অটোরিকশার মহাজন প্রথা বাতিল করে চালকদের মালিকানা নিশ্চিতে নোটিশ

4 days ago 10

দেশের অন্যতম জনপ্রিয় গণপরিবহন সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি প্রকৃত অর্থে জনবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছে না। দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত তথাকথিত ‘মহাজন সিস্টেম’-এর কারণে চালকরা যেমন শোষণের শিকার হচ্ছেন, তেমনি সাধারণ যাত্রীরাও প্রতিদিন অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

তাই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সব ধরনের কর, ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করে, সরকারকে বিশেষ ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করার আহ্বান করা হয়েছে যেন সহজ শর্তে কিস্তিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিনে প্রকৃত চালকরা মালিক হতে পারেন এবং যাত্রীসাধারণ ন্যায্য ভাড়ায় ভ্রমণের সুযোগ তৈরি হয়। এর পাশাপাশি সিএনজিচালিত অটোরিকশা সরাসরি উৎপাদনমূল্যে বিক্রি করার দাবিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সরকারের সংশ্লিষ্টদের একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে বিবাদী করা হয়েছে।

বর্তমান মহাজন প্রথায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিকরা বা মহাজনরা প্রতিদিন গড়ে ১২০০ টাকা হারে চালকদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করেন। চালকদের এ টাকা পরিশোধের পাশাপাশি গ্যাস ক্রয়, খাবার এবং নিত্যদিনের ছোটখাটো মেরামত বাবদ আরও ব্যয় করতে হয়। সব মিলিয়ে প্রতিদিন একেকজন চালককে গড়ে ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা খরচ করতে হয়। এ অবস্থায় চালকদের পক্ষে মিটারভিত্তিক ভাড়া নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে তারা যাত্রীদের কাছ থেকে নিয়মিত ভাড়ার তিনগুণ বা তারও বেশি ভাড়া আদায় করেন।

এভাবে সাধারণ মানুষও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেখানে একটি সীমিত দূরত্বের মিটারভিত্তিক ভাড়া হওয়ার কথা ১০০ টাকা, সেখানে চালকরা যাত্রীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা বা তারও বেশি নিচ্ছেন। এই অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় জনস্বার্থের পরিপন্থি, মানুষের আর্থিক ক্ষতির কারণ এবং পরিবহন সেক্টরে অরাজকতা সৃষ্টি করছে।

সরকারকে পাঠানো লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, বর্তমান মহাজন সিস্টেমটি মূলত ঔপনিবেশিক আমলের জমিদারি প্রথার আধুনিক রূপ, যা শ্রমিক শ্রেণিকে অন্যায্যভাবে শোষণ করছে এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫ (রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব), অনুচ্ছেদ ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা) এবং অনুচ্ছেদ ৩২ (জীবনের অধিকার) সরাসরি লঙ্ঘন করছে।

সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নোটিশে নিম্নলিখিত দাবিগুলো উত্থাপন করা হয়েছে-

প্রথমত, মহাজন সিস্টেম অবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে এবং প্রত্যেক চালককে তাদের নিজস্ব সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, সরকারকে বিশেষ ব্যাংক ঋণ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যেন চালকরা সহজ শর্তে কিস্তিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিনতে পারেন।

তৃতীয়ত, যেহেতু সিএনজিচালিত অটোরিকশা একটি গণপরিবহন, তাই এ খাতে আরোপিত সব ধরনের অতিরিক্ত কর, ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে।

চতুর্থত, সিএনজিচালিত অটোরিকশা সরাসরি উৎপাদনমূল্যে বিক্রি করতে হবে, যেন প্রকৃত চালকরা মালিক হতে পারেন এবং যাত্রীসাধারণ ন্যায্য ভাড়ায় ভ্রমণ করতে পারেন।

নোটিশে আরও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব দাবি ১৫ (পনেরো) কার্যদিবসের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে জনস্বার্থে রিট আবেদন দায়ের করা হবে।

এফএইচ/এএমএ/এমএস

Read Entire Article