মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এখন ‌গো-চারণ ভূমি

প্রতিষ্ঠার পর ১৬ বছর একটানা উৎপাদনে কর্মমুখর ছিল পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। প্রতিবছর উৎপাদন হতো পাঁচ হাজার কেজি পোনা ও দুই হাজার কেজি রেণু। কিন্তু এখন এটির বন্ধ্যাত্ব দশা। ২০১১ সালের পর দখলে নিয়ে প্রজনন কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ করে দেন সাবেক ডেপুটি স্পিকারের ছেলে ও বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন। গড়েন নিজস্ব গরুর খামার। গতবছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনে টুকু-রঞ্জনের দখলমুক্ত হলেও প্রাণ ফেরেনি মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটির। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও কার্যক্রম না থাকায় লুট হয়েছে সম্পদ। সুবিশাল এলাকা পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আখড়ায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রায় ৩৭ বিঘা জমি নিয়ে ১৯৯০ সালে পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সাঁথিয়ার নন্দনপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় যৌথ ব্যবস্থাপনায় প্রজনন মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটি গড়ে তোলে মৎস্য অধিদপ্তর। লক্ষ্য ছিল উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বাড়ানো। এজন্য খনন করা হয় ১০টি পুকুর। স্থাপন করা হয় পানি সরবরাহের পাঁচটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প, আধুনিক আলোকবাতি, হ্যাচারিসহ পোনা উৎপাদনের আধুনিক ব্যবস্থা। টানা ১৬ বছর উৎপাদনের পর মেয়

মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এখন ‌গো-চারণ ভূমি

প্রতিষ্ঠার পর ১৬ বছর একটানা উৎপাদনে কর্মমুখর ছিল পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। প্রতিবছর উৎপাদন হতো পাঁচ হাজার কেজি পোনা ও দুই হাজার কেজি রেণু। কিন্তু এখন এটির বন্ধ্যাত্ব দশা। ২০১১ সালের পর দখলে নিয়ে প্রজনন কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ করে দেন সাবেক ডেপুটি স্পিকারের ছেলে ও বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন। গড়েন নিজস্ব গরুর খামার।

গতবছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনে টুকু-রঞ্জনের দখলমুক্ত হলেও প্রাণ ফেরেনি মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটির। রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও কার্যক্রম না থাকায় লুট হয়েছে সম্পদ। সুবিশাল এলাকা পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আখড়ায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রায় ৩৭ বিঘা জমি নিয়ে ১৯৯০ সালে পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সাঁথিয়ার নন্দনপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় যৌথ ব্যবস্থাপনায় প্রজনন মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটি গড়ে তোলে মৎস্য অধিদপ্তর। লক্ষ্য ছিল উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বাড়ানো। এজন্য খনন করা হয় ১০টি পুকুর। স্থাপন করা হয় পানি সরবরাহের পাঁচটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প, আধুনিক আলোকবাতি, হ্যাচারিসহ পোনা উৎপাদনের আধুনিক ব্যবস্থা।

মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এখন ‌গো-চারণ ভূমি

টানা ১৬ বছর উৎপাদনের পর মেয়াদবৃদ্ধি না হওয়ায় ২০০৫ সালে বন্ধ হয়ে যায় ওই প্রকল্প। এরপর ডিম ও পোনা উৎপাদন বন্ধের পর এই কেন্দ্রের ওপর স্থানীয় প্রভাবশালীদের নজর পড়ে। ২০০৬ সালে মাছ চাষের জন্য সাঁথিয়া উপজেলা মৎস্য উন্নয়ন সমবায় সমিতি বার্ষিক ২৫ হাজার টাকায় পাঁচ বছরের জন্য এটি ইজারা নেয়।

সবশেষ ২০১১ সালে ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও তা আর নবায়ন করা হয়নি। একপর্যায়ে কেন্দ্রটি অবৈধ দখলে নিয়ে ব্যক্তিগত খামার গড়েন তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছেলে রঞ্জন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে পানি উন্নয়ন বোর্ড দখল ফিরে পেলেও বেহাল দশা কাটেনি প্রজনন কেন্দ্রটির।

সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় লুট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। স্থানীয় দস্যু ও মাদকসেবীরা খুলে নিয়ে গেছে অবকাঠামোর লোহা ও কাঠের দরজা জানালা। লুট হয়েছে সেচ পাম্প। চুরি হয়েছে মূল্যবান বৃক্ষ, সীমানা প্রাচীরের কাঁটাতার, অর্ধশত ফ্লাড লাইট ও বৈদ্যুতিক পোলসহ মূল্যবান সম্পদ।

ভরাট রয়েছে বেশিরভাগ পুকুর। বাকিগুলো শুকিয়ে গেছে। ঝোপ-ঝাড়ে এখন প্রজনন কেন্দ্রটিতে ভুতুড়ে পরিবেশ। এখন সেখানে গরু ও মাদকসেবীদের বিচরণ।

মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এখন ‌গো-চারণ ভূমি

স্থানীয়রা জানান, প্রকল্পের মেয়াদবৃদ্ধি না হওয়ায় সাবেক ডেপুটি স্পিকারপুত্র আসিফ শামস রঞ্জন দখলে নিয়ে এতে গরুর খামার স্থাপন করেন। তাদের ভয়ে কেউই পুনরায় এটি চালুর উদ্যোগ নেননি।

তারা আরও জানান, সাঁথিয়ায় কোনো হ্যাচারি না থাকায় বগুড়া ও সিরাজগঞ্জসহ দূর থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হয় মৎস্যজীবীদের। এতে খরচ ও ভোগান্তি বাড়ে। তাই আধুনিক পরিসরে দ্রুত এ প্রজনন কেন্দ্র চালুর দাবি তাদের।

চক নন্দনপুরের অতীত ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম বলেন, ‌‘দিনরাত এখানে মাদকসেবন চলে। এসবের জন্য এলাকার ছেলেপেলেও নষ্ট হচ্ছে। আবার সরকারি সম্পদ পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। একে পুনরায় চালু করা উচিত।’

স্থানীয় হাসিন, মনসুর ও জায়েদ হোসেন বলেন, ‘এটি এখন একটি বন্ধ্যা প্রতিষ্ঠান। ৫ আগস্টের পর এখানকার বিল্ডিংয়ের দরজা- জানালাসহ সব খুলে নিয়ে গেছে। অথচ এটি পুনরায় চালু হলে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা উপকৃত হবেন। মাছের উৎপাদন বাড়বে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’

মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র এখন ‌গো-চারণ ভূমি

এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামসুর রহমান বলেন, মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায়। লোকবল ও বরাদ্দ না থাকায় প্রজননকেন্দ্রটিতে কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। তবে আমাদের দায়িত্ব দিলে মাছের উৎপাদন বাড়াতে প্রজননকেন্দ্রটির কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, স্থানীয়রা এটি পুনরায় চালু করতে চান। সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেটি নেওয়া হবে।

এসআর/এএসএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow