৮০ কুয়েত প্রবাসীর ভাগ্য দূতাবাসের ওপর

2 hours ago 6

কুয়েতে ক্লিনটি জেনারেল ট্রেডিং অ্যান্ড ক্লিনিং কোম্পানিতে কর্মরত ৮০ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিষয়টি জানিয়েছেন কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম মিনিস্টার আবুল হোসেন।

এসময় তিনি বলেন, ‘ওই শ্রমিকরা দূতাবাসে এসেছিলেন, তাদের কথা শুনেছি এবং সব সমস্যা সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।’

প্রবাসীদের সব ধরনের সমস্যা খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়, উল্লেখ করে আবুল হোসেন বলেন, ক্লিনটি কোম্পানির ৮০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মে বিরতি দিয়ে ৭ জানুয়ারি দূতাবাসে আসেন। তখন তারা একাধিক সমস্যা ও দাবির কথা জানান। সেগুলো হলো— ‘তারা নির্ধারিত ৮ ঘণ্টার পর অতিরিক্ত সময় কাজ করতে চান না, কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে এক বছর থেকে দুই বছর করতে হবে, আকামা জটিলতা দূর করতে হবে, সিভিল আইডি পাইয়ে দিতে হবে এবং বেতন প্রতি মাসের ১০ তারিখের আগেই পরিশোধ করতে হবে। পাশাপাশি, এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যেন তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়, যাতে তারা রিক্রুটিং এজেন্সির কাছ থেকে ভিসার মূল্য ফেরত নিতে পারেন।’

তিনি আরও বলেন, ক্লিনটি কোম্পানির শ্রমিকরা যেদিন দাবিগুলো নিয়ে দূতাবাসে আসেন। সেদিন ওই কোম্পানির নিয়োগকর্তা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সেদিন মালিকপক্ষের কাছে শ্রমিকদের দাবিগুলো তুলে ধরে। যদিও শুরুর দিকে সেগুলো মানার ক্ষেত্রে তাদের অনাগ্রহ ছিল, পরে তারা মেনে নেন।

আবুল হোসেন বলেন, সমস্যা সমাধানের পর স্বভাবতই শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার কথা। কিন্তু, সেদিনই ওই শ্রমিকরা স্থানীয় পাবলিক অথরিটি ফর ম্যানপাওয়ার অফিসে গিয়ে একই অভিযোগ করেন। ফলে, এখন বিষয়টি অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে। এছাড়াও তারা কর্মবিরতি করেছেন,যেটি স্থানীয় আইনে সম্পূর্ণ নিষেধ। 

দূতাবাস নিয়োগকর্তা ও শ্রমিকদের মধ্যেকার সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার পরও কেন শ্রমিকরা পাবলিক অথরিটি ফর ম্যানপাওয়ার অফিসে গেলেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন দূতাবাস কর্মকর্তা আবুল হোসেন। 

এদিকে, ক্লিনটি কোম্পানির বাংলাদেশি শ্রমিকরা ৭ জানুয়ারি এ প্রতিবেদককে তাদের নানা সমস্যার কথা জানান। পরে ৯ জানুয়ারি কয়েক জন শ্রমিক জানান, শ্রমিকদের স্বার্থে দূতাবাসের নেওয়া সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল। পরবর্তী সময়ে পাবলিক অথরিটি ফর ম্যানপাওয়ার অফিসে গিয়ে অভিযোগ করা ঠিক হয়নি। 

তারা জানান, ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে কোম্পানির নিয়োগকর্তা শ্রমিকদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা যেন ১০ জানুয়ারি দুপুরের দিকে প্রস্তুত থাকেন। কারণ, তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য এয়ার টিকেট নেওয়া হয়েছে। 

পরের দিন ১১ জানুয়ারি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে ক্লিনটি কোম্পানির শ্রমিকরা জানান, ওই কোম্পানির নিয়োগকর্তার প্রতিনিধিরা কোম্পানির ব্যারাকে এসে রেজিগনেশন লেটার প্রত্যেকের হাতে দিয়ে বলেছেন সেটিতে স্বাক্ষর দিতে। যদিও ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ করে কুয়েতে আসা ওইসব শ্রমিকরা এই মুহূর্তে স্বেচ্ছায় দেশে যেতে চাচ্ছেন না। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কোম্পানি যেকোনো সময় বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা করছেন ৮০ জন কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

দূতাবাসের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, দূতাবাস তার দায়িত্বের জায়গা থেকে প্রবাসীদের প্রকৃত সেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসীদের প্রত্যাশা অনেক। সব সময় হয়ত প্রত্যাশা শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হয় না। ক্লিনটি কোম্পানির ব্যাপারে শুরু থেকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। শুক্রবার ও শনিবার অফিস বন্ধ। রোববারে শ্রমিকদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুয়েত বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার। এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ ছিল। বর্তমানে লামা করে অর্থাৎ বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ভিসা পেতে হয়। ফলে, বাংলাদেশি ভিসা ব্যবসায়ীরা চড়া মূল্যে ভিসা বিক্রি করছেন এবং যারা কুয়েতে আসছেন, তাদের খরচ হচ্ছে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা।

ক্লিনটি কোম্পানির বাংলাদেশি শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বেদু ফিরোজ নামে একজন কুয়েত প্রবাসীর কাছ থেকে তারা ভিসা নিয়ে কুয়েতে এসেছেন। প্রতিটি ভিসার দাম নেওয়া হয়েছে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। 

কিছুদিন আগে কথিত বেদু ফিরোজকে ভিসা জালিয়াতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কুয়েত প্রশাসন। পরে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

Read Entire Article