রাজশাহীতে আর কোনো পুকুর ভরাট হবে না : বিভাগীয় কমিশনার

রাজশাহীতে আর কোনো পুকুর ভরাট করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. অ ন ম বজলুর রশীদ।  বুধবার (২৬ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় ও স্মারকলিপি গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন। বিভাগীয় কমিশনার বলেন, রাজশাহী একসময় ‘পুকুরের শহর’ হিসেবে পরিচিত ছিল; কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহু পুকুর দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। আমরা ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। একটি ভরাট পুকুর পুনঃখননের কাজও শুরু হয়েছে। আমাদের পরিষ্কার সিদ্ধান্ত— রাজশাহীতে আর কোনো পুকুর ভরাট করা হবে না। নির্বাচনের পর যেসব পুকুর ভরাট হয়ে আছে, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। রাজশাহী নগরের চলমান উন্নয়নকাজে সৃষ্ট যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শহরের উন্নয়নকাজ একই সময়ে একাধিক স্থানে শুরু হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। আমি প্রকৌশলীদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্দেশনা দেব যে একসঙ্গে একাধিক কাজের বদলে একটির পর একটি কাজ শেষ করা হোক। এতে জনদুর্ভোগ কমবে। এ ছাড়া নগরের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ায় তিনি সিটি করপোরেশনকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে গাছ লাগানোর

রাজশাহীতে আর কোনো পুকুর ভরাট হবে না : বিভাগীয় কমিশনার

রাজশাহীতে আর কোনো পুকুর ভরাট করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. অ ন ম বজলুর রশীদ। 

বুধবার (২৬ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় ও স্মারকলিপি গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, রাজশাহী একসময় ‘পুকুরের শহর’ হিসেবে পরিচিত ছিল; কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহু পুকুর দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। আমরা ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। একটি ভরাট পুকুর পুনঃখননের কাজও শুরু হয়েছে। আমাদের পরিষ্কার সিদ্ধান্ত— রাজশাহীতে আর কোনো পুকুর ভরাট করা হবে না। নির্বাচনের পর যেসব পুকুর ভরাট হয়ে আছে, সেগুলো নিয়েও আমরা আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

রাজশাহী নগরের চলমান উন্নয়নকাজে সৃষ্ট যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শহরের উন্নয়নকাজ একই সময়ে একাধিক স্থানে শুরু হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। আমি প্রকৌশলীদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্দেশনা দেব যে একসঙ্গে একাধিক কাজের বদলে একটির পর একটি কাজ শেষ করা হোক। এতে জনদুর্ভোগ কমবে।

এ ছাড়া নগরের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ায় তিনি সিটি করপোরেশনকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে গাছ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আমি বলেছি, আপনাদের কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা আপনাদেরই পুষিয়ে দিতে হবে। ৫০ মিটার এলাকায় ফুলের গাছ ও পরবর্তী ৫০ মিটারে বড় গাছ লাগাতে হবে।

বিভাগীয় কমিশনার জানান, পদ্মা, শিব, বারন, হুজা, মালঞ্চ, বড়াল, নারদসহ রাজশাহীর বহু নদী দখল ও ভরাট হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। আপনারা সহযোগিতা করলে এসব নদী উদ্ধার করা সম্ভব। নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর পানি সম্পদ উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশব্যাপী বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আট বিভাগে ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ নদী চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রাজশাহী বিভাগের ৪টি নদী রয়েছে। রাজশাহী নগরের উপকণ্ঠে বারনয় নদীও এ তালিকায় আছে।

তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে একটি ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলেই চার বিভাগে একই সময়ে নদী দখল–দূষণমুক্ত করার অভিযান শুরু হবে। পরে পর্যায়ক্রমে ড্রেজিং কার্যক্রম চালানো হবে।

অনুষ্ঠানের শেষে বাপা ও রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বিভাগীয় কমিশনারকে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, পদ্মা তীরবর্তী রাজশাহী অঞ্চলের নদী, খাল ও জলাশয় অবৈধ দখল, দূষণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নজরদারির অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। নাব্যতা কমে যাওয়ায় সাম্প্রতিক বর্ষণে জলাবদ্ধতা ও কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে— অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন, নদীর প্রবাহ হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পানির স্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে।

স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, পদ্মা নদীর পাড় দখল, চর গঠন ও দূষণের কারণে সম্ভাব্য নৌবন্দর নির্মাণ হুমকির মুখে পড়তে পারে। পদ্মা ছাড়া অন্যকোনো নদীতে নৌযান চলাচল নেই; অনেক নদী ভরাট, দখল ও বর্জ্য ফেলার কারণে কার্যত অস্তিত্ব সংকটে। ছোট ব্রিজ, আড়াআড়ি বাঁধ, পলিথিন বর্জ্য ও অবৈধ স্থাপনার কারণে নদীগুলো প্রাণহীন হয়ে যাচ্ছে।

বাপা দাবি জানিয়েছে— নদী-খাল পুনঃখনন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, ড্রেজিং, জলাশয় সংরক্ষণ ও সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা ছাড়া এই অঞ্চলের জল সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। একইসঙ্গে শহর রক্ষা বাঁধে দ্রুত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ভবিষ্যতে বড় বন্যা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তারা আশা প্রকাশ করেন— অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ ও জনসম্পদের সংকটের টেকসই সমাধান করবে।

স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন— বাপা জাতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান, আফজাল হোসেন, বাপা রাজশাহী জেলা সভাপতি প্রকৌশলী মাহমুদ হোসেন, সহ-সভাপতি অধ্যাপক জুয়েল কিবরিয়া, সাধারণ সম্পাদক সেলিনা বেগম, উপদেষ্টা সাংবাদিক আকবারুল হাসান মিল্লাত, শ ম সাজু, বাপার কোষাধ্যক্ষ মোহা. জাহিদ হাসান, সদস্য হাসিনুর রহমান, পবা উপজেলার সাংস্কৃতিক সম্পাদক রায়হান আলী জুয়েল, গ্রিন ভয়েস রাজশাহীর সভাপতি রাবেয়া খাতুন, সামাজিক কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক ছাত্রনেতা রায়হান সম্রাট, রাশেদা বেগম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ–সামাজিক কর্মী আহসান হাবীব ও চিকিৎসক স্বাপ্না কাজল প্রমুখ।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow