ভুয়া পারমিটে ইতালিতে পাচার, আটক ৭

বৈধ উপায়ে ইতালিতে আনার নামে ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট ও জাল নথি বিক্রি করে কোটি টাকার ‘কালোবাজারি’ চালানো একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ ও অ্যান্টি-মাফিয়া ইউনিট (ডিডিএ)। চক্রটির প্রতারণার লক্ষ্যবস্তু মরক্কো, তিউনিশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা থেকে ইতালিতে আসতে চাওয়া অভিবাসীরা। ইতালি কর্তৃপক্ষের মতে, চক্রটি সরকারি দপ্তর ‘কাফ’ এর নামে অনিয়মিত অভিবাসীদের কাছ থেকে জনপ্রতি তিন হাজার থেকে ১০ হাজার ইউরো পর্যন্ত আদায় করতো। দেশটির গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, ২৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল এই জালিয়াতি চালাতো। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অভিবাসনে সহায়তা, রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা এবং নথি জাল করার অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত আটজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নজরদারি জোরদার করার আদেশ দিয়েছে। চক্রের সন্দেহভাজন অন্যতম প্রধানকে কারাগারে, পাঁচজনকে গৃহবন্দি ও দুইজনকে নিয়মিত পুলিশে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করা হলেও, একজন বিদেশে পালিয়ে আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কীভাবে চলতো ভুয়া অনুমতিপত্রের ব্যবসাপ্রায় ছয় মাসের তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ইতালির ইমোলা শহরে দুটি এব

ভুয়া পারমিটে ইতালিতে পাচার, আটক ৭

বৈধ উপায়ে ইতালিতে আনার নামে ভুয়া ওয়ার্ক পারমিট ও জাল নথি বিক্রি করে কোটি টাকার ‘কালোবাজারি’ চালানো একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ ও অ্যান্টি-মাফিয়া ইউনিট (ডিডিএ)। চক্রটির প্রতারণার লক্ষ্যবস্তু মরক্কো, তিউনিশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা থেকে ইতালিতে আসতে চাওয়া অভিবাসীরা।

ইতালি কর্তৃপক্ষের মতে, চক্রটি সরকারি দপ্তর ‘কাফ’ এর নামে অনিয়মিত অভিবাসীদের কাছ থেকে জনপ্রতি তিন হাজার থেকে ১০ হাজার ইউরো পর্যন্ত আদায় করতো।

দেশটির গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, ২৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল এই জালিয়াতি চালাতো। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অভিবাসনে সহায়তা, রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা এবং নথি জাল করার অভিযোগ আনা হয়েছে। আদালত আটজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের নজরদারি জোরদার করার আদেশ দিয়েছে।

চক্রের সন্দেহভাজন অন্যতম প্রধানকে কারাগারে, পাঁচজনকে গৃহবন্দি ও দুইজনকে নিয়মিত পুলিশে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করা হলেও, একজন বিদেশে পালিয়ে আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

কীভাবে চলতো ভুয়া অনুমতিপত্রের ব্যবসা
প্রায় ছয় মাসের তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ইতালির ইমোলা শহরে দুটি এবং মাসালোমবার্দা ও আনকোনা শহরে দুটি (উদ্বোধনের অপেক্ষায়) অফিস খুলে একটি ভুয়া ‘কাফ’ নামক অফিস পরিচালনা করতো চক্রটি।

ইতালির আলোচিত ফ্লুসি ডিক্রির ফাঁকফোকরকে কাজে লাগিয়ে তারা শত শত ভুয়া আবেদন পাঠাতো। বোলনিয়া, মিলান, সালার্নো ও ফগিয়াসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যালয়ে আবেদন সংখ্যা খুব বেশি হওয়ায় যাচাই-বাছাই কঠিন।

আইন অনুযায়ী, ইতালিতে বৈধ উপায়ে আসতে ইচ্ছুক অভিবাসীরা যারা ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করেন তাদের আবেদনের জবাব ৩০ দিনের মধ্যে না এলে সেটি গৃহীত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। মূলত আইনের এই ধারাকে চক্রটি কাজে লাগাতো। আবেদনের সঙ্গে যেখানে আসল নথি লাগার কথা, সেখানে তারা আপলোড করতো সাদা কাগজ, ভুয়া নথি বা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট।

চক্রের সদস্য কারা
পুলিশ বলছে, চক্রটির নেতৃত্বে ছিল আব্রুজ্জো অঞ্চলের বহুবার দণ্ডপ্রাপ্ত এক ইতালীয় নাগরিক। তার দুই ছেলে, বোলনিয়ার এক সহযোগী ও সিরিনিওলা অঞ্চলের এক নারী তাকে সহায়তা করতো।

এছাড়া আরও বেশ কিছু ইতালীয় ও বিদেশি মধ্যস্থতাকারী ছিল, যারা বিদেশি শ্রমিক খুঁজে আনতো বা ভুয়াভাবে নিজেদের কোম্পানিকে নিয়োগদাতা হিসেবে দেখিয়ে আবেদন জমা দিত। বাস্তবে এসব কোম্পানিতে কোনো কাজের সুযোগই ছিল না।

তদন্তে দেখা গেছে, চক্রটি প্রায় ৫০০ আবেদন জমা দেয়, যার মাধ্যমে মরক্কো, তিউনিশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের ইতালিতে ভুয়া মৌসুমি কাজের চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেওয়া হতো।

অনেক অভিবাসী সম্পূর্ণ অজান্তেই তিন থেকে ১০ হাজার ইউরো পর্যন্ত পরিশোধ করেন। একজন হলে যা কম এবং পরিবার হলে আরও বেশি।

গোপন ক্যামেরা ও ফোন–আড়িপাতায় বেরিয়ে আসে সত্য। ইতালি কর্তৃপক্ষ তিনটি স্তরে তদন্ত পরিচালনা করেছে।

নথি যাচাই: বোলনিয়া প্রিফেকচার ও আইএনআইএলের সহযোগিতায় শত শত ভুয়া আবেদন শনাক্ত করা হয়। ফোন ও অফিসে আড়িপাতা: কোম্পানির ভিতরে ক্যামেরা বসিয়ে দেখা হয়েছে সেখানে পাসপোর্ট জোগাড়, ভুয়া পারমিট তৈরি, নথি ভাগাভাগি ও মোটা অঙ্কের নগদ লেনদেন হচ্ছিল।

পরিচয় নিশ্চিতকরণ: শেষ পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ ও পরিচয় যাচাই সম্পন্ন করা হয়।

ইতালিতে অভিবাসীদের দুর্বলতার সুযোগ নেওয়া এমন চক্র এর আগেও বহুবার ধরা পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুযোগসন্ধানী অপরাধীরা মৌসুমি কাজের ভিসা বা নিয়মিত হওয়ার আশায় থাকা অভিবাসীদের টার্গেট করে থাকে।

সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস

এমআরএম/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow