ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম তালুকদার। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৩১ জুলাই নিহত হন তিনি। অথচ এর তিনদিন পরই ছিল (৪ আগস্ট) প্রথম বিবাহবার্ষিকী। ৮ আগস্ট পরীক্ষায় ধরা পড়ে সেলিমের স্ত্রী সুমী আক্তার অন্তঃসত্ত্বা। সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেননি সেলিম তালুকদার। এখন অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত অন্তঃসত্ত্বা সুমী।
শহীদ সেলিম তালুকদার (২৮) একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হন। ৩১ জুলাই রাতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ২ আগস্ট সকালে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয় সেলিম তালুকদার।
সেলিম নলছিটি উপজেলার মল্লিকপুর এলাকার সুলতান হোসেন তালুকদারের ছেলে। তিনি বিজিএমই ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে আড়াই বছর আগে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরে নারায়ণগঞ্জে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি শুরু করেন। তারা তিন বোন ও এক ভাই। সেলিম ছিলেন মেজ।
নিহত সেলিমের স্ত্রী সুমী জানান, ওইদিন সকালে বাড্ডা লিংক রোডের কুমিল্লাপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দেন সেলিম। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের মধ্যে আটকে পড়েন তিনি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন।
সুমি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী শহীদ হয়েছেন। তার স্মৃতি হিসেবে এই সন্তান থাকবে। আমার একটাই চাওয়া আমার সন্তানকে যেন কারও কাছে হাত পাতা না লাগে। আমি যতদিন বাঁচবো শহীদ সেলিমের স্ত্রী হিসেবে বাঁচবো। সন্তানকে তার পরিচয় দেবো।’
ছেলের শোকে এখনো কাতর মা সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার যা সহায়-সম্বল ছিল সবকিছু দিয়ে ছেলেকে ভার্সিটিতে লেখাপড়া করিয়েছি। ছেলের আয়ে আমাদের সংসার চলতো। এখন আমরা বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। আমাদের সংসার কে চালাবে?’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের চিকিৎসার পেছনে প্রায় ১৮ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। ধারদেনা করে এসব টাকা জোগাড় করেছি। সেই টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আমরা চাই আমার ছেলেকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়া হোক।’
আতিকুর রহমান/এসআর/জিকেএস