আমদানি জটিলতায় রোগ নির্ণয়ের ৩১ পরীক্ষা বন্ধ, ভোগান্তি চরমে
ইব্রাহীম হোসেন (৫০)। বাংলাদেশের প্রথম সারির দৈনিকে কাজ করেন। তার হার্টে চারটা ব্লক ধরা পড়েছে। দুটি ব্লক ৮০ শতাংশ, রিং পরানো জরুরি। দীর্ঘদিন চেষ্টা করে একটি পরিয়েছেন। আরেকটি পরানোর জন্য হার্টের অবস্থা বা কার্যক্ষমতা দেখতে মায়োকার্ডিয়াল পারফিউশন ইমেজিং (এমপিআই) টেস্ট দেওয়া হয়। কিন্তু গত এক মাসেও তিনি এই টেস্ট করাতে পারছেন না। ইব্রাহীম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি তাদের কাছে গেছি টেস্ট করতে কিন্তু টেস্টের জন্য যে মেডিসিন লাগে, সেটা নাই। এজন্য আমার টেস্ট হচ্ছে না। রিং পরানোর জরুরি কাজটিও হচ্ছে না।’ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. কে. এ. এম. মাহবুব হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘হার্ট অ্যাটাকের রোগীর হার্টের মাংসপেশি ভায়াবল আছে কি না, ক্রিটিক্যাল কোনো ব্লক আছে কি না, ওখানে রিং পরানো বা বাইপাস করলে রোগীর উপকার হবে কি না, এটা বোঝার জন্য আমরা এমপিআই করি। এই টেস্ট করতে না পারলে রোগ নির্ণয়ে সমস্যা হবে। সঠিক চিকিৎসা করা যাবে না। তাহলে রোগীর যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে।’ ইব্রাহীম হোসেনের মতো অবস্থা ৫১ দিন বয়সী আয়াশেরও। ৪৫ দিনে শরীর হলুদ হয়ে যাওয়ায় মা আয়েশা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তিনি সমস্যা
ইব্রাহীম হোসেন (৫০)। বাংলাদেশের প্রথম সারির দৈনিকে কাজ করেন। তার হার্টে চারটা ব্লক ধরা পড়েছে। দুটি ব্লক ৮০ শতাংশ, রিং পরানো জরুরি। দীর্ঘদিন চেষ্টা করে একটি পরিয়েছেন। আরেকটি পরানোর জন্য হার্টের অবস্থা বা কার্যক্ষমতা দেখতে মায়োকার্ডিয়াল পারফিউশন ইমেজিং (এমপিআই) টেস্ট দেওয়া হয়। কিন্তু গত এক মাসেও তিনি এই টেস্ট করাতে পারছেন না।
ইব্রাহীম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি তাদের কাছে গেছি টেস্ট করতে কিন্তু টেস্টের জন্য যে মেডিসিন লাগে, সেটা নাই। এজন্য আমার টেস্ট হচ্ছে না। রিং পরানোর জরুরি কাজটিও হচ্ছে না।’
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. কে. এ. এম. মাহবুব হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘হার্ট অ্যাটাকের রোগীর হার্টের মাংসপেশি ভায়াবল আছে কি না, ক্রিটিক্যাল কোনো ব্লক আছে কি না, ওখানে রিং পরানো বা বাইপাস করলে রোগীর উপকার হবে কি না, এটা বোঝার জন্য আমরা এমপিআই করি। এই টেস্ট করতে না পারলে রোগ নির্ণয়ে সমস্যা হবে। সঠিক চিকিৎসা করা যাবে না। তাহলে রোগীর যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে।’
ইব্রাহীম হোসেনের মতো অবস্থা ৫১ দিন বয়সী আয়াশেরও। ৪৫ দিনে শরীর হলুদ হয়ে যাওয়ায় মা আয়েশা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তিনি সমস্যা ধরতে পরীক্ষা দেন। সেখান থেকেই মূল বিপত্তি। পরীক্ষা করতে গিয়ে রক্ত নেওয়ায় সেটি আর বন্ধ হচ্ছে না। গ্রাম থেকে প্রথমে তারা শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আসেন। তাদের হিডা স্ক্যান দেওয়া হয়েছে। যেটি করতে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু রিএজেন্ট সরবরাহের অভাবে এখন এই পরীক্ষাই হচ্ছে না দেশে।
আরও পড়ুন
রোগ নির্ণয়ের নামে ইচ্ছেমাফিক ফি আদায় বন্ধ হবে কবে?
তদন্তে উঠে এলো দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তাহীনতার চিত্র
কেন চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট জায়গায় পরীক্ষা করতে বলেন?
আয়াশের মা আয়েশা বলেন, ‘টেস্টটা করতে পিজি (বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, এভার কেয়ার ও পপুলারেও গেছি। কোথাও টেস্ট করাতে পারছি না। ছেলের চিকিৎসাও হচ্ছে না।’
জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ ডা. আরিফা তাসনীম জাগো নিউজকে বলেন, ‘হিডা স্ক্যান নবজাতকের বিলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়াজনিত জন্ডিস শনাক্তের জন্য একটি পরীক্ষা। বিলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়া নবজাতকের জন্ডিসের একটি কারণ যেখানে রোগে লিভারে তৈরি হওয়া পিত্তরস ক্ষুদ্রান্তে চলাচলের পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়।’
শুধু ইব্রাহীম বা আয়াশ নন, লিভার, ফুসফুস, কিডনি, থাইরয়েড, হার্ট এবং বোনসের নানান জটিল ও কঠিন রোগাক্রান্ত শত শত রোগী এভাবে পথে পথে ঘুরছেন। কারণ, এ সংক্রান্ত ৩১টি পরীক্ষা বাংলাদেশে হচ্ছে না। এসব পরীক্ষার রিএজেন্ট আমদানি করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বাপশক)। পরীক্ষা করে তাদের আওতাধীন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস (নিনমাস), ২১টি ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসসহ (ইনমাস) দেশের অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি নিউক্লিয়ার মেডিসিন সেন্টার।
আরও পড়ুন
এক মেশিনেই ৪২টি রোগ নির্ণয় করতেন দাখিল পাস চিকিৎসক!
শুরুতে নির্ণয় হলে ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব
সরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা চালুর দাবি
গত ১৮ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের কারণে তেজস্ক্রিয় চিকিৎসা উপকরণ আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বাপশকের আওতাধীন নিনমাস, ২১টি ইনমাসসহ দেশের অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি নিউক্লিয়ার মেডিসিন সেন্টারে ৯৯এমটিসি জেনারেটর, আই-১৩১ ক্যাপসুল এবং বাল্ক আই-১৩১ সল্যুশনের নিয়মিত সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। যার কারণে থাইরয়েড ক্যানসারের রেডিওআইসোটোপ থেরাপি, বিভিন্ন অঙ্গের স্ক্যান এবং জটিল রোগ নির্ণয় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের পরিচালক (জীববিজ্ঞান বিভাগ) মাহফুজা খানের সঙ্গে কথা বলতে তার কার্যালয়ে গেলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে মিডিয়ায় কথা বলতে আমাদের নিষেধ করা আছে।’
পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মজিবুর রহমানের মুঠোফোনে দফায় দফায় চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার দপ্তরে গিয়ে দিনভর অপেক্ষা করেও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত সহকারী বলেন, ‘স্যার, অনেক ব্যস্ত। দেখা করতে পারবেন না।’
আরও পড়ুন
শিশুর সর্দি-কাশি নিউমোনিয়া নয় তো? লক্ষণ জানালেন চিকিৎসক
‘নীরব ঘাতক’ যে ৫ ব্যাধি
ডেঙ্গু নাকি চিকুনগুনিয়া, কীভাবে বুঝবেন
পরমাণু শক্তি কমিশনের নিয়ন্ত্রক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে কথা বলেও সমাধান হয়নি। তারা টেকনিক্যাল বিষয়টিতে কথা বলতে রাজি হননি। বরং পরমাণু শক্তি কমিশনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
পরমাণু শক্তি কমিশনের পরিচালক মাহফুজা খান গত ৬ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো অংশে অগ্নিকাণ্ডজনিত নিষেধাজ্ঞা থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকা ও পোল্যান্ড থেকে আসা আই-১৩১ থেরাপিউটিক ক্যাপসুল, ফিশন মো-৯৯ এবং বাল্ক আই-১৩১ সল্যুশন পরিবহনের দায়িত্বে থাকা কার্গো এয়ারলাইনগুলো বাংলাদেশে এসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ আনতে পারছে না। ফলে বাপশকের আওতাধীন নিনমাস, ২১টি ইনমাসসহ দেশের অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি নিউক্লিয়ার মেডিসিন সেন্টারে ৯৯এমটিসি জেনারেটর, আই-১৩১ ক্যাপসুল এবং বাল্ক আই-১৩১ সল্যুশন–এর নিয়মিত সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। এসব উপকরণ থাইরয়েড ক্যানসারের রেডিওআইসোটোপ থেরাপি, বিভিন্ন অঙ্গের স্ক্যান এবং জটিল রোগ নির্ণয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, আকস্মিক এ সংকটে রোগীরা চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে থাইরয়েড ক্যানসারের রোগীদের জন্য জরুরি আই-১৩১ থেরাপি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু রোগীর চিকিৎসা ঝুলে গেছে। দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল ও সরঞ্জাম আমদানির জন্য কমিশন সব ধরনের জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সরঞ্জাম সরবরাহ ব্যাহত হয়ে রোগীদের যে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে, তার জন্য কমিশন আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং সংকট মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছে।
এসইউজে/এমএমএআর/এমএফএ/জেআইএম
What's Your Reaction?