রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে সরকার

অর্থনীতির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক টানা নিম্নমুখী। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাচ্ছে না, রপ্তানি আয়েও সুখবর নেই, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি, নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলায় শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে। এরই মাঝে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ মাস না যেতেই তা ৫৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এর আগে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হলেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর ঘটনা দেশের ইতিহাসে প্রথম। এ সংক্রান্ত নথি জাগো নিউজের সংগ্রহে রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে থাকা এনবিআর এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার কোটি টাকার ঘাটতিতে আছে। আলোচ্য সময়ে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে সরকার, একই সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৯৭ দশমিক ০৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে সরকার

অর্থনীতির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক টানা নিম্নমুখী। রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাচ্ছে না, রপ্তানি আয়েও সুখবর নেই, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি, নতুন ঋণপত্র (এলসি) খোলায় শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে। এরই মাঝে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ মাস না যেতেই তা ৫৪ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এর আগে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হলেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর ঘটনা দেশের ইতিহাসে প্রথম। এ সংক্রান্ত নথি জাগো নিউজের সংগ্রহে রয়েছে।

অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে থাকা এনবিআর এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার কোটি টাকার ঘাটতিতে আছে। আলোচ্য সময়ে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে সরকার, একই সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৯৭ দশমিক ০৭ কোটি টাকা।

গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে আলোচ্য সময়ে ১ লাখ ৩ হাজার ৪০৯ দশমিক ১৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে সরকার।

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হলেও তা কাজে আসেনি।

আরও পড়ুন
রিটার্ন দাখিলের সময় এক মাস বাড়লো
রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি, চার মাসে এলো এক লাখ ১৯ হাজার কোটি টাক

গত অর্থবছরে বাজেট অনুযায়ী লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, পরে তা সংশোধন করে তা ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এরপরও আদায় দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর পরও ঘাটতি থাকে প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকা।

নতুন লক্ষ্যমাত্রা কত?

অর্থবছরের চলে গেছে ৪ মাস, বাকি আছে ৮ মাস। এই সময়ে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য অনুযায়ী এ সময়ে আদায় করার কথা ছিল ৩ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ অতিরিক্ত চাপ পড়ছে ৭২ হাজার কোটি টাকার বেশি।

এ নিয়ে গত ২০ নভেম্বর গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুবিভাগ এনবিআরের অধীন দপ্তরগুলোর কাছ থেকে খাতভিত্তিক পরিকল্পনা চেয়েছে। সম্প্রতি এসব দপ্তরকে মাসভিত্তিক লক্ষ্যসহ পরিকল্পনা পাঠাতে বলা হয়েছে।

যেসব খাতে লক্ষ্য বাড়লো

আমদানি ও রপ্তানি শুল্কে নতুন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। আগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ২৯ হাকার ৭৪০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ১৪ হাজার ৩০০ কোটি। একইভাবে মূসক ও আয়করে ২০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। আগে এই দুই খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, যা বাড়িয়ে ২ লাখ ৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা করা হয়েছে।

নতুন লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জিং বলছেন সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজেট ঘাটতি কমাতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

অর্থবছরে প্রথম চার মাসে আমাদানি ও রপ্তানি শুল্কে পর্যায়ে ৩৪ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা, স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে ৪৬ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা, আর আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ৩৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকার রাজস্ব আাদায় হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে মূসকে সবচেয়ে বেশি সাড়ে ২৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া শুল্কে ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও আয়করে ১৬ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। যদিও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কর‍তে পারেনি কোনো খাত।

যদিও একক মাস হিসেবে অক্টোবর মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয় ২ দশমিক ২২ শতাংশ। আদায় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৮৫৪ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। অক্টোবর মাসে শুল্কে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ০৯ শতাংশ, ভ্যাটে প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৭৬ ও আয়করে প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিস) গবেষণা পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর জাগো নিউজকে বলেন, এখন হয়তো লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো প্রয়োজন বোধ করছে সরকার। এমন কোনো ধরাবাঁধা আইন তো নেই যে বছরের মাঝামাঝি বাড়ানো যাবে না। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সরকারের নেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, সব ধরনের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত সাধারণত শুরুতেই নেওয়া হয়ে থাকে। এখন যদি অর্থবছরের মাঝখানে এমন সিদ্ধান্ত আসে তাতে আসলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে এই পরিবর্তনটা কতটা যুক্তিযুক্ত হলো তা বিবেচনার দাবি রাখে।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত না নিলেই ভালো হতো। এত বড় একটি আর্থিক বিষয়; ৫৪ হাজার কোটি টাকা তো আসলে কম নয়। রাজনৈতিক সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে পারলে ভালো হতো। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আসলে অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করলে ভালো হতো।

এসএম/ইএ/জিকেএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow