ধূমপায়ীর ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকলেও ফুসফুসে ক্যানসার হতে পারে

ফুসফুসের ক্যানসার আজকাল দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। তবে প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে সময়মতো চিকিৎসা নিলে রোগ প্রতিরোধ ও জীবন রক্ষা উভয়ই সম্ভব। ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি, কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের রেসপিরেটরি ও নিউরোলজি বিভাগের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ও ইনচার্জ ডা. ইমরান রহমান তূর্জ। ১. ফুসফুসের ক্যানসার আসলে কী? ডা. ইমরান রহমান তূর্জ: ফুসফুসের ক্যানসার হলো এমন একটি রোগ, যেখানে ফুসফুসের টিস্যুগুলোতে কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটে। সাধারণত, শরীরের কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট নিয়মে বৃদ্ধি পায়, বিভক্ত হয় এবং মারা যায়। কিন্তু ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয় এবং কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে, যা একসময় টিউমার তৈরি করে। ২. কোন কোন কারণ ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বাড়ায়? ডা. ইমরান রহমান তূর্জ: তামাক বা ধূমপান ফুসফুস ক্যানসারে মৃত্যুর প্রধান কারণ। সিগারেট, বিড়ি, ভেপ বা অন্য কোনো তামাকজাত পণ্য সেবন ফুসফুসের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যানসারে মৃত্যুর জন্য

ধূমপায়ীর ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকলেও ফুসফুসে ক্যানসার হতে পারে

ফুসফুসের ক্যানসার আজকাল দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। তবে প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে সময়মতো চিকিৎসা নিলে রোগ প্রতিরোধ ও জীবন রক্ষা উভয়ই সম্ভব।

ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি, কারণ, লক্ষণ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের রেসপিরেটরি ও নিউরোলজি বিভাগের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ও ইনচার্জ ডা. ইমরান রহমান তূর্জ

১. ফুসফুসের ক্যানসার আসলে কী?

ডা. ইমরান রহমান তূর্জ: ফুসফুসের ক্যানসার হলো এমন একটি রোগ, যেখানে ফুসফুসের টিস্যুগুলোতে কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঘটে। সাধারণত, শরীরের কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট নিয়মে বৃদ্ধি পায়, বিভক্ত হয় এবং মারা যায়। কিন্তু ক্যানসারের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয় এবং কোষগুলো অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে, যা একসময় টিউমার তৈরি করে।

২. কোন কোন কারণ ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বাড়ায়?

ডা. ইমরান রহমান তূর্জ: তামাক বা ধূমপান ফুসফুস ক্যানসারে মৃত্যুর প্রধান কারণ। সিগারেট, বিড়ি, ভেপ বা অন্য কোনো তামাকজাত পণ্য সেবন ফুসফুসের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যানসারে মৃত্যুর জন্য দায়ী ধূমপান।

ধূমপায়ীর ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকলেও ফুসফুসে ক্যানসার হতে পারে

৩. ধূমপান ছাড়া অধূমপায়ীরাও কীভাবে আক্রান্ত হতে পারেন?

ডা. ইমরান রহমান তূর্জ: নিয়মিত ধূমপায়ীর ধোঁয়ার সংস্পর্শে আসলেও ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও নির্দিষ্ট কিছু রাসায়নিক, খনিজ কণা ও বায়ুদূষণের দীর্ঘমেয়াদী সংস্পর্শ ফুসফুসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে অ্যাসবেস্টস, আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম, নিকেল, বেরিলিয়াম, ক্যাডমিয়াম এবং কয়লা বা ডিজেল ইঞ্জিনের ধোঁয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

শহুরে বা শিল্প এলাকায় যানবাহন ও কারখানার ধোঁয়া থেকেও ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া সিওপিডি বা পালমোনারি ফাইব্রোসিসের মতো দীর্ঘমেয়াদী ফুসফুসের রোগ, পূর্বে বুকে বিকিরণ থেরাপি নেওয়া এবং নিকটাত্মীয়ের ফুসফুসের ক্যানসারের ইতিহাস থাকলেও ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি হতে পারে।

৪. ফুসফুসের ক্যানসারের সাধারণ কোন লক্ষণগুলো প্রথমে দেখা দেয়?

