নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে সেই চিকিৎসক বললেন ‘আমারও বেয়াদবি হয়েছে’
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়ার পর তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। রোববার (৭ ডিসেম্বর) হাসপাতাল পরিচালকের কাছে নোটিশের জবাব দেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ (ডিসি বর্মণ) বিষয়টি নিশ্চিত করে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘ডিজি বয়স্ক মানুষ, আমারও বেয়াদবি হয়েছে। শোকজের জবাবে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি।’ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাইনউদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা ওই চিকিৎসককে শোকজ করেছি, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। এরইমধ্যে তিনি শোকজের জবাব দিয়েছেন। তার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।’ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের ইনচার্জ হিসেবে ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট থেকে দায়িত্ব পালন করছেন ধনদেব চন্দ্র বর্মণ। চলতি বছরের জুলাই মাসে আবাসিক সার্জন থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান তিনি। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত একটি সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যো
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়ার পর তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) হাসপাতাল পরিচালকের কাছে নোটিশের জবাব দেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ (ডিসি বর্মণ)
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘ডিজি বয়স্ক মানুষ, আমারও বেয়াদবি হয়েছে। শোকজের জবাবে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি।’
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাইনউদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা ওই চিকিৎসককে শোকজ করেছি, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। এরইমধ্যে তিনি শোকজের জবাব দিয়েছেন। তার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।’
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের ইনচার্জ হিসেবে ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট থেকে দায়িত্ব পালন করছেন ধনদেব চন্দ্র বর্মণ। চলতি বছরের জুলাই মাসে আবাসিক সার্জন থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান তিনি।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত একটি সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে আসেন স্বাস্থ্যের ডিজি অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। সেমিনারে যোগ দেওয়ার আগে তিনি বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এসময় হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটার পরিদর্শনে গিয়ে ডিজি কক্ষের ভেতরে টেবিল থাকার কারণ জানতে চান চিকিৎসকদের কাছে। এসময় জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ধনদেব চন্দ্র বর্মণ তার সঙ্গে তর্কে জড়ান।
এখানে টেবিল কেন? ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে জিগ্যেস করেন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর। টেবিলে লিখতে হয় বলে জানান ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ।
মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ‘রোগীর চাপ আছে, তাই বলে ওটির কক্ষ তো হাটবাজারের মতো হলে হবে না। লিখতে হয় মানে? কথাবার্তা ঠিক করে বলবেন? হু আর ইউ?’ ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আই অ্যাম ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ।’ মহাপরিচালক বলেন, ‘ইটস ওকে। দ্যাট ইজ নট দ্য ম্যাটার।’ ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘দ্যাট ইজ ম্যাটার।’ তখন মহাপরিচালক বলেন, ‘স্টপ, কন্ট্রোল ইওর মাউথ।’
এসময় ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘কিসের স্টপ? ‘পুলিশি ল্যাংগুয়েজে (ভাষায়) কথা বলবেন না। আমাকে সাসপেন্ড করেন, নো প্রবলেম।’ মহাপরিচালক বলেন, ‘যারা ডিজির সাথে এরকম আচরণ করে, তারা রোগীর সাথে কী আচরণ করে?’ আবারও উত্তর দিয়ে ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘আমি রোগীর সাথে অনেক ভালো আচরণ করি। কিন্তু যারা দ্বায়িত্বে আছে তাদের সাথে আমার ভালো আচরণ করার দরকার নেই। তিনদিন ট্রেনিং করলাম, আপনার (মহাপরিচালক) আসার কথা ছিল দুইদিন। আপনি একদিনও আসেননি।’ তখন মহাপরিচালককে বলেন, ‘সেটাতো অন্য কথা। তুমি এরকম কথা বলছো কেন?’
এসময় মহাপরিচালক ওই চিকিৎসককে বহিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে যান।
এ সময় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন খানসহ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার পর অব্যাহতি পাওয়া চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ দেশের চিকিৎসা সেবা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেন। তিনি দেশের স্বাস্থ্যসেবা ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলছে’ বলে মন্তব্য করেন। সেইসঙ্গে ১৭ বছর পদোন্নতি না পাওয়ার কারণও তুলে ধরেন।
এদিকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অসদাচরণ করায় ঘটনার দিন বিকেলেই ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে শোকজ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। নোটিশের জবাব ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিতে বলা হয়।
দীর্ঘ সময়ে ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ কেন পদোন্নতি পাননি, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরে ধনদেব বর্মণ কোনো পদোন্নতি পাওয়ার প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি। পদোন্নতির একটি ক্রাইটেরিয়া হলো বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন জমা দেওয়ার। সেক্ষেত্রেও তার অবহেলা ছিল। পদোন্নতির আবেদন করেননি ডা. ধনদেব বর্মণ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, অবহেলা করে চিকিৎসক ধনদেব বর্মণ ফাউন্ডেশন ট্রেনিং করেননি, ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষায় পাস করেননি, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষাই দেননি। পদোন্নতির ক্রাইটেরিয়াগুলো তিনি পূর্ণ করেননি। তাই আওয়ামী সরকার তাকে পদোন্নতি দেয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকে ইনসিটু পদোন্নতি দিয়েছে। চলতি বছরের ২৯ জুলাই সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান ধনদেব বর্মণ।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এসআর
What's Your Reaction?