ফার্স্ট লেডি থেকে প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়ার ১০ রেকর্ড
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালে ভারতের জলপাইগুড়িতে (ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তর দিনাজপুর) জন্ম নেন। তবে তার বাবার আদি নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজীতে। বাবা ব্যবসায়ী ইস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার। খালেদা জিয়ার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরের মুদিপাড়া গ্রামে।
স্বামী জিয়াউর রহমান দেশের রাষ্ট্রপতি হলেও রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিক পরিক্রমায় জিয়া হত্যার পর দলের নেতাকর্মীর আহ্বানে বিএনপির হাল ধরেন তিনি। নীতি ও আদর্শে অটুট থাকায় তিনি আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া এক অনন্য ও অবিস্মরণীয় নাম। প্রায় চার দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ক্ষমতার উত্থান-পতন দেখেছেন, কারাবরণ করেছেন, নানামুখী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন—তবু নির্বাচনের মাঠে ছিলেন ধারাবাহিকভা
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালে ভারতের জলপাইগুড়িতে (ব্রিটিশ ভারতের বৃহত্তর দিনাজপুর) জন্ম নেন। তবে তার বাবার আদি নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজীতে। বাবা ব্যবসায়ী ইস্কান্দার মজুমদার ও মা তৈয়বা মজুমদার। খালেদা জিয়ার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনাজপুরের মুদিপাড়া গ্রামে।
স্বামী জিয়াউর রহমান দেশের রাষ্ট্রপতি হলেও রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিক পরিক্রমায় জিয়া হত্যার পর দলের নেতাকর্মীর আহ্বানে বিএনপির হাল ধরেন তিনি। নীতি ও আদর্শে অটুট থাকায় তিনি আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়া এক অনন্য ও অবিস্মরণীয় নাম। প্রায় চার দশকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ক্ষমতার উত্থান-পতন দেখেছেন, কারাবরণ করেছেন, নানামুখী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন—তবু নির্বাচনের মাঠে ছিলেন ধারাবাহিকভাবে অপরাজেয়। সদ্যপ্রয়াত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু রাজনৈতিক রেকর্ড ও রাষ্ট্রীয় অবদান রেখে গেছেন, যা তাকে সমসাময়িক সব নেতার চেয়ে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
নির্বাচনী সাফল্য থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনায় নেওয়া যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত—সব মিলিয়ে তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার আজ ইতিহাসের অংশ। নিচে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিরল ১০টি রেকর্ড তুলে ধরা হলো—
১. নির্বাচনে কখনোই পরাজিত না হওয়া
বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বিস্ময়কর রেকর্ড হলো—তিনি কখনোই কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনসহ) তিনি মোট ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং প্রতিটিতেই বিজয় লাভ করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতগুলো ভিন্ন আসনে দাঁড়িয়ে শতভাগ জয়ের নজির আর কোনো নেতার নেই।
২. ফার্স্ট লেডি থেকে প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র নারী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া একই সঙ্গে ‘ফার্স্ট লেডি’ এবং পরবর্তীতে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। স্বামী জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে তিনি ছিলেন ফার্স্ট লেডি, আর পরে নিজ যোগ্যতায় রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে অধিষ্ঠিত হন। গৃহবধূ থেকে রাষ্ট্রনায়কে রূপান্তরের এই গল্প বিশ্ব রাজনীতিতেও বিরল।
৩. পাঁচ আসনে জয়ের ‘হ্যাটট্রিক’
এক সময় নির্বাচনী আইন অনুযায়ী একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতেন। খালেদা জিয়া ১৯৯১, ১৯৯৬ (জুন) ও ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রতিবারই পাঁচটি করে মোট ১৫টি আসনে প্রার্থী হয়ে সবকটিতে জয়লাভ করেন। পাঁচ আসনে টানা তিনবার জয়ের এই ‘হ্যাটট্রিক’ বাংলাদেশের ইতিহাসে একেবারেই অনন্য। পরে আইন পরিবর্তনের পর ২০০৮ সালে তিনি তিনটি আসনে দাঁড়িয়ে তিনটিতেই বিজয়ী হন।
৪. ছয় ভিন্ন জেলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত
দেশের শীর্ষ নেতারা সাধারণত নিজ জেলা বা রাজধানী কেন্দ্রিক রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকেন। কিন্তু খালেদা জিয়া বগুড়া, ফেনী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও খুলনা—দেশের ছয়টি ভিন্ন জেলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দেশের নানা প্রান্তের মানুষের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ার এই সর্বজনীন জনপ্রিয়তার রেকর্ড বিরল।
৫. সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের কারিগর
১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু ছিল। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া ঐতিহাসিক দ্বাদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে দেশকে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরিয়ে আনেন। তিনি চাইলে রাষ্ট্রপতি শাসন বজায় রেখে একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করতে পারতেন, কিন্তু গণতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্র সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেন—যা তার অন্যতম বড় রাজনৈতিক উত্তরাধিকার।
৬. নারী শিক্ষায় বৈপ্লবিক উদ্যোগ
খালেদা জিয়ার সরকারের অন্যতম যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল নারী শিক্ষার প্রসারে অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালু করা। তার আমলেই দশম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এই উদ্যোগ নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে এবং আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত করে।
৭. মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠা
২০০১ সালে খালেদা জিয়ার সরকার প্রথমবারের মতো ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা করে। স্বাধীনতার তিন দশক পর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা ও পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় গঠন ছিল রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও মর্যাদার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
৮. পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন নিষিদ্ধ
২০০২ সালে তার সরকার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। বিশ্বে প্রথম দিকের দেশগুলোর একটি হিসেবে বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।
৯. সার্কের প্রথম নারী চেয়ারপারসন
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর ইতিহাসে প্রথম নারী চেয়ারপারসন ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯২ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন, যা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
১০. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর গঠিত স্বল্পস্থায়ী সংসদে খালেদা জিয়া বিরোধী দলের দাবি মেনে নিয়ে ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস করেন। এর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের অংশ হয়। ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে সংবিধান সংশোধনের এই দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল।