অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল ফোনের চক্করে ভোক্তাদের ক্ষতি কতটুকু?

দেশের অভিজাত শপিংমগুলোতে ফোন কিনতে গিয়ে ক্রেতারা প্রায়ই দ্বিধায় পড়েন। বিক্রেতারা দুটি অপশন দেন- অফিসিয়াল (ওয়ারেন্টিসহ) অথবা আনঅফিসিয়াল (ওয়ারেন্টি ছাড়া)। আনঅফিসিয়াল ফোনে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা (দামি ফোনে ১০-১৫ হাজার) কম দেখে অনেকেই সেদিকে ঝুঁকেন। কিন্তু এই সামান্য টাকা বাঁচাতে গিয়ে ভোক্তারা আসলে কত বড় ক্ষতির মুখে পড়ছে, তা হয়তো তারা নিজেরাও জানে না। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আনঅফিসিয়াল ফোনের চক্করে পড়ে গ্রাহকের ক্ষতির পরিমাণ আসলে ফোনের মূল্যের সমান, কখনো বা জীবনের ঝুঁকিও। ১। নতুন বলে কেনা ফোনটি আসলে পুরোনো: ভোক্তার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো প্রতারিত হওয়া। দেশের অবৈধ বাজারের ৭৫ শতাংশ ফোনই এখন রিফারবিশড বা দুবাই ফেরত পুরোনো ফোন। দেশে অনেকেই ইনট্যাক্ট বলে যা বিক্রি করছে, তার অধিকাংশই চীনে মডিফাই করা ইলেকট্রনিক বর্জ্য। ক্ষতি: আপনি ৭০ হাজার টাকা দিয়ে যে আইফোন বা স্যামসাং কিনলেন, তার ডিসপ্লে বা ব্যাটারি হয়তো নকল। কিছুদিন পরেই মাদারবোর্ড নষ্ট হলে পুরো টাকাই বিফলে। ২। ওয়ারেন্টিহীন শপ ওয়ারেন্টির ফাঁদ: অফিসিয়াল ফোনে কোম্পানি এক বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি দেয়। কিন্তু আনঅফিসিয়াল ফোনে বিক্রেতারা দেন ১০-১৫ দিনের রিপ্

অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল ফোনের চক্করে ভোক্তাদের ক্ষতি কতটুকু?

দেশের অভিজাত শপিংমগুলোতে ফোন কিনতে গিয়ে ক্রেতারা প্রায়ই দ্বিধায় পড়েন। বিক্রেতারা দুটি অপশন দেন- অফিসিয়াল (ওয়ারেন্টিসহ) অথবা আনঅফিসিয়াল (ওয়ারেন্টি ছাড়া)। আনঅফিসিয়াল ফোনে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা (দামি ফোনে ১০-১৫ হাজার) কম দেখে অনেকেই সেদিকে ঝুঁকেন। কিন্তু এই সামান্য টাকা বাঁচাতে গিয়ে ভোক্তারা আসলে কত বড় ক্ষতির মুখে পড়ছে, তা হয়তো তারা নিজেরাও জানে না। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আনঅফিসিয়াল ফোনের চক্করে পড়ে গ্রাহকের ক্ষতির পরিমাণ আসলে ফোনের মূল্যের সমান, কখনো বা জীবনের ঝুঁকিও।

১। নতুন বলে কেনা ফোনটি আসলে পুরোনো: ভোক্তার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো প্রতারিত হওয়া। দেশের অবৈধ বাজারের ৭৫ শতাংশ ফোনই এখন রিফারবিশড বা দুবাই ফেরত পুরোনো ফোন। দেশে অনেকেই ইনট্যাক্ট বলে যা বিক্রি করছে, তার অধিকাংশই চীনে মডিফাই করা ইলেকট্রনিক বর্জ্য।

ক্ষতি: আপনি ৭০ হাজার টাকা দিয়ে যে আইফোন বা স্যামসাং কিনলেন, তার ডিসপ্লে বা ব্যাটারি হয়তো নকল। কিছুদিন পরেই মাদারবোর্ড নষ্ট হলে পুরো টাকাই বিফলে।

২। ওয়ারেন্টিহীন শপ ওয়ারেন্টির ফাঁদ: অফিসিয়াল ফোনে কোম্পানি এক বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি দেয়। কিন্তু আনঅফিসিয়াল ফোনে বিক্রেতারা দেন ১০-১৫ দিনের রিপ্লেসমেন্ট আর ১-২ বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি। অনেক ক্ষেত্রে সার্ভিস ওয়ারেন্টি দেয়া হয় না।

বাস্তবতা: ফোন নষ্ট হলে এই শপ ওয়ারেন্টি কোনো কাজে আসে না। ইস্টার্ন প্লাজা বা মোতালেব প্লাজার দোকানদাররা তখন সফটওয়্যার সমস্যা, ফাঙ্গাস বা স্ক্র্যাচের অজুহাত দেখিয়ে দায় এড়িয়ে যান। আসুস বা স্যামসাংয়ের মতো ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, আনঅফিসিয়াল পণ্যে কোনো সার্ভিস পাওয়া যায় না।

ক্ষতি: মেরামতের জন্য বাড়তি ৫-১০ হাজার টাকা খরচ এবং মানসিক হয়রানি।

৩। এনইআইআর (NEIR) ও নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়: আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এনইআইআর চালু হলে বিটিআরসির ডাটাবেজে না থাকা সব আনঅফিসিয়াল ফোন বন্ধ হয়ে যাবে।

ক্ষতি: আপনি হয়তো ভাবছেন সিম বদলে চালাবেন, কিন্তু আইএমইআই ব্লক হলে ফোনটি কেবল ওয়াইফাই চালিত মিডিয়া প্লেয়ার বা খেলনা ডিভাইসে পরিণত হবে। কল করা বা ডেটা ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। লাখ টাকার ফোনটি তখন কার্যত খেলনা হয়ে যাবে।

৪। রিসেল ভ্যালু বা বিক্রয় মূল্য শূন্যের কোঠায়: অফিসিয়াল ফোনের একটা ভালো রিসেল ভ্যালু থাকে। কিন্তু আনঅফিসিয়াল বা অবৈধ ফোন বিক্রি করতে গেলে এখন কেউ কিনতে চায় না। বিশেষ করে এনইআইআর আতঙ্কে এসব ফোনের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।

ক্ষতি: শখের ফোনটি আপগ্রেড করার সময় আপনি ন্যায্য দাম পাবেন না।

৫। স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তা: সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হলো জীবনের ঝুঁকি। রিফারবিশড ফোনে ব্যবহৃত নকল ব্যাটারি ও চার্জার যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। সম্প্রতি পোকো এফ৬ বিস্ফোরণের ঘটনা এর বড় প্রমাণ। এছাড়া নকল ডিসপ্লে ও যন্ত্রাংশ থেকে নির্গত উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ।

ভোক্তাদের জন্য পরামর্শ: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাট বা ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া ফোন কিনে হয়তো সাময়িক কিছু টাকা বাঁচানো যায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর মাশুল দিতে হয় অনেক বেশি। গ্রে-মাফিয়া সিন্ডিকেট নিজেদের ২০ হাজার কোটি টাকার বাজার বাঁচাতে আপনাকে প্রলুব্ধ করবে, কিন্তু দিনশেষে ফোনটি লক হলে বা নষ্ট হলে দায়ভার আপনাকেই নিতে হবে। তাই চটকদার বিজ্ঞাপনে না ভুলে বিটিআরসি নিবন্ধিত অফিসিয়াল ফোন কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow