যবিপ্রবিতে হয়নি-ক্লাস পরীক্ষা, উত্ত্যক্তকারী দোকানমালিক আটক

উত্ত্যক্তের জের ধরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনার পর উত্ত্যক্তকারী দোকানমালিককে আটক করেছে পুলিশ। সংঘর্ষের পর যবিপ্রবি ক্যাম্পাস ও এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও হয়নি কোনো ক্লাস-পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পদচারণাও ছিল কম। ঘটনার পর থেকে বাজারের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ রয়েছে। অনেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে দোকান বন্ধ রেখেছেন। ক্যাম্পাস কিংবা বাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন না থাকলেও পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে। আটক ব্যক্তি আমবটতলা বাজারের একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিং দোকানের মালিক। বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার (২৪ নভেম্বর) যবিপ্রবির এক নারী শিক্ষার্থী আমবটতলা বাজারে মুনায়েম হোসেন নামের এক যুবকের মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে যান। দোকানে তার মোবাইল সিম কার্ড খুলতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেন ওই শিক্ষার্থী। দোকানদার মেয়েটির প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে গিয়ে মেয়েটির হাত ধরেন এবং অশালীন ইঙ্গিত দিয়ে উত্ত্যক্ত করেন। বিষয়টি শিক্ষার্থী

যবিপ্রবিতে হয়নি-ক্লাস পরীক্ষা, উত্ত্যক্তকারী দোকানমালিক আটক

উত্ত্যক্তের জের ধরে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনার পর উত্ত্যক্তকারী দোকানমালিককে আটক করেছে পুলিশ। সংঘর্ষের পর যবিপ্রবি ক্যাম্পাস ও এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও হয়নি কোনো ক্লাস-পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করায় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পদচারণাও ছিল কম।

ঘটনার পর থেকে বাজারের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ রয়েছে। অনেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে দোকান বন্ধ রেখেছেন। ক্যাম্পাস কিংবা বাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন না থাকলেও পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে। আটক ব্যক্তি আমবটতলা বাজারের একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিং দোকানের মালিক।

বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার (২৪ নভেম্বর) যবিপ্রবির এক নারী শিক্ষার্থী আমবটতলা বাজারে মুনায়েম হোসেন নামের এক যুবকের মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে যান। দোকানে তার মোবাইল সিম কার্ড খুলতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেন ওই শিক্ষার্থী। দোকানদার মেয়েটির প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে গিয়ে মেয়েটির হাত ধরেন এবং অশালীন ইঙ্গিত দিয়ে উত্ত্যক্ত করেন। বিষয়টি শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের জানালে তারা মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দোকানদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যান। এক পর্যায়ে দোকানদারের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা দোকানদারকে মারধর করেন। এর জেরে স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে স্থানীয়রা মাইকে ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য এলাকাবাসীকে একত্রিত করেন। সংঘর্ষ চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ক্যাম্পাস এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাংবাদিকসহ আহত হন অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী। এসময় ক্যাম্পাসের এক সাংবাদিকের বাইসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:
স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে ৫ যবিপ্রবি শিক্ষার্থী আহত

ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। সংঘর্ষ শুরু হওয়ার তিন ঘণ্টা পরেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে না আসায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ বাড়ে। পরে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। রাত ৯টার পর সেনাসদস্য ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

যবিপ্রবি কেমিকৌশল বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, উত্ত্যক্তের বিষয়টি জানতে পেরে তারা দোকানদারের কাছে প্রশ্ন করতে গেলে স্থানীয়দের বড় একটি দল তাদের ওপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে পেছন থেকে ইট নিক্ষেপ করা হয়। ঘটনার পর ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দ্রুত বিচারের দাবিতে চৌগাছা-যশোর সড়কে টায়ার-বেঞ্চ জ্বালিয়ে দিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষকেও অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা।

যবিপ্রবিতে হয়নি-ক্লাস পরীক্ষা, উত্ত্যক্তকারী দোকানমালিক আটক

এদিকে দেরিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসাইন আল মামুনের পদত্যাগ দাবি করে প্রায় চার ঘণ্টা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে রাত দেড়টার দিকে জড়িতদের বিচারের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।

স্থানীয় চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এককাট্টা গ্রামবাসী। অনেক শিক্ষার্থী আমবটতলাতে এসে চা খেয়েও টাকা দেয় না বরং ঝাড়ি মারে। বাজারের এক দোকানদারকে শিক্ষার্থীরা মেরেছে। সেটার প্রতিবাদ করায় ছাত্ররা আগে হামলা করেছে। ঘটনার পর যে দোকানদারের সঙ্গে বিরোধ ছিল পুলিশ তাকে আটক করেছে। এখন বাজারে এক ধরনের গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে।’

বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যবিপ্রবির ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পদচারণা অনেক কম। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম করতে দেখা গেছে। আহতদের কয়েকজন ক্যাম্পাসের আরএম খান মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। আবার কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

সংঘর্ষের ঘটনাস্থল আমবটতলা বাজার বুধবার হাটের দিন থাকলেও বেশিরভাগ দোকান বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। সড়কের ওপর এখন ইট-পাটকেল পড়ে আছে।

এ বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমাদের প্রক্টরিয়াল বডিসহ অনেকে শিক্ষক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসতে দেরি করায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী আতঙ্কিত ও আহত। তাই বুধবার ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। শনিবার থেকে নিয়মিত ক্লাস চলবে।’

শিক্ষার্থীদের ওপর এলাকাবাসীর হামলা ‘নিন্দনীয়’ উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। বাজার কমিটির সঙ্গে বসে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে বিষয়ে আলোচনা করবো।’

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। একটি মামলায় অভিযুক্ত দোকানিকে আটক করা হয়েছে। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে আটক করা হবে না। ঘটনাস্থলে পুলিশের টহল অব্যাহত রেখেছে।’

মিলন রহমান/এসআর/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow