সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনুপস্থিত থেকেও ১৬ নার্সের বেতন-ভাতা উত্তোলনের পেছনে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে হাসপাতালে অভিযান শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ তথ্য জানান দুদক সিলেটের উপ-পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাত।
তিনি বলেন, অনুপস্থিত থেকেও হাসপাতালের ১৬ নার্স বিভিন্ন সময়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা বেতন উত্তোলন করেছেন। কয়েক বছর ধরে এইভাবে সুযোগ নিয়েছেন তারা। তাদের ছুটি নেওয়ার কোনো অনুমতি ছিল না। অনুমতি না নিয়ে অনুপস্থিত থেকেও তারা বেতন-ভাতা তুলেছেন।
দুদক কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে যারা সংশ্লিষ্ট, অর্থাৎ নার্সিং সুপারভাইজার অনুপস্থিতির রিপোর্ট করেছেন। হিসাব শাখায় তাদের অনুপস্থিত থাকার রিপোর্ট পাঠানো হলেও বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখানে একটা সিন্ডিকেট ছিল। পুরো সিন্ডিকেটই কাজ করেছে।
দুদকের উপ-পরিচালক আরও বলেন, ২০২১ সাল থেকে এ ধরনের কার্যক্রম চলে আসছিল। কিন্তু বিষয়টি কারো নজরে ছিল না। যারা হিসাব শাখা থেকে বেতন পাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তারাও এই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে আরও তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্তদের মধ্যে হাসপাতালের হিসাব শাখার একজন কর্মকর্তার স্ত্রীর জড়িত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু অভিযুক্ত নার্সদের বেতন হিসাব শাখা থেকে ফরওয়ার্ড করা হয়েছে, সেহেতু হিসাব শাখার ওই কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। তবে বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা হবে।
এর আগে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে দুদকের একটি দল হাসপাতালে অভিযান শুরু করে। এসময় তারা নার্সিং সুপারিন্টেনডেন্ট মোসাম্মৎ রিনা বেগমের কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা অভিযুক্ত নার্সদের বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করেন।
একপর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এছাড়া দুদক কর্মকর্তারা হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ) ডা. মাহবুবুল আলমের কক্ষে যান।
অভিযুক্ত একজন নার্স ডা. মাহবুবুল আলমের স্ত্রী বলে জানা গেছে। পরে মাহবুবুল আলমের কক্ষের বিভিন্ন অফিসিয়াল নথি দেখেন দুদক টিমের সদস্যরা। পরে হাসপাতালের উপ-পরিচালকের কক্ষে গিয়েও কথা বলেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ওমর রাশেদ মুনীর সাংবাদিকদের বলেন, ১৬ নার্স অনুপস্থিত থেকে বেতন নেওয়ার বিষয়টি প্রথমে আমাদের নজরে আসে। পরে আমরা বিষয়টি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরকে জানাই। তারা কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এছাড়া কয়েকজনকে অপসারণ করে। এর বাইরে যেসব টাকা উত্তোলন হয়েছে, সেগুলো সরকারকে ফিরিয়ে দিতে নোটিশ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, টাকা উদ্ধারের বিষয়টি নার্সিং অধিদপ্তরের। নোটিশের মাধ্যমে টাকা উদ্ধার না হলে পরবর্তীতে মামলা করবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওসমানী হাসপাতালের কর্মস্থলে নেই ৪৩ নার্স কর্মকর্তা। এরমধ্যে ১৬ জন কর্মস্থলে না থেকেও মাসের পর মাস বেতন নিয়েছেন। বিষয়টি ধরা পড়ায় ৮ জানুয়ারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশে উল্লিখিত ১৬ জনকে উত্তোলনকৃত বেতন-ভাতার টাকা ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত ১৬ কর্মকর্তা হলেন- সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. ইউসুফ, মো. আব্দুর রহমান, লিপি রানী, আওলাদ হোসেন মাসুম, জাহেদ আহমদ, এমএফকে জান্নাত, একরামুল হক, রুনা, কামরুন্নাহার, ঝিলি ধর, মোহাম্মদ আলী আশরাফ, মো. শাহিন মিয়া, শামীমা জান্নাত, জান্নাতুল ফেরদাউস, মোছা. শিরীন সুলতানা ও লাভলী বেগম।
আহমেদ জামিল/জেডএইচ/জেআইএম