অনলাইন সার্ভার বন্ধ, ভূমি অফিসে ভোগান্তি চরমে

16 hours ago 5

এক মাসের অধিককাল ভূমি সেবার অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে দেশব্যাপী সেবাপ্রত্যাশী গ্রাহকরা। চিকিৎসার প্রয়োজনে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে না পারায় নিজের সম্পদকে ‘পুথিগত বিদ্যা, পর হস্তে ধন’-এর সঙ্গে তুলনা করছেন ভুক্তভোগী জনসাধারণ। নজিরবিহীন জনভোগান্তির পাশাপাশি শুধু এ কারণেই সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

জমির সর্বশেষ খতিয়ান সৃষ্টি (মিউটেশন), ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা ও জমি ক্রয়-বিক্রয় করার কাজ করতে না পেরে আশাশুনিসহ সারা দেশের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। দীর্ঘ এক মাস যাবৎ অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকায় ভূমিসেবা সেক্টরে বিপত্তির পাশাপাশি সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

চলতি বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে সারা দেশে ভূমি সেবা অনলাইন সার্ভার বন্ধ রয়েছে। সফটওয়্যারগুলো ধীরগতিসম্পন্ন হওয়ায় ই-নামজারি (মিউটেশন), ভূমি উন্নয়ন কর ও খতিয়ান সেবা পেতে অসুবিধা হচ্ছে। সেবাপ্রাপ্তিতে গতিবৃদ্ধি করতে কাজ করা হচ্ছে। অনলাইন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ম্যানুয়েল তৈরি করে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এই কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করার কথা বলে সার্ভার বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ এক মাস ধরে সার্ভার বন্ধ থাকায় সারা দেশের মেতো আশাশুনি উপজেলায় ভূমি সেবা কার্যক্রমে ব্যাপক প্রতিকূল প্রভাব পড়েছে।

উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ৯টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে প্রতিদিন বহু লোকজন ভূমি সেবা পেতে যাতায়াত করে থাকে। জমির কাগজপত্র ঠিক করা, ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়া, ই-নামজারির কাজ করা, খতিয়ান সেবা নিতে ভূমি অফিসে যাওয়া শত শত মানুষ ‘অনলাইন সার্ভার বন্ধ, পরে আসেন’ - এমন বক্তব্য শুনতে শুনতে হতাশ হয়ে পড়েছেন। 

ভূমি অফিসে হাঁটতে হাঁটতে নিরাশ হয়ে যাওয়া কুল্যা ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের নিমাই চাঁদ রাজবংশী জানান, বুধহাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে তিনি এক মাস হাঁটছেন কিন্তু সার্ভার কাজ করছে না শুনতে শুনতে হতাশ হয়ে গেছেন। চিকিৎসার খরচ মেটাতে জমি বিক্রয় করার জন্য নামজারির কাজ করতে এসেছেন। নামজারি হচ্ছে না, চিকিৎসা নিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

যদুয়ারডাঙ্গা গ্রামের প্রদীপ কুমার সরকার জানান, তিনি প্রায় এক মাস নামজারির আবেদন করতে ভূমি অফিসে হাঁটছেন। অনলাইন সমস্যার কারণে অপেক্ষা করতে করতে চোখ ছানাবড়া হতে চলেছে।

খাজরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা তরুণ কুমার সরকার জানান, খাজরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হাঁটতে হাঁটতে জুতা ক্ষয় হয়ে গেল কিন্তু নামজারি করানো হলো না।

যদুয়ারডাঙ্গা গ্রামের উত্তম সরকার, কচুয়া গ্রামের আজীজ, কাদাকাটি গ্রামের আজাদ রহমান বাচ্চু ও মুজিবর জানান, অনলাইন সমস্যায় তারা নামজারি ও ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারছে না। বিল্লাল হোসেন বলেন, তিনি জমি বিক্রয় করার জন্য নামজারি করাতে হাঁটছেন। কিন্তু কবে কাজ করাতে পারব বুঝতে পারছি না।

হাজীডাঙ্গা গ্রামের খাদেমুল ইসলাম জানান, তিনি তাদের ফুফু আকলিমার কাছ থেকে জমি ক্রয়ের জন্য দলিল রেজিস্ট্রি করতে ২০ দিন ধরে হাঁটছি। দলিল লেখার পর রেজিস্ট্রি করাতে পারছি না।

এ ব্যাপারে ডিড রাইটার স্বপন কুমার মণ্ডল ও তারক চন্দ্র সরকার জানান, নামজারি ও চেক দাখিলা কাটতে না পারায় জমি রেজিস্ট্রি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সপ্তাহে যেখানে ১৫০-২০০টি দলিল রেজিস্ট্রি হতো এখন সেখানে ৪০-৫০টিও হচ্ছে না। কেউ জরুরি প্রয়োজনে দলিল করতে আসছেন, কেউ চিকিৎসা বা অন্য কোনো কাজে টাকার প্রয়োজন মেটাতে জমি বিক্রয় করতে আসছেন, কিন্তু রেজিস্ট্রি করতে না পেরে বারবার ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। এতে জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা নাজেহাল ও সমস্যায় ভুগছেন। রেজিস্ট্রি অফিসের সঙ্গে জড়িতরা বিপত্তিতে রয়েছেন।

অপরদিকে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা দাখিলা) পরিশোধ করতে না পারা, নামজারি ও জমি রেজিস্ট্রি করতে না পারায় সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আ. মজিদ জানান, এক মাস ধরে সফটওয়্যার সমস্যায় নামজারি আবেদন করা যাচ্ছে না। মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, আমরাও ঝামেলায় রয়েছি।

আশাশুনি উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদ হোসাইন কালবেলাকে জানান, গত ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনলাইন সার্ভার বন্ধ থাকায় আমরা সেবা প্রদান করতে পারছি না। নামজারি ও রাজস্ব আদায় ব্যাহত হচ্ছে। আগামী ১ জানুয়ারি ভার্সন-২ উদ্বোধন করা হবে বলে জানতে পেরেছি। আর মাত্র কয়েক দিন পর থেকে আমরা উন্নত সেবার মাধ্যমে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে সচেষ্ট হবো ইনশাল্লাহ।

অন্যদিকে একটানা দীর্ঘদিন সার্ভার বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিজের চাহিদা মেটাতে নিজের সম্পত্তি হস্তান্তর করতে না পারার কারণে সার্ভার সমস্যা দেখানো নতুন কোনো কৌশল কিনা এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আশু সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগীরা।

Read Entire Article