শেরপুরে বর্ণিল আয়োজনে ওয়ানগালা উৎসব উদযাপিত

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বিশেষ প্রার্থনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গারো সম্প্রদায়ের সামাজিক উৎসব ওয়ানগালা বা নবান্ন উৎসব শেষ হয়েছে। রবিবার (২৩ নভেম্বর) উপজেলার মরিয়মনগর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে তিন দিনব্যাপী এ উৎসব শেষ হয়। এর আগে গত শুক্রবার সকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশের কার্ডিনাল বিশপ প্যাট্রিক ডি. রোজারিও। ঝিনাইগাতীর মরিয়মনগর ক্রিশ্চিয়ান মিশন এ উৎসবের আয়োজন করে। ওয়ানগালার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে ছিল থক্কা ও শস্য উৎসর্গ অনুষ্ঠান। এ সময় গারো পুরোহিত (খামাল) মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে শস্য দেবতা মিসি সালজংয়ের উদ্দেশে তাদের উৎপাদিত শস্যগুলো উৎসর্গ করেন। পরে গারো সম্প্রদায়ের প্রায় দুই হাজার মানুষ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেয়। প্রার্থনা পরিচালনা করেন ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশের কার্ডিনাল বিশপ প্যাট্রিক ডি. রোজারিও। ওয়ানগালা উৎসবে গিয়ে দেখা যায়, গারোরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে উৎসবে যোগ দিয়েছেন। গারো নারী-পুরুষের কারও কারও মাথায় ‘খুতুব’ নামের নানা কারুকাজ করা পাগড়ি। কেউ কেউ ওই খুতুবে গুঁজেছেন মোরগের পালক

শেরপুরে বর্ণিল আয়োজনে ওয়ানগালা উৎসব উদযাপিত

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বিশেষ প্রার্থনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গারো সম্প্রদায়ের সামাজিক উৎসব ওয়ানগালা বা নবান্ন উৎসব শেষ হয়েছে। রবিবার (২৩ নভেম্বর) উপজেলার মরিয়মনগর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে তিন দিনব্যাপী এ উৎসব শেষ হয়।

এর আগে গত শুক্রবার সকালে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশের কার্ডিনাল বিশপ প্যাট্রিক ডি. রোজারিও। ঝিনাইগাতীর মরিয়মনগর ক্রিশ্চিয়ান মিশন এ উৎসবের আয়োজন করে। ওয়ানগালার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে ছিল থক্কা ও শস্য উৎসর্গ অনুষ্ঠান। এ সময় গারো পুরোহিত (খামাল) মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে শস্য দেবতা মিসি সালজংয়ের উদ্দেশে তাদের উৎপাদিত শস্যগুলো উৎসর্গ করেন। পরে গারো সম্প্রদায়ের প্রায় দুই হাজার মানুষ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেয়। প্রার্থনা পরিচালনা করেন ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশের কার্ডিনাল বিশপ প্যাট্রিক ডি. রোজারিও।

ওয়ানগালা উৎসবে গিয়ে দেখা যায়, গারোরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে উৎসবে যোগ দিয়েছেন। গারো নারী-পুরুষের কারও কারও মাথায় ‘খুতুব’ নামের নানা কারুকাজ করা পাগড়ি। কেউ কেউ ওই খুতুবে গুঁজেছেন মোরগের পালক দিয়ে তৈরি দ.মি নামের বিশেষ অলংকার। পরনে গারোদের ঐতিহ্যবাহী দকমান্দা, দকসারির মতো নানান রঙের পোশাক। কোমরে রিকমাচু অর্থাৎ বিছা। এছাড়া ওয়ানগালাকে কেন্দ্র করে গারোদের বাড়ি বাড়ি নানা রকমের পছন্দেও খাবার রান্নাসহ নিজেদের মতো করে আনন্দে-উৎসব করতে দেখা গেছে। বিদ্যালয়ের মাঠে গড়ে ওঠা অস্থায়ী দোকানগুলোতে ঐতিহ্যবাহী পোশাকসহ ও নিজেদের ঐতিহ্যবাহী নানা পদের পিঠাসহ অন্য খাবার। এ ছাড়া তিনদিন ধরে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গারো শিল্পীরা তাদের নিজস্ব ভাষায় গাত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।

আয়োজকরা জানান, গারোদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ‘ওয়ানগালা’। ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের শুরুতে নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন। গারোদের বিশ্বাস,‘মিসি সালজং’ বা শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন। নতুন ফল ও ফসল ঘরে উঠবে। তার আগে কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে। শস্য দেবতার প্রতি। তাই শস্য দেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্য নেচে-গেয়ে উদযাপন করা হয় ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব। একই সঙ্গে পরিবারে ভালোবাসা, মণ্ডলীর আনন্দ ও সব পরিবারের মঙ্গল কামনা করা হয় শস্য দেবতার কাছে।

এ বছর তিন দিনব্যাপী উৎসব উপলক্ষে কিশোর-কিশোরীদের চিত্রাঙন, ছড়া (মান্দি ভাষায়), নৃত্য, মিস ওয়ানগালা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা ও খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বাণী পাঠ (মান্দিতে), খামালকে খুতুব ও থক্কা প্রদান, জনগণকে থক্কা দেওয়া, পবিত্র খ্রিস্টযাগ, দান সংগ্রহ, আলোচনাসভা, প্রার্থনা ও নকগাথা অনুষ্ঠান ছিল। এছাড়া এ উৎসব ঘিরে বিদ্যালয়ের মাঠে গড়ে ওঠা অস্থায়ী দোকানে ঐতিহ্যবাহী পোশাক, খাবার ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে বসেছে মেলা।

ওয়ানগালা উৎসব কমিটির অহ্বায়ক মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ফাদার লরেন্স রিবেরু সিএসসি জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর উদ্যোগে ওয়ানগালা উৎসব পালন করা হচ্ছে। গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এর মূল লক্ষ্য।

ঢাকা মহা ধর্মপ্রদেশের কার্ডিনাল বিশপ প্যাট্রিক ডি. রোজারিও বলেন, এই ওয়ানগালা অনুষ্ঠান শুধু আনুষ্ঠিকতা নয়, এটা জীবনের উদযাপন। জীবনের যা কিছু আছে, যা কিছু ছিল তারই অভিব্যক্তি, তারই প্রকাশ, তারই উদযাপন। এখানে আমাদের জীবনের যা বিশেষত্ব, যা পরম্পরাগতভাবে আমরা পেয়েছি। একইসাথে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা জীবন পদ্ধতি। আরও অনুপ্রাণিত করছি ভবিষ্যত প্রজম্মকে যেন তারাও তাদের জীবনকে উদযাপন করে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow