অনাহারীকে খাবার খাওয়ানোর ফজিলত

3 weeks ago 7

ইসলামে অনাহারী মানুষকে খাবার খাওয়ানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ নেক আমল। কোরআন-হাদিসে অন্যান্য দান-সদকার পাশাপাশি খাবার দান করা বা খাওয়ানোর ফজিলত ও সওয়াবের কথা বর্ণিত হয়েছে বিশেষভাবে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা উত্তম মুমিনদের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তারা নিজের প্রয়োজন সত্ত্বেও মিসকিন, এতিম ও বন্দীদের খাবার দান করে এবং তাদের বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা আশা করি না। (সুরা দাহর: ৮-৯)

সামর্থ্য থাকার পরও দরিদ্র-অভাবীদের না খাওয়ানো, খাবার দান না করা কাফেরদের বৈশিষ্ট্য এবং এটা জাহান্নামে যাওয়ার কারণও হতে পারে। কোরআনে এসেছে, আখেরাতে জান্নাতবাসীরা জাহান্নামবাসীদের জিজ্ঞাসা করবে, কেন তোমরা জাহান্নামি হলে? তারা বলবে, আমরা নামাজ আদায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। আর আমরা অভাবগ্রস্তকে খাবার দান করতাম না। (সুরা মুদ্দাসসির: ৪১-৪৪)

খাদ্যসংকট বা দুর্ভিক্ষের সময় এতিম আত্মীয় বা মিসকিনদের খাবার দান করাকে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় ঘোষণা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, আপনি কি জানেন ধর্মের ঘাঁটি কী? তা হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে এতিম আত্মীয় বা ধূলিমলিন মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো। (সুরা বালাদ: ১৪-১৮)

অনাহারীকে খাবার খাওয়ানোর ফজিলত

একাধিক হাদিসে এসেছে, নবিজি (সা.) খাবার দান করাকে সর্বোত্তম নেক আমলসমূহের অন্যতম হিসেবে গণ্য করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বলেন, তুমি খাবার খাওয়াবে ও চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেবে। (সহিহ বুখারি: ১২)

আরেকটি হাদিসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা নবিজিকে (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, কোন কোন কাজের সওয়াব নিয়ে ফেরেশতারা আলোচনা করে—তা আপনি জানেন?’ নবিজি (সা.) বলেন, আমি বললাম, মানুষকে খাদ্য দান করা, নরম ভাষায় কথা বলা এবং রাতের বেলা যখন সবাই ঘুমায় তখন নামাজে মগ্ন হওয়া। (সুনানে তিরমিজি: ৩২২৫)

নবিজি (সা.) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসেন, তখন প্রথম ভাষণে তিনি মদিনাবাসীকে ৪টি নেক আমলের কথা বলেছিলেন যার অন্যতম ছিল খাবার খাওয়ানো। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় এলেন, লোকেরা তাকে দেখার জন্য ছুটে যাচ্ছিল এবং বলছিল, ‘আল্লাহর রাসুল এসেছেন!’ ‘আল্লাহর রাসুল এসেছেন!’ আমিও সবার সাথে তাকে দেখতে গেলাম। তার চেহারা ভালোভাবে দেখে আমি বুঝতে পারলাম, এটা মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। সর্বপ্রথম তার মুখে আমি যা শুনেছিলাম, তিনি বলেছিলেন, লোকসকল! আপনারা সালামের ব্যাপক প্রচলন করুন, খাবার খাওয়ান, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করুন এবং রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন নামাজ আদায় করুন, তাহলে আপনারা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। (সুনানে তিরমিজি: ২৪৮৫)

সুতরাং আমারা যেন এই সহজ নেক আমলটিকে অবহেলা না করি। প্রতিদিন অন্তত একজন অনাহারিকে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করি। দরিদ্র প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের বাসায় খাবার পাঠানোর অভ্যাস করি। এটা আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতার কারণ হবে ইনশাআল্লাহ।

ওএফএফ/এএসএম

Read Entire Article