহজ’

4 days ago 5

ছয়টি গুলি খেয়ে, বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াটাই হয়তো সহজ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন নেপালের সাম্প্রতিক জেন জি আন্দোলনে আহত যুবক বিজয় অধিকারী। শুধু ডান পায়েই ছয়টি গুলি লেগেছে তার। বর্তমানে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টার চিকিৎসাধীন।

তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট বিজয়। সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে জাপান যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ৮ সেপ্টেম্বরের জেন-জি আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে তার জীবন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। প্রথম দিনের বিক্ষোভেই তার ডান পায়ে গুলি লাগে।

ক্ষোভ নয়, বিবেকের টানে যোগ দিয়েছিলেন আন্দোলনে

আগের দুর্ঘটনায় একই পা ভেঙেছিল, এবার আবার গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তার। তারপরও প্রতিবাদী কণ্ঠ দমে যায়নি তার। বিজয় বলেন, প্রতিশোধের জন্য নয়, দুর্নীতি আর চাকরির অভাবের হতাশা থেকে রাস্তায় নেমেছিলাম। আমরা যদি কথা না বলি, তবে কে বলবে? অন্যদের দুঃখ দেখে চুপ থাকা সম্ভব ছিল না।

প্রথম দিকে গণমাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে মূর্ছা যান তার মা। পরে বন্ধুরা তার পরিবারকে জানায়, তিনি বেঁচে আছেন ও চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে মায়ের জ্ঞান ফেরে বটে, কিন্তু বুকের হাহাকার আরও বেড়ে যায়।

পরিবারে শোক, হাসপাতালে লড়াই

আগের চিকিৎসার জন্য ঋণ করেছিল বিজয়ের পরিবার, যা এখনো পূরণ করা হয়নি। এখন নতুন করে দীর্ঘ পুনর্বাসনের পথ সামনে। ট্রমা সেন্টার তাকে ওষুধসহ সব চিকিৎসা বিনামূল্যে দিচ্ছে। তবে বিজয় অভিযোগ করেন, সব আহতই সমান সহায়তা পাচ্ছেন না। যারা সরাসরি জেন-জি আন্দোলনের অংশ হিসেবে চিহ্নিত, তারা পূর্ণ সহায়তা পেলেও, অন্যরা আংশিক সহায়তা পাচ্ছেন।

অশান্ত পরিস্থিতির কারণে টানা তিন দিনের কারফিউ থাকায় বাবা-মা কাঠমান্ডুতে আসতে পারেননি। এখন তারা রাজধানীতে আসার পরিকল্পনা করছেন। এতদিন মামা ও বন্ধুরাই হাসপাতালে তার দেখাশোনা করছেন।

প্রতিবাদ থেকে প্রত্যাশা

গভীর যন্ত্রণা নিয়েও বিজয় মনে করেন, সরকার পতন আন্দোলনের বড় সাফল্য। বলেন, নতুন সরকার যদি আমলাতন্ত্রের দুর্নীতি রুখতে পারে, তবে দেশ বাঁচবে। আসলে নেতারা নয়, কর্মকর্তারাই সব নষ্ট করছেন। আমলারা না বদলালে কোনো আন্দোলন দুর্নীতি দূর করতে পারবে না।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, জেন-জি আন্দোলনের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নেই। আমরা প্রতিশোধ নিতে নামিনি। জেন-জি নামটি পরে অনুপ্রবেশকারীরা ব্যবহার করেছেন। সংসদ ভবন পর্যন্ত আমরা পৌঁছেছিলাম, কিন্তু অগ্নিসংযোগ আমরা করিনি। আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ কেউ গাছ পাহারা দিয়েছে, কেউ আবর্জনা সরিয়েছে, কেউ আবার পানি বিলিয়েছে।

বিজয় বলেন, হঠাৎ করেই পুলিশ টিয়ারগ্যাস ছোড়ে এবং পরে গুলি চালায়। কেন নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি? অনেকেই তখন স্কুলের পোশাক পরা ছাত্র ছিল, হাতে বই-খাতা।

তিনি আন্দোলনে সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্ত ও কঠোর শাস্তির দাবি জানান। যদি দায়ীদের রক্ষা করা হয়, তবে আমরা আবার রাস্তায় নামব। গোপন রাখার চেষ্টা মেনে নেব না।

শেষে তিনি সতর্ক করেন, নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে, আন্দোলন আবার হবে ও আরও তীব্র হবে। আমরা চাই- নির্ভীক ও স্বচ্ছ তদন্ত, আর যারা গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে, তাদের শাস্তি হোক।

সূত্র: খবরহাব

এসএএইচ

Read Entire Article