৭ বছর ধরে অনুমোদনেই আটকে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ প্রকল্প

1 day ago 6

ভারতীয় এলওসি বাতিল হওয়ায় বিকল্প অর্থায়ন খুঁজছে সরকার
ডুয়েলগেজ নয়, হবে ডাবল লাইন
জমি অধিগ্রহণে ১৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ
রুটটি হবে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ‘আর্থসামাজিক করিডর’

সিরাজগঞ্জ ও বগুড়াবাসীর ‘স্বপ্নের প্রকল্প’ সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদিত হয়। কিন্তু অনুমোদনের দীর্ঘ ৭ বছরে প্রকল্পের অগ্রগতি ১ শতাংশেরও (ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি) কম।

শুরুতে ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তা এরইমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে বিকল্প অর্থায়ন খুঁজছে সরকার।

রেলওয়ে পরিকল্পনা দপ্তর বলছে, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ নির্মাণ খুবই জরুরি। এ রুট হবে রেলের দ্রুত সেবা ও সাশ্রয়ের প্রতীক। এলওসির অর্থায়নে এ প্রকল্পটি হওয়ার কথা ছিল। এখন আমরা বিকল্প অর্থায়ন খুঁজছি। চাহিদা অনুযায়ী এ প্রকল্পটি ডাবল লাইন নির্মাণও জরুরি। আমরা নিরাশ হচ্ছি না। অর্থায়ন প্রাপ্তি এবং সব বিষয় বিবেচনায় আমরা সর্বোচ্চটাই করবো। ডাবল লাইন নির্মাণ হলে পর্যাপ্ত ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সেবা ও সময় সাশ্রয় হবে। এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রকল্পটির জন্য বিকল্প অর্থায়নের খোঁজে তৎপর হলেও এখন পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন কিংবা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেনি। ডাবল লাইনের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের দূরত্ব কমবে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। সময় বাঁচবে প্রায় চার ঘণ্টা। নতুন এ লাইন হলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে মাত্র ৫ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব। আর ডাবল লাইন নির্মাণ হলে এ পথে অর্ধশতাধিক ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। সরাসরি উপকৃত হবে উত্তরবঙ্গের ৮ জেলার মানুষ, কৃষি ও অর্থনীতি।

চলতি বছরের জুনে এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ১৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ডাবল লাইন অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রকল্প ডাবল লাইন করা হোক। ডুয়েলগেজ নয়। ডাবল লাইন হলে বর্তমান প্রাক্কলিত ব্যয়ের (৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা) চেয়ে ২৫ শতাংশেরও কম ব্যয় হবে। ডাবল লাইন হলে ওই পথে প্রায় অর্ধশত ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হবে। এটি হবে রেলের সবচেয়ে লাভজনক রুট।

আরও পড়ুন-

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে পরিকল্পনা দপ্তরের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, শুরুতেই প্রকল্পটি ডাবল লাইনে নির্মাণ করার জোর দাবি জানিয়ে আসছিল রেল এবং উত্তরবঙ্গের মানুষ। কিন্তু ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী, রেলপথমন্ত্রী ও সচিবদের চাপে ডুয়েলগেজ লাইন প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) অর্থায়নে চলা ওই প্রকল্প শুরুতেই ধাক্কা খায়। প্রকল্পটি ৪ বছরে সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও একের পর এক মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর কারণে ৭ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। মূল অনুমোদিত প্রাক্কলনের মধ্যে এলওসির ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৭৯ মিলিয়ন ডলার, যা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। অতিরিক্ত ঋণের বিষয়ে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলেও ভারত কোনো সঠিক উত্তর দেয়নি।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এলওসির অর্থায়নে এ প্রকল্প আর হচ্ছে না। এটা বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে বিকল্প অর্থায়ন খোঁজা হচ্ছে।

সর্বশেষ পিডিপিপির ওপর প্রকল্প যাচাই কমিটির সভা ও সিদ্ধান্ত সূত্রে জানা যায়, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ প্রকল্পে প্রায় ৬ বছর টাকা দেয়নি ভারত। রেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত এ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ বিবেচনায় অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন করে বিকল্প অর্থায়নে এগিয়ে আসছে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি)। আরও কয়েকটি দেশ ঋণ প্রদানে এগিয়ে আসছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বর্তমান প্রকল্প অনুযায়ী মেইন লাইন ৯৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং লুপস অ্যান্ড ইয়ার্ড হবে ৩৭ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার রেলপথ। ২টি মেজর ব্রিজ-করতোয়া ও ইছামতী নদীর ওপর নির্মিত হবে। এছাড়া মাইনর ব্রিজ ২৫টি, বক্স কালভার্ট ৯১টি, রোড ওভারপাস ১টি, রেল ফ্লাইওভার ১টি এবং রোড আন্ডারপাস হবে ১টি।

নতুন করে ৮টি স্টেশন নির্মাণ হবে। স্টেশনগুলো হলো- সিরাজগঞ্জ জংশন, কৃষ্ণদিয়া, রায়গঞ্জ, চান্দাইকোনা, ছোনকা, শেরপুর, আরিয়া বাজার ও রানীরহাট। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরির লেভেল ক্রসিং গেট নির্মাণ হবে ১০৬টি। ১১টি স্টেশনে কম্পিউটার বেজড সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপিত হবে।

রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ রেলপথটি নির্মাণ হলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষ কম ভাড়া ও সময়ের মধ্যে রাজধানীতে আসা-যাওয়া করতে পারবে। রুটটি ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ‘আর্থসামাজিক করিডর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে ডাবল লাইন যমুনা রেলসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজী জাগো নিউজকে বলেন, এটি রেলের জন্য বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প। আমরা ডাবল লাইন অনুযায়ী জায়গা অধিগ্রহণ করছি। অধিগ্রহণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। অর্থায়ন নিশ্চিত হলেই টেন্ডার প্রক্রিয়ার দিকে যাব।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) নাজমুল ইসলাম বলেন, রেলে আয় বাড়াতে হলে অবশ্যই ডাবল লাইন নির্মাণ করতে হবে৷ এটার কোনো বিকল্প নেই। কারণ ডাবল লাইন মানেই চলমান ট্রেনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণের বেশি ট্রেন পরিচালনা করা।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ফরিদ উদ্দিন বলেন, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ বাস্তবায়নে আমরা সর্বোচ্চ কাজ করছি। আশা করছি, বিকল্প অর্থায়নের মাধ্যমে এ প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবো। আর এটি বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে গোটা উত্তরবঙ্গের চিত্র।

এফএ/এমএস

Read Entire Article