নরসিংদীতে ভূমিকম্পের পর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মানুষ

ভূমিকম্পের ভয়াবহতা এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে নরসিংদীবাসী। উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় আবারও কম্পনের আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। স্মরণকালের এই শক্তিশালী ভূকম্পনে বাবা-ছেলেসহ ৫ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে এ জেলায়। পাশাপাশি, ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ক্ষয়ক্ষতি এবং বিভিন্ন স্থাপনায় ফাটল ধরায় জেলার জনজীবনে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদীতে বলে জানিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিএস অনুযায়ী, কেন্দ্রস্থল নরসিংদী সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা গ্রাম, যা ঘোড়াশাল পৌর শহরের কাছাকাছি। এই অঞ্চলের মানুষগুলোই ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভূমিকম্পের সময় ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নরসিংদী শহরের গাবতলী এলাকার নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে এক তলা বাড়ির ওপর পড়লে বাড়ির মালিক দেলোয়ার, তার ছেলে ওমর ও মেয়ে তাসফিয়া আহত হন। দেলোয়ার ও তার ছেলেকে ঢাকায় নেওয়ার পর তারা মারা যান। মোট ৫ জন নিহত ও কমপক্ষে শতাধিক ল

নরসিংদীতে ভূমিকম্পের পর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মানুষ

ভূমিকম্পের ভয়াবহতা এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে নরসিংদীবাসী। উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় আবারও কম্পনের আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। স্মরণকালের এই শক্তিশালী ভূকম্পনে বাবা-ছেলেসহ ৫ জন নিহতের ঘটনা ঘটেছে এ জেলায়। পাশাপাশি, ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ক্ষয়ক্ষতি এবং বিভিন্ন স্থাপনায় ফাটল ধরায় জেলার জনজীবনে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।

দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদীতে বলে জানিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিএস অনুযায়ী, কেন্দ্রস্থল নরসিংদী সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা গ্রাম, যা ঘোড়াশাল পৌর শহরের কাছাকাছি। এই অঞ্চলের মানুষগুলোই ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভূমিকম্পের সময় ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নরসিংদী শহরের গাবতলী এলাকার নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে এক তলা বাড়ির ওপর পড়লে বাড়ির মালিক দেলোয়ার, তার ছেলে ওমর ও মেয়ে তাসফিয়া আহত হন। দেলোয়ার ও তার ছেলেকে ঢাকায় নেওয়ার পর তারা মারা যান। মোট ৫ জন নিহত ও কমপক্ষে শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।

এছাড়া ভূমিকম্পে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনের একটি ট্রান্সফরমারে আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অপর ট্রান্সফরমারগুলোর বেশিরভাগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অন্যদিকে ঘোড়াশাল বাজারের বিভিন্ন ভবনের ছাদ থেকে দেয়ালের ইট পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘোড়াশাল এলাকার ছয়টি বাড়ি এবং এস এ প্লাজা নামে একটি সাততলা শপিং মলে ফাটল ধরেছে। নরসিংদী শহর, মাধবদী, পলাশ ও ঘোড়াশালে একাধিক ভবন হেলে পড়ার খবরও পাওয়া গেছে।

নরসিংদীতে ভূমিকম্পের পর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মানুষ

পলাশে প্রত্যক্ষদর্শী রফিক আহমেদ বলেন, ভূমিকম্পের সময় নদীর পানি অনেক ওপরে উঠে প্রচণ্ড ঢেউ তুলেছিল। আমরা অনেক ভয় পেয়েছিলাম। অনেকক্ষণ পর বুঝতে পেরেছি ভূমিকম্প হয়েছে। তবে জীবনে এমন কম্পন আর কখনো দেখিনি।

আবদুল সাত্তার নামে এক শ্রমিক জানান, আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি। মনে করেছিলাম, বাইরে কোনো ভারী লরি যাচ্ছে। পরে দেখি কারখানার সব ভবন কাঁপছে। এরপর সবাই দৌড়াদৌড়ি করে বের হতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। ভয়ে জ্ঞান হারান আরও কয়েকজন।

পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের পাশের দোকানদার ফজলু মিয়া বলেন, ভূমিকম্পের সময় হঠাৎ বিকট শব্দে মাটিসহ সব কাঁপতে থাকে। কিছুক্ষণ পরই কলেজের গেটের ভেতর মাটি সরে গিয়ে ফাটল দেখতে পাই। এমন ঘটনা আর কোনোদিন দেখিনি। ঠিক একই অনুভূতি ছিল পুরো নরসিংদীবাসীর মনে। এখনও ভয় পাচ্ছে– যদি আবার এমন হয়।

নরসিংদীতে ভূমিকম্পের পর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মানুষ

এদিকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় মাটির প্রকৃতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। শনিবার (২২ নভেম্বর) সকালে ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ঘোড়াশাল ডেইরি ফার্ম ও পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আ.স.ম ওবায়দুলাহর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি টিম ধসে পড়া মাটির নমুনা সংগ্রহ করে।

ড. ওবায়দুলাহ জানান, প্রাথমিকভাবে তারা ফাটল ধরা মাটির নমুনা সংগ্রহ করছেন। এসব নমুনা পরীক্ষার পর ভূমিকম্পের প্রকৃতি বা গভীরতা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের বিষয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপেনর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামীকালের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের সব তথ্য পেয়ে যাবো।

তিনি বলেন, নিহতদের দাফনের ব্যবস্থাসহ ২৫ হাজার টাকা করে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সঞ্জিত সাহা/কেএইচকে/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow