শান্তি প্রতিষ্ঠা-বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চীনের প্রতি ম্যাক্রোঁর আহ্বান

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়কে আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বেইজিংয়ে দুই নেতার বৈঠকে এসব ইস্যু গুরুত্ব পায়। এটি ম্যাক্রোঁর প্রেসিডেন্ট হিসেবে চতুর্থ চীন সফর। ইউরোপের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে সমর্থন জোগাড় করা ও ফ্রান্সে আরও চীনা বিনিয়োগ আনাই ম্যাক্রোঁর এই তিন দিনের সফরের মূল লক্ষ্য। রাশিয়ার বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন যুদ্ধ নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানের কথা বললেও মস্কোর আগ্রাসন এখনো প্রকাশ্যে নিন্দা করেনি। বৈঠকে শি জিনপিং বলেন, চীন শান্তির প্রচেষ্টা সমর্থন করে ও সব পক্ষ মেনে নিতে পারে এমন ন্যায্য, স্থায়ী ও বাধ্যতামূলক শান্তি চুক্তি চাই। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বেইজিংয়ে শি ও ফার্স্ট লেডি পেং লিয়ুয়ান ম্যাক্রোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিতকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেন। সম্মানরক্ষী বাহিনী ও পতাকা নেড়েছে এমন শিশুদের সারিও ছিল অনুষ্ঠানে। হাসিমুখে গ্রেট হল অব দ্য পিপল ভবনে প্রবেশের সময় জনতার দিকে চুম্বন ছুড়ে দেন ম্যাক্রোঁ; বাজা

শান্তি প্রতিষ্ঠা-বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চীনের প্রতি ম্যাক্রোঁর আহ্বান

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়কে আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বেইজিংয়ে দুই নেতার বৈঠকে এসব ইস্যু গুরুত্ব পায়। এটি ম্যাক্রোঁর প্রেসিডেন্ট হিসেবে চতুর্থ চীন সফর।

ইউরোপের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে সমর্থন জোগাড় করা ও ফ্রান্সে আরও চীনা বিনিয়োগ আনাই ম্যাক্রোঁর এই তিন দিনের সফরের মূল লক্ষ্য। রাশিয়ার বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন যুদ্ধ নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানের কথা বললেও মস্কোর আগ্রাসন এখনো প্রকাশ্যে নিন্দা করেনি।

বৈঠকে শি জিনপিং বলেন, চীন শান্তির প্রচেষ্টা সমর্থন করে ও সব পক্ষ মেনে নিতে পারে এমন ন্যায্য, স্থায়ী ও বাধ্যতামূলক শান্তি চুক্তি চাই।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বেইজিংয়ে শি ও ফার্স্ট লেডি পেং লিয়ুয়ান ম্যাক্রোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিতকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেন। সম্মানরক্ষী বাহিনী ও পতাকা নেড়েছে এমন শিশুদের সারিও ছিল অনুষ্ঠানে। হাসিমুখে গ্রেট হল অব দ্য পিপল ভবনে প্রবেশের সময় জনতার দিকে চুম্বন ছুড়ে দেন ম্যাক্রোঁ; বাজানো হয় দুই দেশের জাতীয় সংগীত।

সংবর্ধনার পর ম্যাক্রোঁ বলেন, ফ্রান্স ও চীনকে নিজেদের ‘পার্থক্য কাটিয়ে উঠতে’ হবে। শি একই সুরে বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক ‘আরও স্থিতিশীল’ হওয়া উচিত।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় চার বছর পার হতে চলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রর নতুন করে শান্তি উদ্যোগের সময় এ বৈঠক হলো। সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা মূলত রাশিয়ার দাবিগুলোর প্রতিধ্বনি। আর ম্যাক্রোঁ এই যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত পরিকল্পনার পাল্টা উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ম্যাক্রোঁ।

