এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই
ইসলাম এমন একটি শান্তিপ্রিয় ধর্ম যেখানে সমাজে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার কোনো স্থান নেই। অথচ সমাজের একটি বৃহৎ শ্রেণি এমন রয়েছেন যারা ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত ঝগড়াবিবাদে জড়িয়ে যায়। কখনো কখনো এই ঝগড়াবিবাদ আবার হত্যা পর্যন্ত গড়ায়। বর্তমান প্রায় দেখা যায়, সামান্য বিষয় নিয়ে গ্রামের লোকজনের মধ্যে মারামারি শুরু হয়ে তা রক্তপাত এবং পরস্পরের বাড়িঘর পর্যন্ত জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেওয়ার ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে। অনেকে হয়ত জানেও না, কী কারণে তারা এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। মুসলমানদের মধ্যে অনেক ফের্কা রয়েছে। দেখা যায় এক ফের্কার লোক অন্য ফের্কার লোকদের পছন্দ করে না। অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই’। (সুরা হুজুরাত, আয়াত, ১০) শ্রেষ্ঠনবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমাজের সব ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠীর মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন রচনা করেছিলেন। তিনি (সা.) ছিলেন সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ। মানব চরিত্রে যত প্রকারের মহৎ গুণ থাকতে পারে, তার চরিত্রে ও আদর্শে সে সমস্ত গুণ পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। ধর্ম প্রচারই বলুন আর পারিবারিক জীবনের অন্য কাজই বলুন না কেন, মহানব
ইসলাম এমন একটি শান্তিপ্রিয় ধর্ম যেখানে সমাজে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার কোনো স্থান নেই। অথচ সমাজের একটি বৃহৎ শ্রেণি এমন রয়েছেন যারা ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত ঝগড়াবিবাদে জড়িয়ে যায়। কখনো কখনো এই ঝগড়াবিবাদ আবার হত্যা পর্যন্ত গড়ায়।
বর্তমান প্রায় দেখা যায়, সামান্য বিষয় নিয়ে গ্রামের লোকজনের মধ্যে মারামারি শুরু হয়ে তা রক্তপাত এবং পরস্পরের বাড়িঘর পর্যন্ত জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দেওয়ার ঘটনা নিয়মিতই ঘটছে। অনেকে হয়ত জানেও না, কী কারণে তারা এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।
মুসলমানদের মধ্যে অনেক ফের্কা রয়েছে। দেখা যায় এক ফের্কার লোক অন্য ফের্কার লোকদের পছন্দ করে না। অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই’। (সুরা হুজুরাত, আয়াত, ১০)
শ্রেষ্ঠনবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমাজের সব ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠীর মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন রচনা করেছিলেন। তিনি (সা.) ছিলেন সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ। মানব চরিত্রে যত প্রকারের মহৎ গুণ থাকতে পারে, তার চরিত্রে ও আদর্শে সে সমস্ত গুণ পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।
ধর্ম প্রচারই বলুন আর পারিবারিক জীবনের অন্য কাজই বলুন না কেন, মহানবি (সা.) তার স্বীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে আদর্শের উৎকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন। এজন্যই তিনি আসমান ও জমিনে সর্বত্রই সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হিসেবে স্বীকৃত। নিজ ধর্ম ইসলাম প্রচার ক্ষেত্রে তিনি কখনও জোর জবরদস্তি করেননি বরং কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী তার (সা.) অনুসারীদের প্রতি নির্দেশ ছিল ‘তোমরা কারো মতের ওপর বল প্রয়োগ করো না।’ (সুরা বাকারা: ২৫৬) বরং একথা বলবে, তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিন আর আমার জন্য আমার দ্বিন (সুরা কাফেরুন)।
ধর্ম পালনের ব্যাপারে প্রত্যেকের স্বাধীন ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিবে। মানবতা লঙ্ঘন হয় যুদ্ধক্ষেত্রে এমন কোনো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করবে না। যুদ্ধবন্দিগণের প্রতি সহনশীল হবে। স্বীয় আদর্শের উৎকর্ষতার মাধ্যমে অন্য ধর্মাবলম্বীদের হৃদয় জয় করার চেষ্টা করবে। কেননা বল প্রয়োগে কখনো স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এই নীতিই ছিল আমাদের প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের।
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সাহাবায়ে কেরামকে প্রশ্ন করেছেন, আমি কি তোমাদেরকে নামাজ, রোজা আর সদকার চেয়েও উত্তম কোনো কিছুর কথা বলব? তারা বললেন, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, ‘পারস্পরিক সম্পর্ক ঠিক করে দেওয়া। আর পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে দেওয়া তো (দ্বিনকে) মুণ্ডিয়ে দেওয়া।’ -(সুনানে আবু দাউদ-৪৯২১)
