জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্ট হতে পারে ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটার’

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনটি একসময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে সেই দুর্গ হাতছাড়া হয় বিএনপির। এবার নির্বাচনি মাঠে আওয়ামী লীগ নেই। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির সাধারণ ভোটাররা এ আসনে জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্ট হতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। আসনটিতে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলের টিকিট পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য এনামুল হক এনাম। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এনামুল হক এনাম বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। পটিয়া আসনে মাঠের রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান তেমন শক্তিশালী না হলেও বিগত কয়েকমাস ধরে সামাজিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে জামায়াত। ইতোমধ্যে একক প্রার্থী হিসেবে ন্যাশনাল ডক্টর ফোরামের (এনডিএফ) নেতা ডা. ফরিদুল আলমের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। ইউনিয়নে ইউনিয়নে ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পসহ গণসংযোগ করছেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকসহ দেশের সমালোচিত শিল্পগ্রুপ এস আলমকেন্দ্রিক কয়েকটি ব্যাংকের কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরিচ্যুতির কারণে পটিয়ায় ভোটের মাঠে বেকায়দায় পড়েছেন জামায়াতের প্রার্থী। চাকরিচ্যুত অনেকের দাবি,

জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্ট হতে পারে ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটার’

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনটি একসময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে সেই দুর্গ হাতছাড়া হয় বিএনপির। এবার নির্বাচনি মাঠে আওয়ামী লীগ নেই। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির সাধারণ ভোটাররা এ আসনে জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্ট হতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।

আসনটিতে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলের টিকিট পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য এনামুল হক এনাম। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও এনামুল হক এনাম বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নেন।

পটিয়া আসনে মাঠের রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান তেমন শক্তিশালী না হলেও বিগত কয়েকমাস ধরে সামাজিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে জামায়াত। ইতোমধ্যে একক প্রার্থী হিসেবে ন্যাশনাল ডক্টর ফোরামের (এনডিএফ) নেতা ডা. ফরিদুল আলমের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। ইউনিয়নে ইউনিয়নে ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্পসহ গণসংযোগ করছেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকসহ দেশের সমালোচিত শিল্পগ্রুপ এস আলমকেন্দ্রিক কয়েকটি ব্যাংকের কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরিচ্যুতির কারণে পটিয়ায় ভোটের মাঠে বেকায়দায় পড়েছেন জামায়াতের প্রার্থী। চাকরিচ্যুত অনেকের দাবি, জামায়াতের ইন্ধনেই ব্যাংকগুলোতে পটিয়ার লোকজনকে ছাঁটাই করা হয়েছে। যদিও চাকরিচ্যুতদের মধ্যে জামায়াতের নেতাকর্মীরা বাদ যায়নি।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে থাকলে ভোটারদের চিহ্নিত করা যেত। এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটাররা কোনদিকে যাচ্ছে সেটিও চ্যালেঞ্জের। তাছাড়া আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলেও সেক্ষেত্রে অদৃশ্য শক্তিকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিএনপিকে।–বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন সমন্বয়কারী খোরশেদ আলম

স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলে বিএনপির সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জামায়াতের। অন্য দলগুলোর একাধিক প্রার্থীও নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী হিসেবে দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক ডা. এমদাদুল হক ও এলডিপির প্রার্থী হিসেবে এম এয়াকুব আলীর নাম দলীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদীও এ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে আলোচনায় রয়েছেন।

আরও পড়ুন
চট্টগ্রামের ১৬ আসন/গুলশানে বিএনপির সভায় ডাক না পেয়ে হতাশ অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী
ইসির সামনে একই দিনে দুই ভোট করার ‘চ্যালেঞ্জ’
ঢাকা-১৮/বিএনপিতে দোলাচল, এনসিপি থেকে আলোচনায় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

বিএনপির প্রার্থী এনামুল হক এনামের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে নির্বাচনে তার প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামনের নির্বাচন বিএনপির জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। তারেক রহমানও সামনের নির্বাচনকে বিএনপির জন্য কঠিন এক পরীক্ষা বলে উল্লেখ করেছেন। সেক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থীকে আমরা সহজ হিসেবে দেখছি না।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনে থাকলে ভোটারদের চিহ্নিত করা যেত। এখন আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটাররা কোনদিকে যাচ্ছে সেটিও চ্যালেঞ্জের। তাছাড়া আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলেও সেক্ষেত্রে অদৃশ্য শক্তিকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিএনপিকে। এ নির্বাচন শুধু ব্যালটে সিল মারার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। ভোটের আগে থেকে নানান কৌশল ও ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’

