৮ দফা দাবিতে ট্রেন আটকে দিল আন্দোলনকারীরা

1 hour ago 3
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সিলেটের ট্রেন যাত্রীদের চলমান আট দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন প্রায় আধা ঘণ্টা আটকে রাখেন বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা।  শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ ধর্মঘট কর্মসূচি পালিত হয়। ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলন কুলাউড়ার ব্যানারে জংশন স্টেশন প্ল্যাটফর্মে ধর্মঘট কর্মসূচিতে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক শতাধিক মানুষ অংশ নেন।  ট্রেন আটকের খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও রেলওয়ে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। এক পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিনের মাধ্যমে রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মোবাইল ফোনে কথা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন, কুলাউড়া থানার ওসি মো. ওমর ফারুক, রেলওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন, স্টেশন মাস্টার রোমান আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  এ সময় ৮ দফা দাবির বিষয়টি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফকে অবহিত করেন সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাছ খান, আন্দোলনের সমন্বয়ক আতিকুর রহমান আখই। মোবাইল ফোনে আলোচনার এক পর্যায়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন রেলের ওই কর্মকর্তা। তখন জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন আন্দোলনকারীরা। পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।  কর্মসূচিতে বক্তারা অবিলম্বে আট দফা দাবি তুলে ধরে তা মেনে নিতে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান। দাবিগুলো হচ্ছে, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি নতুন ট্রেন চালু, সিলেট-আখাউড়া সেকশনের রেলপথ সংস্কার করে ডুয়েলগেজে উন্নীত করা, সিলেট-আখাউড়া লোকাল ট্রেন চালু, সিলেট অঞ্চলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলস্টেশনগুলো চালু, কুলাউড়া স্টেশনে টিকিট বরাদ্দ বাড়ানো ও কালোবাজারি বন্ধসহ সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর কালনী ও পারাবত এক্সপ্রেসের আজমপুর স্টেশন-পরবর্তী যাত্রা বিরতি বন্ধ এবং সব ট্রেনে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন ও যাত্রী অনুপাতে অতিরিক্ত বগি সংযোজন। ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলনের সমন্বয়ক ও প্রেস ক্লাব কুলাউড়ার সভাপতি আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সমন্বয়ক আতিকুর রহমান আখই ও উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল বারী সোহেলের পরিচালনায় অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিতে একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য নওয়াব আলী আব্বাছ খান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সজল, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মো. জাকির হোসেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান সাহেদ, কুলাউড়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খালেদ পারভেজ বখ্শ, ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন সিলেটের সমন্বয়ক আমিন উদ্দিন, কুলাউড়া ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আলমাছ পারভেজ তালুকদার, ভাটেরা বণিক সমিতির সভাপতি আকমল হোসেন তালুকদার, বিএনপি নেতা সিপার আহমেদ, উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ শাকিল, ছাত্র সমন্বয়ক শামীম আহমদ প্রমুখ।   বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রায় তিন মাস থেকে শান্তিপূর্ণ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই আন্দোলনে কোনো ধরনের প্রতিকার না করায় আমরা কঠোর আন্দোলন করেছি। রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেট বিভাগ সবসময় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সিলেট বিভাগের রেললাইন সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত। এ অঞ্চলের ট্রেনগুলোর ইঞ্জিন ও বগির অবস্থা খুবই নাজুক। পথে পথে প্রায়ই ইঞ্জিন নষ্ট হয়। এতে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহান। সারা দেশের তুলনায় সিলেট বিভাগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। অথচ রেল বিভাগ আয়ের ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যদি ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করেন শুধু অবস্থান ধর্মঘট নয় আগামীতে গোটা সিলেটজুড়ে রেল অবরোধের ডাক দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে কুলাউড়া জংশন স্টেশনসহ বিভিন্ন বন্ধ রেলস্টেশনে, সিলেট রেলস্টেশন, শ্রীমঙ্গল, ভাটেরা, টিলাগাঁও, লংলা রেল স্টেশন এবং সর্বশেষ কুলাউড়া জংশন স্টেশনে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দাবি আদায়ে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
Read Entire Article