ম্যাক্রোঁ বলেন, বিশ্বে ও ইউক্রেনসহ যুদ্ধপীড়িত অঞ্চলগুলোতে শান্তি-স্থিতির জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। আমাদের সহযোগিতার সক্ষমতাই এখানে মুখ্য। তিনি আশা প্রকাশ করেন, চীন দ্রুত অন্তত একটি যুদ্ধবিরতিতে, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধে সমর্থন দেবে।

আগামী বছর জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবেন ম্যাক্রোঁ। তিনি বেইজিংকে আরও ‘সামঞ্জস্যপূর্ণ ও ন্যায্য’ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শাসনব্যবস্থার জন্য জি-৭ এর সঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানান।

ইউক্রেন ইস্যুতে বাড়তি চাপ

ম্যাক্রোঁর সফরের আগে প্যারিসে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠকও আলোচনায় আসে। ইউরোপকে কিয়েভের পাশে থাকার অনুরোধ জানান জেলেনস্কি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ অবসান পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে।

সোমবারের বৈঠকের পর জেলেনস্কি লিখেন, যুদ্ধকে ন্যায্য উপায়ে শেষ করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা একমত।

চীন নিয়মিতভাবে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানালেও, কখনো রাশিয়ার ‘সামরিক অভিযানের’ নিন্দা করেনি। পশ্চিমা দেশগুলো অভিযোগ করে, বেইজিং মস্কোর প্রতিরক্ষা শিল্পে প্রয়োজনীয় সামরিক উপাদান দিয়ে যুদ্ধ চালাতে অর্থনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানায়, ম্যাক্রোঁ চীনা প্রেসিডেন্টকে স্পষ্ট করে বলবেন, রাশিয়াকে যুদ্ধ চালাতে কোনোভাবেই কোনো ধরনের সহায়তা করা যাবে না।

বাণিজ্য ও পাণ্ডা কূটনীতি

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে চীনের ৩৫৭ বিলিয়ন বা ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বিরাট বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ম্যাক্রোঁর আলোচনার আরেকটি প্রধান বিষয়। ম্যাক্রোঁর এক উপদেষ্টা বলেন, চীনের বেশি ভোগ ও কম রপ্তানি করা জরুরি। আর ইউরোপীয়দের কম সঞ্চয় ও বেশি উৎপাদনে মনোযোগী হওয়া দরকার।

আগেও ম্যাক্রোঁ চীনের ওপর ইইউ নির্ভরতা কমানো এবং প্রযুক্তিখাতে ‘ইউরোপীয় অগ্রাধিকার’ প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছেন। গত মাসে ইউরোপীয় নেতাদের এক প্রযুক্তি সম্মেলনে তিনি বলেন, ইউরোপ আর যুক্তরাষ্ট্র-চীনের প্রযুক্তি কোম্পানির ‘ভ্যাসেল’ হতে চায় না।

ম্যাক্রোঁ চীনা প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। এরপর যাবেন চেংদুতে, যেখানে আগে ধার হিসেবে ফ্রান্সে পাঠানো দুই দৈত্যাকার পান্ডাকে ফেরত নেওয়া হয়েছে। চীন জানিয়েছে, নতুন পান্ডা পাঠানো হবে দ্রুতই।

শি বলেন, পান্ডা সংরক্ষণে ফ্রান্স-চীন নতুন চুক্তিতে পৌঁছেছে। ফরাসিরা দৈত্যাকার পান্ডা ভালোবাসে, মন্তব্য করেন তিনি। আগের সহযোগিতার ভিত্তিতে নতুন পর্যায়ে কাজ চলবে।

গতবারের চীন সফরে গুয়াংজুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাক্রোঁ ‘রকস্টার’ সম্মান পেয়েছিলেন। শিক্ষার্থীরা তার নাম ধরে স্লোগান দিয়েছে, সেলফি ও হাই-ফাইভের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন।

সূত্র: এএফপি

এসএএইচ

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow