লালমনিরহাটে ‘গায়েবি মামলা’র প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় নিরীহ মানুষের নামে ‘গায়েবি মামলা’ দায়েরের অভিযোগ তুলে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা এই মানববন্ধনে মামলাটিকে হয়রানিমূলক, তথ্যগতভাবে ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে দ্রুত প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়। বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ মুসরত মদাতির বটতলা এলাকায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে মামলার আসামি ও তাদের স্বজনসহ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, গত ১২ নভেম্বর কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। এতে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ এবং ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এজাহারে ১১ নভেম্বর রাতে নাশকতার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হলেও এলাকাবাসীর দাবি, ওই রাতে এলাকায় এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিরীহ মানুষকে ফাঁসাতে এই মামলা সাজানো হয়েছে। মামলায় স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মীর নাম থাকলেও প্রভাবশালী নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর বদলে আসামি করা হয়েছে দিনমজুর, সাধারণ শিক্ষ

লালমনিরহাটে ‘গায়েবি মামলা’র প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় নিরীহ মানুষের নামে ‘গায়েবি মামলা’ দায়েরের অভিযোগ তুলে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা এই মানববন্ধনে মামলাটিকে হয়রানিমূলক, তথ্যগতভাবে ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে দ্রুত প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার দক্ষিণ মুসরত মদাতির বটতলা এলাকায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে মামলার আসামি ও তাদের স্বজনসহ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, গত ১২ নভেম্বর কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। এতে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ এবং ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এজাহারে ১১ নভেম্বর রাতে নাশকতার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হলেও এলাকাবাসীর দাবি, ওই রাতে এলাকায় এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিরীহ মানুষকে ফাঁসাতে এই মামলা সাজানো হয়েছে। মামলায় স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ কর্মীর নাম থাকলেও প্রভাবশালী নেতাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর বদলে আসামি করা হয়েছে দিনমজুর, সাধারণ শিক্ষার্থী, খেটে-খাওয়া মানুষ ও গৃহিণীদের, যাদের সঙ্গে রাজনীতির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভোটমারি ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আফজাল হোসেন ও যুবদল নেতা জিন্নুন পুলিশের সঙ্গে ‘যোগসাজশ’ করে এই মামলা করিয়েছেন। এখন আসামিদের বাড়িতে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করা হচ্ছে। টাকা দিলে মামলা থেকে নাম কাটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন তারা।

মানববন্ধন থেকে এলাকাবাসী অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার অথবা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নিরীহদের নাম বাদ দেওয়ার দাবি জানান। দাবি মানা না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর ও বৃহৎ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

মামলার অন্যতম আসামি ইঞ্জিনিয়ার মেজবাউদ্দিন বিপ্লব বলেন, ঘটনার সময় আমি ঢাকায় আমার বাসায় ছিলাম। গত দুই মাস ধরে আমি লালমনিরহাটে আসিনি। অথচ আমাকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

সাবেক ইউপি সদস্য ও মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী আব্দুল মতিন বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গায়েবি মামলা। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি করতেই একটি পক্ষ এমনটা করছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আফজাল হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে কল রিসিভ করলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পরে আর কথা বলেননি।

মামলার বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, ১১ নভেম্বর রাতে ওই এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের নেতা শাহীন মেম্বারের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়। তারা পতিত সরকারকে ফিরিয়ে আনা ও বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিলো। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং সেখান থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়।

নিরীহ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি বলেন, মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এমন কোনো রিপোর্ট আসেনি যে নিরপরাধ লোক জড়িত আছে। তদন্ত শেষে পুলিশ রিপোর্টের সময় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। যদি কেউ নিরীহ প্রমাণিত হয়, তবে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

মহসীন ইসলাম শাওন/এনএইচআর/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow