আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে নাজেহাল পান চাষিরা
শরীয়তপুরে দিন দিন কমছে পানের দাম। বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় ঠিকমতো উঠছে না উৎপাদন খরচও। এতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে জেলার পান চাষিরা। কেউ কেউ ধারদেনা করে চাষ অব্যাহত রাখলেও অনেকেই গুটিয়ে নিচ্ছেন চাষ। চাষিরা বলছেন সরকারিভাবে প্রণোদনা পেলে সুদিন দিন ফিরবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ৬টি উপজেলায় ৩১৬ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়। এর মধ্যে সদর, ভেদরগঞ্জ, গোসাইরহাট এলাকায় বেশি পান আবাদ করেন চাষিরা। এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে পানের আবাদ হয়ে আসছে। এখানকার মাটি পান চাষের উপযোগী হওয়ায় বেশ ভালো মানের পান উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব পান নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর অঞ্চলে বিক্রি হয়ে থাকে। নৌপথে চাঁদপুর হয়ে বিভিন্ন জেলায় বাজারে পানগুলো চলে যায়। এছাড়া কয়েক বছর আগেও শরীয়তপুরের পান দেশের গণ্ডি পেরিয়ে লন্ডন, সৌদি আরব, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। তবে কয়েক বছর ধরে পান রপ্তানি না হওয়ার পাশাপাশি বাজারেও কমেছে চাহিদা। এতে চাষের খরচ ওঠাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। অনেকে আবার পানের বরজ বাদ দিয়ে অন্যান্য চাষাবাদে ঝুঁকছেন। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পুঁটিজুড়ি এলাকায় চান চ
শরীয়তপুরে দিন দিন কমছে পানের দাম। বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় ঠিকমতো উঠছে না উৎপাদন খরচও। এতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে জেলার পান চাষিরা। কেউ কেউ ধারদেনা করে চাষ অব্যাহত রাখলেও অনেকেই গুটিয়ে নিচ্ছেন চাষ। চাষিরা বলছেন সরকারিভাবে প্রণোদনা পেলে সুদিন দিন ফিরবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ৬টি উপজেলায় ৩১৬ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়। এর মধ্যে সদর, ভেদরগঞ্জ, গোসাইরহাট এলাকায় বেশি পান আবাদ করেন চাষিরা। এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে পানের আবাদ হয়ে আসছে। এখানকার মাটি পান চাষের উপযোগী হওয়ায় বেশ ভালো মানের পান উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব পান নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর অঞ্চলে বিক্রি হয়ে থাকে। নৌপথে চাঁদপুর হয়ে বিভিন্ন জেলায় বাজারে পানগুলো চলে যায়।
এছাড়া কয়েক বছর আগেও শরীয়তপুরের পান দেশের গণ্ডি পেরিয়ে লন্ডন, সৌদি আরব, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। তবে কয়েক বছর ধরে পান রপ্তানি না হওয়ার পাশাপাশি বাজারেও কমেছে চাহিদা। এতে চাষের খরচ ওঠাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের। অনেকে আবার পানের বরজ বাদ দিয়ে অন্যান্য চাষাবাদে ঝুঁকছেন।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পুঁটিজুড়ি এলাকায় চান চাষি আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার। দীর্ঘ ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে করছেন পান চাষ। তার তিনটি বরজে উৎপাদিত পান এরই মধ্যে লন্ডন, সৌদি আরব ও দুবাইতে রপ্তানি করেছেন। তবে কয়েক বছর ধরে পান রপ্তানি না হওয়ার পাশাপাশি দেশের বাজারেও কমেছে কদর। এতে বিপুল অঙ্কের লোকসান গুনছেন এই চাষি। ধ্বংসের মুখ থেকে বাঁচতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন এই চাষি।
রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, শরীয়তপুরে অনেক ভালো মানের পান হয়ে থাকে। আমি কয়েক বছর আগেও বিদেশে পান পাঠিয়েছি। তবে কয়েক বছর ধরে পানের দাম কমে গেছে, আর বিদেশেও পান রপ্তানি হয় না। আমরা খুব বিপদে আছি। ৮ লাখ টাকা খরচ করে তিনটি বরজ করেছি, এরমধ্যে ৪ লাখ টাকাই ঋণ করা। এখন যেই অবস্থা, জায়গা বেঁচে ঋণ শোধ করতে হবে। সরকার যদি আমাদের সার, কীটনাশক আর খইল কেনার ওপর প্রণোদনা দিতো তাহলে এই পান চাষ করা সম্ভব হতো।
একই অবস্থা জেলার অন্যান্য পান চাষিদের। উঠছে না প্রতিদিনের খরচও। একদিকে বেড়েছে সার, কীটনাশক ও খৈলের দাম। অন্যদিকে কমেছে পানের চাহিদা। এই দুয়ের অঙ্ক না মেলায় অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এ চাষে। সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি জেলার পান চাষিদের।
মোহাম্মদ হান্নান খাঁ নামের এক পান চাষি বলেন, ‘পানের বাজার এখন অনেক কম। এতে আমাগো খরচ কিছুই পোষায় না। এবার সম্পূর্ণ গাইটের থিকা (জমানো টাকা) খরচ করতাছি। এভাবে আর কয়দিন কুলায়? শ্রমিক নিতেও পারবো না সামনে। সরকার যদি অন্যান্য চাষের মতো এই চাষে সহযোগিতা করতো তাহলে এই চাষ ধরে রাখতাম।’
আরেক পান চাষি মিন্টু মাঝি বলেন, ‘আমাদের পানের বরজে এখন আর ব্যবসা নাই। গতবার এক বিড়া পান বেইছি (বিক্রি) ৮০ টাকা, সেই পান এইবার ৩৫ টাকা। প্রতিদিন পোয়ার (পানের লতা) বানতে হয়, লোক নিয়ে কাজ করতে হয়। যা পান বিক্রির টাকায় উঠে না। সরকার যদি অন্যান্য চাষের মতো ভর্তুকি দিতো, তাহলে আমরা ভালো থাকতাম।’
পান চাষে কৃষকদের এখন পর্যন্ত কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে অচিরেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে চাষিদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস জেলার কৃষি কর্মকর্তার।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, শরীয়তপুরে যে পান আবাদ হয়, তা খুব ভালো মানের। তবে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত পান চাষিদের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো, যাতে তাদের প্রণোদনা দেওয়া হয়। প্রণোদনা পেলে পান চাষ আরও ভালো করা সম্ভব।
এফএ/এমএস
What's Your Reaction?