গর্ভাবস্থায় নারীর শরীর–মনের বদল: আগে জানা থাকলে কমে যায় উদ্বেগ
গর্ভাবস্থায় নারীকে সবচেয়ে বেশি প্রস্তুত হতে হয় নিজের শরীর ও মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে—ফেসবুকে এমন মন্তব্য করেছেন গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. সাবরিনা সুলতানা মিষ্টি। তিনি বলেন, শরীরের ভেতরে একটি নতুন প্রাণ বেড়ে ওঠার অনুভূতি যতটা আনন্দের, ততটাই শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জে ভরা পুরো নয় মাস। ডা. মিষ্টি জানান, গর্ভধারণের শুরুর দিকে অধিকাংশ নারীর খাবারের রুচি কমে যায়, মাথাব্যথা ও অবসাদ দেখা দেয়। চার মাস থেকে শরীরের দৃশ্যমান পরিবর্তন—পেট বড় হওয়া, ওজন বৃদ্ধি, রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে না পারা, পিঠব্যথা, বারবার টয়লেটে যাওয়ার চাপ—এসবকিছুই অনেক সময় গর্ভবতী নারীদের অস্থির করে তোলে। তিনি লেখেন, শরীরের সামনের অংশ ভারি হয়ে যাওয়ায় পিঠের হাড়ে চাপ পড়ে। এসব সামলাতে পারব কি না—এ নিয়ে শুরুতে নারীরা ভয় পান। কিন্তু যখন অনুভব করেন ভেতরে একটি প্রাণ নড়ে উঠছে, তখন ভয়টা কেটে যায়, ভালো লাগা তৈরি হয়। স্ট্রেচ মার্ক ও ওজন—অনেকের মনোকষ্টের কারণগর্ভাবস্থায় ত্বকে স্ট্রেচ মার্ক, হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি—এসব অনেক নারীর কাছে মানসিক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সন্তান জন্মের পরও এসব দাগ বহুদিন থেকে যেতে পা
গর্ভাবস্থায় নারীকে সবচেয়ে বেশি প্রস্তুত হতে হয় নিজের শরীর ও মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে—ফেসবুকে এমন মন্তব্য করেছেন গাইনি ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. সাবরিনা সুলতানা মিষ্টি।
তিনি বলেন, শরীরের ভেতরে একটি নতুন প্রাণ বেড়ে ওঠার অনুভূতি যতটা আনন্দের, ততটাই শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জে ভরা পুরো নয় মাস।
ডা. মিষ্টি জানান, গর্ভধারণের শুরুর দিকে অধিকাংশ নারীর খাবারের রুচি কমে যায়, মাথাব্যথা ও অবসাদ দেখা দেয়। চার মাস থেকে শরীরের দৃশ্যমান পরিবর্তন—পেট বড় হওয়া, ওজন বৃদ্ধি, রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে না পারা, পিঠব্যথা, বারবার টয়লেটে যাওয়ার চাপ—এসবকিছুই অনেক সময় গর্ভবতী নারীদের অস্থির করে তোলে।
তিনি লেখেন, শরীরের সামনের অংশ ভারি হয়ে যাওয়ায় পিঠের হাড়ে চাপ পড়ে। এসব সামলাতে পারব কি না—এ নিয়ে শুরুতে নারীরা ভয় পান। কিন্তু যখন অনুভব করেন ভেতরে একটি প্রাণ নড়ে উঠছে, তখন ভয়টা কেটে যায়, ভালো লাগা তৈরি হয়।
স্ট্রেচ মার্ক ও ওজন—অনেকের মনোকষ্টের কারণ
গর্ভাবস্থায় ত্বকে স্ট্রেচ মার্ক, হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি—এসব অনেক নারীর কাছে মানসিক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সন্তান জন্মের পরও এসব দাগ বহুদিন থেকে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।
হরমোন বদলেই এসব পরিবর্তন
ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন—দুটি হরমোনই গর্ভাবস্থার সব পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। প্রথম তিন মাস বাহ্যিক পরিবর্তন কম দেখা গেলেও ধীরে ধীরে—
হাড়ের সংযোগস্থল ঢিলা হওয়া,
পিঠব্যথা,
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস,
দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া,
শ্বাসকষ্ট,
রক্তশূন্যতা,
পায়ে ফোলাভাব,
রক্তচাপ বৃদ্ধি,
স্তনের আকার বৃদ্ধি,
এবং আরও বহু পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
মানসিক পরিবর্তনও তীব্র
ডা. মিষ্টি বলেন, গর্ভাবস্থায় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। একদিন ভালো লাগলেও অন্যদিন শরীর খারাপ থাকে। এতে মন খারাপ, রাগ, কান্না, খিটখিটে মেজাজ—সবই দেখা যেতে পারে।
নয় মাস কেমন যাবে, সন্তান সুস্থ হবে কি না, পরিবার কেমন সহায়তা দেবে—এসব অনিশ্চয়তা নারীর মনকে বিপর্যস্ত করে তোলে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
স্বামীর সহযোগিতা সবচেয়ে জরুরি
তিনি লেখেন, সন্তান শুধু মায়ের নয়, দু’জনের। স্ত্রী যদি মানসিক চাপে থাকে, তার প্রভাব শিশুর ওপরও পড়ে। তাই স্বামীর মানসিক সাপোর্ট খুব জরুরি।
গর্ভাবস্থায় যৌন মিলন বিষয়ে তিনি বলেন, শারীরিক জটিলতা না থাকলে এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে সমস্যার নয়, তবে যদি নারী না চান তবে তার সম্মান রাখা উচিত।
সুস্থ থাকার উপদেশ
গাইনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি গর্ভবতীদের জন্য কিছু পরামর্শ দেন—
সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার,
নিয়মিত হাঁটা বা উপযোগী ব্যায়াম,
চিৎ হয়ে না শুয়ে পাশ ফিরে শোয়া,
অন্তত চারবার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া,
ফলিক অ্যাসিড ও ক্যালসিয়াম গ্রহণ,
দাঁতের যত্ন,
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শখের কাজ করা।
সবশেষে তিনি বলেন, শরীর–মনের এই পরিবর্তনগুলো আগে থেকে জানা থাকলে গর্ভাবস্থার বড় চাপটুকু সামলানো সহজ হয়।
চেম্বার
ডা. সাবরিনা সুলতানা মিষ্টি প্রতিদিন রামপুরার ডেলটা হেলথ কেয়ার এবং সপ্তাহে তিনদিন মুন্সিগঞ্জের ইছাপুরা জেনারেল হাসপাতালে রোগী দেখেন।
এসইউজে/এমআরএম
What's Your Reaction?