ডা. ইমরান রহমান তূর্জ: বারবার কাশি, কাশি বা কফের সঙ্গে রক্ত পড়া, হালকা পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট, গভীর শ্বাস বা কাশিতে বাড়ে এমন বুকে ব্যথা এবং কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকা কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন ফুসফুসের ক্যানসারের সাধারণ লক্ষণ। পাশাপাশি অকারণে ওজন কমে যাওয়া, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, ঘন ঘন বুকে সংক্রমণ ও শ্বাসে বাঁশির মতো শব্দ হলেও সতর্ক হওয়া জরুরি।

ধূমপায়ীর ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকলেও ফুসফুসে ক্যানসার হতে পারে

৫. জাগো নিউজ: বর্তমানে ফুসফুসের ক্যানসারের কী কী চিকিৎসা পদ্ধতি আছে?

ডা. ইমরান রহমান তূর্জ: ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে ক্যানসারের ধরণ, পর্যায় এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও নির্দিষ্ট জেনেটিক মিউটেশনের ওপর। প্রাথমিক পর্যায়ে সার্জারির মাধ্যমে টিউমার অপসারণ করা হয়। প্রয়োজনে লোবেকটমি, নিউমোনেকটমি বা ভ্যাটস ব্যবহার করা হয়। সার্জারি না হলে বা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিকিরণ থেরাপি দিয়ে ক্যানসার কোষ নষ্ট করা হয়।

কেমোথেরাপি শক্তিশালী ওষুধের মাধ্যমে কোষ ধ্বংস করে, যা সার্জারির আগে বা পরে কিংবা অগ্রসর স্টেজে ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে এসসিএলসি-তে। নির্দিষ্ট জেনেটিক মিউটেশন থাকলে লক্ষ্যযুক্ত থেরাপি সরাসরি ক্যানসার কোষকে টার্গেট করে। এছাড়া ইমিউনোথেরাপি রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে ক্যানসার কোষ আক্রমণ করতে সাহায্য করে।

৬. চিকিৎসা শুরু করলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কতটা বাড়ে?

ডা. ইমরান রহমান তূর্জ: ফুসফুসের ক্যানসারে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মূলত নির্ভর করে ক্যানসার কোন পর্যায়ে ধরা পড়েছে এবং কত দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়েছে তার ওপর।

ধূমপায়ীর ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকলেও ফুসফুসে ক্যানসার হতে পারে

৭. একজন মানুষ কীভাবে ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারেন?

ডা. ইমরান রহমান তূর্জ: ফুসফুসের ক্যানসার প্রতিরোধে জরুরি হলো ধূমপান ত্যাগ করা। সিগারেট, বিড়ি, হুঁকা বা যে কোনো তামাক বাদ দিলে ঝুঁকির হার কমে যায়। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে অ্যাসবেস্টস, আর্সেনিক, ক্রোমিয়াম বা রেডনের মতো ক্ষতিকারক পদার্থে এক্সপোজার হলে 'পিপিই' ব্যবহার ও নিরাপত্তা মানা জরুরি। সঙ্গে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং অ্যালকোহল পরিহার উপকারী। বায়ুদূষণ বেশি হলে বাইরে কম থাকা এবং ঘরে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখাও উপকার দেয়।

৮. রোগী ও তাদের পরিবারের প্রতি আপনার প্রধান পরামর্শ কী থাকবে?

ডা. ইমরান রহমান তূর্জ: ক্যানসার রোগীর পাশে থাকার জন্য প্রথমে রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক তথ্য নিন এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিন। প্রতিটি ভিজিটে প্রশ্ন করুন এবং প্রয়োজনে দ্বিতীয় মতামত নিন। রোগীর মানসিক শক্তি ধরে রাখতে খোলামেলা আলোচনা করুন, প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সাহায্য নিন।

চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সামলাতে ডাক্তারি নির্দেশ মেনে চলুন। এছাড়াও পুষ্টি ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন। রোগীকে স্বাভাবিক দৈনন্দিন কার্যকলাপে অংশগ্রহণে উৎসাহ দিন। সব রিপোর্ট, ওষুধ ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট গুছিয়ে রাখুন, পরিবারের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করুন। মনে রাখবেন, পরিবারের ভালোবাসা রোগীর সবচেয়ে বড় শক্তি।

এএমপি/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow