৯ লক্ষণে বুঝে নিন আপনি পরিবারের সমস্যার মূল নন

2 hours ago 4
পরিবার আমাদের নিরাপত্তা ও সান্ত্বনার জায়গা হওয়ার কথা; কিন্তু সব পরিবার এমন হয় না। অনেকেই পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানের পর নিজেকে প্রশ্ন করেন—‘সমস্যাটা কি আমারই?’ যদি আপনি এমন অনুভব করেন, আপনি একা নন।  পরিবার-পরামর্শ বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিষাক্ত (toxic) পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই দোষ চাপিয়ে দেয় সেই ব্যক্তির ওপর, যে আসলে মানসিকভাবে সবচেয়ে সুস্থ। এতে করে আপনি নিজের আচরণ নিয়েই সন্দিহান হয়ে পড়েন।  নিচের নয়টি লক্ষণ প্রমাণ করে যে আসল সমস্যা আপনার নয়; বরং পরিবারের বিষাক্ত আচরণগুলোর মধ্যে লুকিয়ে আছে। অন্যের সাফল্যে আপনার হুমকি লাগে না পরিবারের কারও জীবনে ভালো কিছু ঘটলে আপনি সত্যি খুশি হন। তাদের সাফল্য উদ্‌যাপন করা, সহায়তা করা আপনার কাছে স্বাভাবিক লাগে—কারণ তাদের সাফল্য আপনার কিছু কেড়ে নেয় না। কিন্তু বিষাক্ত মানুষ অন্যের সাফল্যকে হুমকি হিসেবে দেখে। তারা অপরাধবোধ তৈরি করে মানুষকে ছোট করে রাখে, স্বাধীনতাকে বিশ্বাসঘাতকতা মনে করে। অথচ, আপনি যখন অন্যের উন্নতিতে আনন্দ পান, সেটা আপনার চরিত্রের পরিপক্বতার প্রমাণ দেয়। মানুষ আপনার কাছে নিজেদের কথা খুলে বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে যখন পরিবারের কেউ কষ্টে থাকে, তারা আপনার কাছে আসে কারণ তারা জানে আপনি বিচার না করে শুনবেন। বিষাক্ত পরিবারে মানুষ কথা বলতে ভয় পায়, কারণ সেখানে বললেই শুরু হয় দোষারোপ বা নাটক। তাই যখন কেউ আপনার কাছে নিজের কথা বলতে চায়, সেটাই প্রমাণ করে আপনি নিরাপত্তা দেন—যা বিষাক্ত সদস্যরা দিতে পারে না। অনেক সময় তারা এটায় হিংসা করে, আপনাকে নাটক তৈরি করার অভিযোগও দিতে পারে। কিন্তু সত্য হলো, মানুষ স্বাভাবিকভাবেই এমনদের খোঁজে, যাদের কাছে বোঝাপড়া পাওয়া যায়—আর সেই মানুষটি আপনি। আপনার সীমারেখা (Boundary) সম্পর্ককে রক্ষা করে বিষাক্ত পরিবারে সীমারেখা টানাকে খারাপ কিছু মনে করা হয়। আপনি যখন বলেন ‘আমি এটুকু পর্যন্ত করতে পারব’, তারা ভাবে আপনি তাদের অপছন্দ করেন। আসলে, সীমা টানার মানে সম্পর্কটাকে সুস্থ রাখা। মনোবিজ্ঞানী ড. স্টেফানি সারকিস বলেন, কেউ সীমা টানতে শুরু করলে বিষাক্ত মানুষরা সেটাকে ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু আপনি যখন সম্মানের সঙ্গে নিজের সীমা নির্ধারণ করেন, তখন ছোট সমস্যা বড় হয়ে ওঠা থেকে রোধ হয়, ক্ষোভ জমে না। যে মানুষ যুক্তিসংগত সীমা মেনে নিতে পারে না, সে সাধারণত সম্মান মানতে শেখেনি। ভুল স্বীকার করতে আপনার ভয় লাগে না ভুল হলে আপনি দায় নেন, এটা আপনাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে। বিষাক্ত পরিবার সদস্যরা এটা ভয় পায়, কারণ দায় নেওয়া মানে নিজের দিকে তাকানো—যা তারা করতে চায় না। তারা দোষ চাপিয়ে দিতে ভালোবাসে। কেউ ক্ষমা চাইলে তারা রেগেও যেতে পারে, কারণ এতে তাদের নিজের ভুল চোখে পড়ে। অথচ, আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া সম্পর্ক মেরামত করতে সাহায্য করে। ভুল স্বীকারের মানে মানসিক পরিপক্বতা, যা বিষাক্ত আচরণে অনুপস্থিত। আপনার পরামর্শে কোনো শর্ত থাকে না অনেক পরিবারে পরামর্শ মানে ক্ষমতার খেলা। কার কথা শোনা হলো, আর কারটা উপেক্ষা করা হলো—সেটাই হয়ে যায় বিরোধের কারণ। কিন্তু আপনি এমন নন। আপনি যখন কেউ চায়, তখনই পরামর্শ দেন, এরপর সেটা তারা মানুক বা না মানুক—আপনি সেটা নিয়ে চাপ দেন না। এই স্বাধীনতাই নিয়ন্ত্রণপ্রবণ আত্মীয়দের বিরক্ত করে, কারণ তারা পরামর্শকে নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র মনে করে। কিন্তু আপনি জানেন, সত্যিকারের সমর্থন মানে হলো —অন্যকে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া, ভুল হলেও। আপনি অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলান না বিষাক্ত পরিবার সদস্যরা মনে করে, সবার জীবনের সব কিছু জানার অধিকার তাদের আছে। কেউ কিছু গোপন রাখলেই তারা বিরক্ত হয়। কিন্তু আপনি জানেন, গোপনীয়তা মানে দূরত্ব নয়, বরং সম্মান। আপনি অকারণে প্রশ্ন করেন না বা বিশদ জানতে চান না। এই সংযম নিয়ন্ত্রণপ্রবণ আত্মীয়দের অসহ্য লাগে, কারণ এতে তাদের প্রভাব কমে। তারা আপনাকে ‘গোপনীয়’ বলে দোষারোপ করলেও, আসলে এটা সুস্থ সম্পর্কের লক্ষণ। আপনি সমস্যাগুলো এড়িয়ে যান না, সামলান বেশিরভাগ পরিবারে সমস্যা হলে দুই ধরনের মানুষ দেখা যায়—কেউ নাটক, নীরবতা, গুজব বা ঝগড়ায় ব্যস্ত থাকে, আর কেউ শান্তভাবে সমস্যার মূলটা সমাধান করতে চায়। বিষাক্ত সদস্যরা দ্বিতীয় ধরনটাকে সহ্য করতে পারে না, কারণ তাতে তাদের বিশৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হয়। তারা শান্ত মানুষটাকেই ‘সমস্যা তৈরিকারী’ বলে চিহ্নিত করে। কিন্তু আসলে যে সমস্যা তুলে ধরে, সে-ই সম্পর্ক বাঁচাতে চায়, ধ্বংস করতে নয়। আপনি দেন বেশি, পান কম অনেক পরিবারে কিছু মানুষ সবসময় দিয়ে যায়—শুনে, সাহায্য করে, পাশে থাকে—অথচ ফেরত কিছু পায় না। এতে আপনি ক্লান্ত বোধ করলে সেটা দুর্বলতা নয়, বরং একতরফা সম্পর্কের ইঙ্গিত। আপনি যদি কখনো বলেন যে একটু সমর্থন চান, তখন সেই আত্মীয়রা আপনাকেই স্বার্থপর বলে দোষ দেয়। কিন্তু আসল সত্য হলো, তারা আপনার উদারতাকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। ক্লান্ত হয়ে যাওয়া মানে আপনি ভুল নন—মানে অন্যরা ভারসাম্য রাখতে ব্যর্থ। কাছে থাকা আপনার কাছে সঠিক থাকার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সুস্থ আর বিষাক্ত মানুষের মধ্যে পার্থক্য প্রায়ই উদ্দেশ্যে। বিষাক্তরা যেকোনো মূল্যে জিততে চায়, কিন্তু আপনি সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে চান। তাই ঝগড়ার সময় আপনি থেমে গিয়ে ভাবেন, ‘ওর আসলে কী লাগছে?’ কেউ যখন বলে, ‘আমি তোমার কথা বুঝেছি’ সেটা দুর্বলতা নয়—বরং সম্পর্ক বাঁচানোর চেষ্টা। জেতার চেয়ে সম্পর্কের মায়া বেছে নেওয়াই দেখায় আপনি মানসিকভাবে পরিপক্ব ও ভালোবাসায় ভরা মানুষ। যদি এই লক্ষণগুলোর বেশিরভাগই আপনার মধ্যে থাকে, তাহলে খুব সম্ভবত আপনি পরিবারে বিষাক্ত নন। বরং আপনি সেই ব্যক্তি, যিনি সম্পর্কের ভারসাম্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। নিজের শান্ত স্বভাব, সীমারেখা ও সহানুভূতিকে দুর্বলতা মনে করবেন না—এগুলোই আপনার শক্তি।  সূত্র : secret life of mom
Read Entire Article