বিগত সরকারের আমলে শ্রমিক নেতা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হওয়া প্রায় সব মামলা প্রত্যাহার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ এসব মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকারকে ‘শ্রমিকবান্ধব’ বলে দাবি করেছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
তিনি বলেছেন, ৪৮ হাজার শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতার বিরুদ্ধে পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মিথ্যা ও সাজানো মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই সরকার যদি শ্রমিকবান্ধব বা দরিদ্রবান্ধব না হয়, তবে আর কে হবে?
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেশের শ্রম ইস্যু নিয়ে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন।
তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
আমি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একজন ফ্রিল্যান্স গবেষক এবং একাধিক পশ্চিমা গণমাধ্যমের সংবাদদাতা হিসেবে গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের শ্রম ইস্যু, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছি।
অনেক কারখানায় শ্রমিকদের আধুনিক দাসের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পশ্চিমা সমর্থিত দুটি প্ল্যাটফর্ম—অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স—ব্র্যান্ড ও কারখানার মালিকদের ওপর আইনগত বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে দিলে কারখানার নকশাগত কাঠামোতে উন্নতি আসে।
কিন্তু এতে কর্মপরিবেশে তেমন পরিবর্তন আসেনি। অতি সামান্য মজুরি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা এবং আইনগত সুবিধার অভাব শ্রমিকদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।
কারখানায় প্রকৃত ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে শ্রমিকদের কিছুটা স্বস্তি আসতে পারতো। কিন্তু অনেক কারখানায় মালিকদের প্রভাবিত তথাকথিত পিসি কমিটি (পার্টিসিপেশন কমিটি) ইউনিয়নের জায়গা দখল করেছে।
এটি একদিকে মালিকদের ক্রেতাদের কাছে কারখানাকে ‘কমপ্লায়েন্ট’ হিসেবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করেছে, অন্যদিকে শ্রমিক শোষণের পথ খুলে দিয়েছে।
ফলশ্রুতিতে শ্রমিকরা তাদের কণ্ঠস্বর হারিয়েছে, আর চরম মূল্যস্ফীতির মধ্যে ন্যায্য মজুরির দাবিও নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে। হাজার হাজার শ্রমিককে বরখাস্ত করা হয়েছে, ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে এবং আইনগত হয়রানির শিকার করা হয়েছে।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব প্রথার অবসান ও দেশের শ্রমখাত সংস্কারের উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
সরকারের এ প্রচেষ্টার এক চমৎকার ফল হলো ৪৮ হাজার শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতার বিরুদ্ধে পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মিথ্যা ও সাজানো মামলা প্রত্যাহার করা। যদি এই সরকার শ্রমিকবান্ধব বা দরিদ্রবান্ধব না হয়, তবে আর কে হবে?
এমইউ/এমকেআর/এমএস