ভবন আছে শিক্ষক নেই, এক কক্ষেই চলে ৩ ক্লাসের পাঠদান

চারপাশে সবুজ মাঠ আর শান্ত পরিবেশ। মাঝে সরকারি অর্থায়নে তৈরি ঝলমলে রঙিন ভবন। আছে একাধিক কক্ষ আর আধুনিক শিক্ষা উপকরণ। কিন্তু সব আয়োজনই ম্লান হয়ে গেছে শিক্ষক সংকটে। লালমনিরহাটের ধবলগুড়ি চতুরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন ভবন আছে, কিন্তু পড়ানোর মানুষ নেই। মাত্র একজন শিক্ষকের কাঁধে এখন ১২০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। বাধ্য হয়ে এক কক্ষেই চলছে তিন শ্রেণির পাঠদান। এতে পাঠশালা নয়, বরং বিদ্যালয়টি যেন পরিণত হয়েছে এক জগাখিচুড়িতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ছয়টি ক্লাস এবং শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১২০ জন। অথচ শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুজন। তাদের মধ্যে একজন প্রধান শিক্ষক এবং অন্যজন সহকারী শিক্ষক। বর্তমানে একমাত্র সহকারী শিক্ষক প্রশিক্ষণে থাকায় পুরো স্কুল সামলানোর দায়িত্ব একা প্রধান শিক্ষকের কাঁধেই। ফলে বাধ্য হয়েই একাধিক শ্রেণির ক্লাস একসঙ্গে নিতে হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর এবং দুপুর থেকে বিকেল, দুই শিফটেই তিনটি করে শ্রেণি এক কক্ষে বসিয়ে পাঠদান চলছে। এতে শিশুদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে এবং শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকছে। সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, একই কক্ষে প্রথম শ্রে

ভবন আছে শিক্ষক নেই, এক কক্ষেই চলে ৩ ক্লাসের পাঠদান

চারপাশে সবুজ মাঠ আর শান্ত পরিবেশ। মাঝে সরকারি অর্থায়নে তৈরি ঝলমলে রঙিন ভবন। আছে একাধিক কক্ষ আর আধুনিক শিক্ষা উপকরণ। কিন্তু সব আয়োজনই ম্লান হয়ে গেছে শিক্ষক সংকটে। লালমনিরহাটের ধবলগুড়ি চতুরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন ভবন আছে, কিন্তু পড়ানোর মানুষ নেই। মাত্র একজন শিক্ষকের কাঁধে এখন ১২০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ। বাধ্য হয়ে এক কক্ষেই চলছে তিন শ্রেণির পাঠদান। এতে পাঠশালা নয়, বরং বিদ্যালয়টি যেন পরিণত হয়েছে এক জগাখিচুড়িতে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ছয়টি ক্লাস এবং শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১২০ জন। অথচ শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুজন। তাদের মধ্যে একজন প্রধান শিক্ষক এবং অন্যজন সহকারী শিক্ষক। বর্তমানে একমাত্র সহকারী শিক্ষক প্রশিক্ষণে থাকায় পুরো স্কুল সামলানোর দায়িত্ব একা প্রধান শিক্ষকের কাঁধেই। ফলে বাধ্য হয়েই একাধিক শ্রেণির ক্লাস একসঙ্গে নিতে হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর এবং দুপুর থেকে বিকেল, দুই শিফটেই তিনটি করে শ্রেণি এক কক্ষে বসিয়ে পাঠদান চলছে। এতে শিশুদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে এবং শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকছে।

সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, একই কক্ষে প্রথম শ্রেণির শিশু স্বরবর্ণ পড়ছে, পাশেই দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নামতা মুখস্থ করছে, আবার আরেক কোণে পঞ্চম শ্রেণির বাচ্চার বাংলা রিডিং পড়ছে। যেন এক কক্ষে তিনটি স্কুল চলছে। শিক্ষকের পক্ষে এই হট্টগোল সামলে পাঠদান করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ভবন আছে শিক্ষক নেই, এক কক্ষেই চলে ৩ ক্লাসের পাঠদান

এই অচলাবস্থায় সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত অভিভাবকরা। সামর্থ্যবানরা তাদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করালেও বিপাকে পড়েছেন অসচ্ছল পরিবারের অভিভাবকরা। তাদের দাবি, অবিলম্বে ধবলগুড়ি চতুরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। অন্যথায় ঝরে পড়ার হার বাড়বে এবং পিছিয়ে পড়বে এই জনপদের শিশুরা।

স্কুলটির দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তুবা আক্তার বলে, আমরা প্রথম, দ্বিতীয় ও শিশু শ্রেণি একসঙ্গে ক্লাস করছি। আমাদের মাত্র একজন ম্যাডাম (প্রধান শিক্ষক) ক্লাস নিচ্ছেন। আমাদের আরও স্যার-ম্যাডাম দরকার। এভাবে আমাদের পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আজিম হোসেন বলে, তিনটি শ্রেণির ক্লাস একসঙ্গে হওয়ার কারণে আমাদের খুব সমস্যা হয়। ছোট বাচ্চারা দুষ্টামি করে, এতে আমাদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের ঠিকমতো পড়ালেখা হচ্ছে না।

আরও পড়ুন
একাই সাড়ে চারশো শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক
প্রাথমিকে সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষকের মধ্যে সোয়া দুই লাখই নারী
প্রাথমিকে সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষকের মধ্যে সোয়া দুই লাখই নারী

এ বিষয়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, স্কুলের বর্তমান দশা খুবই করুণ। আমরা তিনজন শিক্ষক ছিলাম, একজন অক্টোবরে বদলি হয়ে গেছেন। বাকি যে সহকারী শিক্ষক আছেন, তিনিও বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেধা যাচাই পরীক্ষার ডিউটিতে আছেন। ছয়টি শ্রেণির ক্লাস একজন শিক্ষকের পক্ষে নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবুও আমি কষ্ট করে নিচ্ছি, কিন্তু এটি নিয়মের মধ্যে পড়ে না। আমি বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি।

ভবন আছে শিক্ষক নেই, এক কক্ষেই চলে ৩ ক্লাসের পাঠদান

পাটগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হামিদ সরকার বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি, শুধু ধবলগুড়ি নয়, উপজেলার আরও আটটি স্কুলে মাত্র দুজন করে শিক্ষক রয়েছেন। এমনকি কোনো কোনো স্কুলে একজন শিক্ষক দিয়েও চলছে। নতুন ইউএনও স্যার এসেছেন, ছুটির পর আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। জানুয়ারি মাস থেকে একটা ব্যবস্থা করা যাবে বলে আশা করছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক ঘাটতির বিষয়টি শুধু এই জেলা বা উপজেলার নয়, এটি সারা দেশের সমস্যা। শিক্ষক নিয়োগের জন্য সার্কুলার হয়েছে। আপাতত যে-সব স্কুলে শিক্ষক সংকট চরম, সেখানে পার্শ্ববর্তী স্কুল থেকে শিক্ষক এনে বা ডেপুটেশনের মাধ্যমে পাঠদান অব্যাহত রাখার নির্দেশনা আমাদের রয়েছে।

মহসীন ইসলাম শাওন/কেএইচকে/এএসএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow