দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর)। অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে ক্যাম্পাস। ১৭টি কেন্দ্রে ৯১৮ প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন ২৮ হাজার ৯০১ জন ভোটার।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশ ও অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। এটি সংক্ষেপে রাকসু নামে পরিচিত। রাকসু প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল সৎ, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব তৈরি করা, যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতীয় পরিসরে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে।
১৯৫৬ সালে তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. ইতরাত হোসেন জুবেরীর কাছে ছাত্র সংসদ গঠনের দাবি উত্থাপন করা হয়। এরপর ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খানের হস্তক্ষেপে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয় এবং ওই বছরই প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে মনিরুজ্জামান মিয়া ভিপি ও আব্দুর রাজ্জাক খান জিএস নির্বাচিত হন।
পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারি হলে রাকসুর কার্যক্রম স্থগিত হয়। ১৯৬২ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পুনরায় রাকসু চালু হয় এবং এরপর থেকে নিয়মিতভাবে ১৪ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক শাসন ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বিভিন্ন সময় এর কার্যক্রম বন্ধ থেকেছে।
সর্বশেষ ১৯৮৯ সালে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ও রুহুল কুদ্দুস বাবু যথাক্রমে সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। এরপর থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর রাকসু নির্বাচন স্থগিত ছিল।
রাকসুর ভিপি ও জিএসদের ধারাবাহিক তালিকা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে যারা ভিপি (সহ-সভাপতি) ও জিএস (সাধারণ সম্পাদক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন-
১৯৫৬-৫৭ শিক্ষাবর্ষে রাকসুর প্রথম ভিপি ছিলেন মো. মনিরুজ্জামান মিয়া, যিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন থেকে নির্বাচিত হন। একই সময় জিএস পদে দায়িত্ব পালন করেন মো. আব্দুর রাজ্জাক খান। পরের বছর ১৯৫৭-৫৮ সালে ভিপি ছিলেন আবুল কালাম চৌধুরী এবং জিএস পদে ছিলেন মো. আব্দুর রাজ্জাক খান। ১৯৬২-৬৩ সালে ভিপি নির্বাচিত হন শেখ মো. রুস্তম আলী, জিএস ছিলেন মো. বজলুর করিম। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ মাজহারুল হক (ভিপি) ও মো. আব্দুর রউফ (জিএস)। ১৯৬৪-৬৫ সালে আব্দুর রাজ্জাক ভিপি এবং বায়েজীদ আহম্মদ জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৫-৬৬ সালে ভিপি ছিলেন অধ্যাপক আবু সাইয়িদ (বাংলাদেশ ছাত্রলীগ), আর জিএস ছিলেন সরদার আমজাদ হোসেন। ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে ভিপি ছিলেন বায়েজীদ আহম্মদ, জিএস আব্দুস সাত্তার।
১৯৬৭-৬৮ সালে এ.এফ.এম জামিরুল ইসলাম ভিপি এবং মো. আব্দুর রহমান জিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরের বছর ১৯৬৮-৬৯ সালে ভিপি ছিলেন মো. আব্দুর রহমান, জিএস ছিলেন জালাল উদ্দিন সেলিম। ১৯৬৯-৭০ সালে মীর শওকত আলী ভিপি ও আব্দুস সামাদ জিএস পদে ছিলেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালে রাকসুর নেতৃত্বে ছিলেন মো. হায়দার আলী (ভিপি) ও আহমেদ হোসেন (জিএস)। ১৯৭৩-৭৪ শিক্ষাবর্ষে ভিপি ছিলেন নুরুল ইসলাম ঠান্টু, জিএস ছিলেন শামসুল হক টুকু। ১৯৭৪-৭৫ সালে দায়িত্বে ছিলেন ফজলুর রহমান পটল (ভিপি) ও রফিকুল ইসলাম (জিএস)।
দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৮০-৮১ সালে রাকসু পুনর্গঠিত হয়। সেসময় ভিপি ছিলেন ফজলে হোসেন বাদশা (বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী), জিএস ছিলেন আবুল কালাম আজাদ। পরবর্তী মেয়াদে ১৯৮৮-৮৯ সালে ভিপি ছিলেন রাগীব আহসান মুন্না (ছাত্র মৈত্রী), জিএস রুহুল কুদ্দুস বাবু।
সর্বশেষ ১৯৮৯-৯০ সালে রাকসুর সর্বশেষ নির্বাচনে ভিপি হন রুহুল কবির রিজভী (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল), আর জিএস পদে ছিলেন রুহুল কুদ্দুস বাবু, যিনি ছাত্রলীগ ও জাসদ ঘরানার ছিলেন।
এবার ছাত্র সংসদের ২৩টি পদে ৩০৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন।
এফএ/জেআইএম