অভিবাসী সুরক্ষায় ব্যর্থ ব্রিটেন, বাংলাদেশির মামলায় আদালতের রায়

আটককেন্দ্রে রাখা অভিবাসীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে ব্রিটিশ হোম অফিস ব্যর্থ হয়েছে বলে রায় দিয়েছে ব্রিটেনের হাইকোর্ট। ডিটেনশন সেন্টারে আটক এক বাংলাদেশি ও এক মিশরীয় অভিবাসীর দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এমন রায় দিয়েছে আদালত। রায়ে বিচারক জেফোর্ড জানান, ইউরোপিয়ান কনভেনশন অব হিউম্যান রাইটসের ধারা-৩ অনুযায়ী, আটক থাকা অভিবাসীরা যেন অমানবিক এবং অবমাননাকর পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন, তা নিশ্চিত করতে ব্রিটিশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়টিকে বেআইনি বলেও উল্লেখ করেন ওই নারী বিচারক। এমন ব্যর্থতা বছরের পর বছরের ধরে ঘটছে বলেও রায়ে উল্লেখ করেছেন তিনি। বাংলাদেশি ও মিশরীয় অভিবাসীর মামলা ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই এবং ২০২৪ সালের ১১ মার্চ আটক হওয়া এক মিশরীয় এবং এক বাংলাদেশি অভিবাসী এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন। আটকের পর তাদের ব্রিটেনের বুক হাউস ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। অবশ্য এই সেন্টারটিতে আশ্রয়প্রার্থীরা যে বঞ্চনার শিকার হন তা নিয়ে আগেও অনেক কথা হয়েছে। ২০১৭ সালের ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বিবিসি-এর এক প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে। এরপর ব্রুক হাইস পাবলিক ইনকোয়ারি নামে এক তদন

অভিবাসী সুরক্ষায় ব্যর্থ ব্রিটেন, বাংলাদেশির মামলায় আদালতের রায়

আটককেন্দ্রে রাখা অভিবাসীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে ব্রিটিশ হোম অফিস ব্যর্থ হয়েছে বলে রায় দিয়েছে ব্রিটেনের হাইকোর্ট। ডিটেনশন সেন্টারে আটক এক বাংলাদেশি ও এক মিশরীয় অভিবাসীর দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এমন রায় দিয়েছে আদালত।

রায়ে বিচারক জেফোর্ড জানান, ইউরোপিয়ান কনভেনশন অব হিউম্যান রাইটসের ধারা-৩ অনুযায়ী, আটক থাকা অভিবাসীরা যেন অমানবিক এবং অবমাননাকর পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন, তা নিশ্চিত করতে ব্রিটিশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে। বিষয়টিকে বেআইনি বলেও উল্লেখ করেন ওই নারী বিচারক। এমন ব্যর্থতা বছরের পর বছরের ধরে ঘটছে বলেও রায়ে উল্লেখ করেছেন তিনি।

বাংলাদেশি ও মিশরীয় অভিবাসীর মামলা

২০২৩ সালের ২৮ জুলাই এবং ২০২৪ সালের ১১ মার্চ আটক হওয়া এক মিশরীয় এবং এক বাংলাদেশি অভিবাসী এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন।

আটকের পর তাদের ব্রিটেনের বুক হাউস ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। অবশ্য এই সেন্টারটিতে আশ্রয়প্রার্থীরা যে বঞ্চনার শিকার হন তা নিয়ে আগেও অনেক কথা হয়েছে। ২০১৭ সালের ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বিবিসি-এর এক প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে। এরপর ব্রুক হাইস পাবলিক ইনকোয়ারি নামে এক তদন্ত প্রতিবেদনেও আটককেন্দ্রে অভিবাসীদের ঝুঁকির বিষয়ে বেশ কিছু উদ্বেগের কথা বলা হয়েছে।

মামলায় ব্রিটিশ নিরাপত্তাবিষয়ক আইনের ধারা-৩৫ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই ধারা অনুযায়ী, আটককেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক রাখার কথা বলা আছে। আটককেন্দ্রে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কিংবা আত্মহত্যা প্রবণতার ঝুঁকি আছে কিনা, তা যাচাই-বাছাই করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার দায়িত্ব ওই চিকিৎসকের। তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ঝুঁকিপূর্ণ আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে স্বরাষ্ট্র দপ্তর।

মামলার অভিযোগে ওই দুই আশ্রয়প্রার্থী তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি এবং নিজেরাই নিজেদের ক্ষতির কারণ হতে পারেন বলে শঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন। এর আগে ব্রিটেনের অ্যাসেসমেন্ট কেয়ার ইনস ডিটেনশন অ্যান্ড টিমওয়ার্ক (এসিডিটি) প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে, ওই দুই অভিবাসীর মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা রয়েছে। প্রতিবেদনে এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করাও হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে, এই দুই অভিবাসীকে নজরদারিতে রেখেছিলেন কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু এমন নজরদারির পরেও আটককেন্দ্রে রাখার সময় তাদের অবস্থা বিবেচনায় নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

আদালতের পর্যবেক্ষণ

রায়ে বিচারক জানান, বহু বছর ধরেই এই প্রক্রিয়াটি (নিরাপত্তা সুরক্ষা) নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছে না। এসব অনিয়মের বিষয়গুলো ২০১৭ সালেই প্রকাশ্যে এসেছিলো।

এসিডিটি প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ধারা-৩৫ অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনের সংখ্যা অনেক কম, এমনটা উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিচারক জেফোর্ড।

প্রতিবেদনের সংখ্যা কেন এত কম, বিশেষ করে ওই সব ব্যক্তিদের বিষয়ে, যাদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতার ঝুঁকি রয়েছে, তা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনো স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি বলেও জানায় আদালত।

বিচারক বলেন, ‘অন্তত ব্রুকলিন হাউস ইনকোয়ারিতে উল্লিখিত সময় থেকেই আইন অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষা দেওয়ার যে আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে, তা স্পষ্টত এবং ক্রমাগতভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’

আদালতের দেওয়া এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন মামলার দুই বাদী। তাদের আইনজীবী লিওস কেট বলেন, ‘আমাদের মক্কেল এই গুরুত্বপূর্ণ রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।’

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আটক এবং সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আমরা মর্যাদা এবং সম্মানের (সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের) সঙ্গে করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাছাড়া আটকের সময়ে নিরাপত্তাবিষয়ক পরিস্থিতির উন্নয়নেও আমরা সংকল্পবদ্ধ।’

‘এর মধ্যে রয়েছে কোনো ব্যক্তি আটক হওয়ার পর তার পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা করা, যেন তাদের আটকাবস্থা আইনি এবং যথাযথ হয়ে থাকে।’

সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস

এমআরএম/এএসএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow