বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় এতদিন বিভাগটি কৃষি অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদে স্থানান্তরিত হয়েছে বিভাগটি।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল হাসান ভূঞা।
অধ্যাপক বলেন, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগটি প্রকৌশল অনুষদের অন্তর্ভুক্ত। শুধুমাত্র বাকৃবিতে এ বিভাগটি ১৯৬৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ ৬১ বছর কৃষি অনুষদের আওতাভুক্ত ছিল। দীর্ঘ এ সময় প্রশাসনিক জটিলতায় কৃষি অনুষদ থেকে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগকে অবমুক্ত করা সম্ভব না হলেও বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রচেষ্টায় অবশেষে বিভাগটি কৃষি প্রকৌশল অনুষদে স্থানান্তরিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পূর্বে কৃষি অনুষদে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ হতে কোর্স কারিকুলাম আহ্বান করা হতো। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স পরিবর্তনের কারণে ১৯৬৯ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পাশ করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার কারণে বিভাগটি কৃষি অনুষদে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। তবে শুধুমাত্র কৃষি প্রকৌশল অনুষদে আবশ্যিক হিসেবে এ বিভাগের কোর্সসমূহ পড়ানো হয়েছে।
আরও জানা যায়, ২০০২ সালের এপ্রিলে বাকৃবির অবকাঠামো পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্যে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠিত হয়। ওই কমিটি পাঁচটি সুপারিশ করে এবং এরমধ্যে ৩ নম্বর সুপারিশটি ছিল পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগকে কৃষি অনুষদের আওতামুক্ত করে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদে স্থানান্তরিত করার বিষয়ে। তবে বাকি চারটি সুপারিশ বাস্তবায়িত হলেও ৩ নম্বর সুপারিশটি আলোর মুখ দেখে নি।
পরে ২০২৪ সালের মার্চে কৃষি অনুষদের ১৮০ তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কৃষি অনুষদ হতে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগকে অবমুক্ত করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জয়নাল আবেদীন অনুষদীয় কমিটির ২০৯তম সভায় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগকে প্রকৌশল অনুষদে গ্রহণ করতে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন। ডিনের এ আবেদনটি ২০২৪ সালের মে মাসে শিক্ষা পরিষদের সভায় অন্তর্ভুক্ত হলেও পরিসমর্থনের জটিলতায় স্থানান্তর সংক্রান্ত বিষয়টি উপস্থাপিত হয় নি। তবে ২১০তম সভায় বিষয়টি পরিসমর্থিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্যের আদেশক্রমে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ দীর্ঘ ৬১ বছর পর কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদে স্থানান্তরিত হয়।
অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল হাসান ভূঞা ২০১০ সালের জুন মাস থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রথম দফায় এবং ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে বর্তমান পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় বিভাগটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, ৫ম শিল্প বিপ্লব মূলত প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের নতুন যুগের সূচনা করেছেন যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, বিগ ডেটা এবং অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে উৎপাদন ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটানো হচ্ছে। কৃষিতে এ বিপ্লবের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে পদার্থ বিজ্ঞানের নানা তত্ত্ব ও প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, খামার ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ ও বিজ্ঞানসম্মত করতে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহার করতে সহায়তা করছে। ৫ম শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি কৃষিতে পদার্থবিজ্ঞানের কার্যকরী ভূমিকার মাধ্যমে কৃষকের জন্য কাজকে সহজ, নিরাপদ এবং লাভজনক করে তুলছে।
আসিফ ইকবাল/আরএইচ/এএসএম