আমাদের প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা কতই না উত্তম ছিল, যে বিধবা মহানবির (সা.) কাছ থেকে শহর ছেড়ে পালিয়ে স্বীয় ধর্ম রক্ষার চেষ্টা করেছিল, আর সেই বিধবারই ভারী বোঝা বহন করে কিছুটা পথ এগিয়ে দিয়ে মহানবি (সা.) বলেছিলেন, হে বিধবা মা! আপনি যার ভয়ে নিজ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, আমিই সেই মুহাম্মদ। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়ার্দ্র ও অনুপম আদর্শের নমুনা দর্শনে বিধবা বিস্মিত হলেন, আপ্লুত হলেন, ইসলাম প্রচারকের অনন্য বৈশিষ্ট্যের রূপ দেখে বিমুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, তুমিই যদি সেই মুহাম্মদ হয়ে থাকো তাহলে আমি তোমার প্রতি ইমান আনলাম।
ইসলামের শিক্ষা হলো-কারো সাথে কোনো বিষয়ে মনোমালিন্য দেখা দিলে তাদের মাঝে যেন সমঝোতা করিয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন: ‘সন্ধি সর্বাবস্থায়ই উত্তম।’ (সুরা আন নিসা, আয়াত : ১২৮) কিন্তু বর্তমান দেখা যায় উভয়ের মাঝে সমঝোতা না করিয়ে বরং বিষয়টিকে আরো কঠিন করা হয়। এছাড়া অধিকাংশ ঝগড়ার সূচনা হয় অনুমান থেকে।
হাদিসে এসেছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) ও হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলমান ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নেই। (মুসনাদে আহমাদ)
অপর এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়ের ওপর থাকা সত্ত্বেও বিবাদ পরিহার করে, তার জন্য জান্নাতের মাঝে একটি ঘর তৈরি করা হবে।’ (তিরমিজি)
তলোয়ার হাতে যে বেদুইন হজরত রাসুল (সা.)কে হত্যা করতে এসেছিল, সেই নরাধম ঘাতককেও মানবতার নবি রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিন ক্ষমা করে দিয়েছিলেন অকাতরে। শুধু তা-ই নয়, মুসলমানদের প্রতি হিংসাপরায়ণ হয়ে যারা মুসলমানদেরকে হত্যা করেছে, পৃষ্ঠদেশে জ্বলন্ত আগুনে ছেঁকা দিয়েছে, নাকে রশি ঝুলিয়ে তপ্ত বালুকায় পশু তুল্য আচরণে টানা-হেঁচড়া করেছে, কাউকে বা শহিদ করে তার কলিজা চিবিয়েছে, এমন নির্মম নিষ্ঠুর হৃদয়ের ইসলাম বিদ্বেষীকেও মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষমা করে দিয়েছিলেন নিঃশর্তে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : ‘আর মুমিনদের দু’দল পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হলে তাদের মাঝে তোমরা মীমাংসা করে দিও। এরপর তাদের মাঝে একদল অন্যদলের বিরুদ্ধে সীমালঙ্ঘন করলে যে দল সীমালঙ্ঘন করে, তারা আল্লাহর সিদ্ধান্তের দিকে ফিরে না আসা পর্যন্ত তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। এরপর তারা (আল্লাহর সিদ্ধান্তের দিকে) ফিরে এলে, তোমরা উভয়ের মাঝে ন্যায়পরায়ণতার সাথে মীমাংসা করে দিও এবং সুবিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।” (সুরা আল হুজরাত, আয়াত: ৯)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা পরস্পর সম্পর্কছেদ করো না, একে অন্যের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হয়ো না, পরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো না, পরস্পর হিংসা করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বলা বন্ধ রাখা বৈধ নয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)
তাই আমাদের উচিত হবে, কোনো কারণে কারো সাথে যদি মনোমালিন্য দেখা দেয় তাহলে দ্রুত সমঝোতা করে ফেলা এবং সবার সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করা। কেননা হাদিসে এসেছে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ইমানদারদের সাথে একজন ইমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সাথে মাথার সম্পর্ক। সে ইমানদারদের প্রতিটি দুঃখকষ্ট ঠিক অনুভব করে, যেমন- মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে। (মুসনাদে আহমাদ)
একজন মুসলমান হিসেবে আমাকে দেশ ও জাতির জন্য এমন কোনো কর্মকাণ্ড করা ঠিক হবে না যা আমার প্রিয়নবি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন। যেভাবে মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘একজন মুসলমান হলো : সেই ব্যক্তি, যার হাত এবং জিহ্বা থেকে অন্যেরা নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিম) বস্তুত ইসলামি শিক্ষা এক মুসলমানকে শান্তিপ্রিয়, বিনয়ী এবং মহৎ গুণাবলির অধিকারী হতে উদ্বুদ্ধ করে।
এ শিক্ষা ভুলে পরস্পর হানাহানির নীতি কোনো ক্রমেই ইসলাম সমর্থন করে না। মহানবির অনুপম এ শিক্ষা আজ অনেকেই বাস্তব ক্ষেত্রে বেমালুম ভুলে বসেছে।
যদি আমার হাত ও মুখ থেকে অন্যরা নিরাপদ না থাকে, তাহলে আমার কার্যে প্রমাণ করে যে আমি শান্তির দূত মহানবির (সা.) প্রকৃত অনুসারী নই। আমার আচার-আচরণ, উন্নত আদর্শ ও কর্মদ্বারা আমাকে প্রমাণ করতে হবে আমি শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী।
আমি যে সমাজে বসবাস করি সেখানে যদি কোনো ঝগড়াবিবাদ দেখা দেয়, তাহলে একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের কর্তব্য তা মেটানোর চেষ্টা করা।
হাদিসে এসেছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) ও হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলমান ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নেই। (মুসনাদে আহমাদ)
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুপম আদর্শ অনুসরণ করে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক, ইসলামি চিন্তাবিদ।
[email protected]
এইচআর/এমএস
What's Your Reaction?