মাঠে এবার জামায়াতের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘পটিয়া বিএনপির দুর্গ। তারপরেও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াত ভিন্ন অবয়বে হাজির হয়েছে। যদিও পটিয়ায় জামায়াতের অবস্থান তেমন শক্ত নয়। নির্বাচনে আমরা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীকে দুর্বল মনে করছি না। পুরো নির্বাচনটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের।’

ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের ৮২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এসব শেয়ার বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। জামায়াত এসব শেয়ার নেয়নি। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের হটকারি সিদ্ধান্তের কারণে পটিয়ার ছেলেমেয়েদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।- জামায়াতের প্রার্থী ডা. ফরিদুল আলম

দলীয় কোন্দলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভোটের আগে নানান মত থাকতে পারে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সবাই মনোনয়নও চাইতে পারে। কিন্তু ধানের শীষের পক্ষে বিএনপির সবাই এক ও অভিন্ন। দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী ঘোষণা দেওয়ার পর এনামুল হক এনাম ভাই ইদ্রিস মিয়া, গাজী শাহজাহান জুয়েলের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করেছেন। তাদের পরামর্শ-সহযোগিতা চেয়েছেন। তারাও ধানের শীষকে জয়ী করার বিষয়ে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।’

জামায়াতের প্রার্থী ডা. ফরিদুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে আমরা সাধারণ ভোটারদের ঘরে ঘরে যাচ্ছি। বিশেষ করে জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে পটিয়ার ১৭ ইউনিয়নে এবং পৌরসভায় ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প করছি। প্রতি সপ্তাহে একেক ইউনিয়নে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। চিকিৎসা ক্যাম্প সামনে রেখে পুরো ইউনিয়নে মাইকিং করা হয়। লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে এবং জামায়াতের নেতাকর্মীরা এলাকায় দাঁড়িপাল্লার পক্ষে গণসংযোগ করছেন।’

এস আলমকেন্দ্রিক ব্যাংকগুলো থেকে চাকরিচ্যুতির বিষয়ে জামায়াতের হস্তক্ষেপ রয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের ৮২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এসব শেয়ার বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। জামায়াত এসব শেয়ার নেয়নি। এখানে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের হটকারি সিদ্ধান্তের কারণে পটিয়ার ছেলেমেয়েদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। জামায়াতের হস্তক্ষেপ থাকার বিষয়টি সঠিক নয়। ইসলামী ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুতদের মধ্যে জামায়াতের কয়েকশ নেতাকর্মীও রয়েছেন। আমার নিজের আত্মীয়-স্বজনও চাকরিচ্যুত হয়েছেন। তবে জামায়াত সরকারে গেলে সবার চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘পটিয়ায় নানাবিধ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ইতোমধ্যে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়েছি। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সুবাদে এনডিএফ’র মাধ্যমে তদবিরে ইতোমধ্যে একনেক সভায় পটিয়া হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে।’

‘সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব কমে এসেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা পটিয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। জামায়াতের কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণার বিষয়ে তাদের অবগত করা হয়েছে। কোনো ধর্মের লোকজনের সঙ্গে ধর্মীয় কোনো ভেদাভেদ জামায়াতের মধ্যে নেই- সেটি বোঝানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সারাদেশে একটি বিপ্লব সূচিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে শিবিরের ছেলেরা জয়ী হয়ে এসেছেন। এটির ইতিবাচক প্রভাব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।’

ভোটের হিসাব-নিকাশ

প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটারের এ আসনে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ চৌধুরী মন্টু এ আসন থেকে জয়ী হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল জয়ী হন।

২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপি সরকার গঠন করে। জয়ী হন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সামশুল হক চৌধুরী গাজী মোহাম্মদ শাহজাহানকে হারিয়ে জয়ী হন। ২০১৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের দখলে।

এমডিআইএইচ/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow