সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা, যিনি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএসের নেতা, ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে এক গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছেন। সিরিয়ার ইতিহাসে এটি একটি নতুন মাইলফলক, কারণ এই প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দৃষ্টি সুস্পষ্টভাবে সমস্ত গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ওপর।
শারা জানিয়েছেন, তিনি সিরিয়ায় একটি শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠন করতে চান এবং এজন্য জাতীয় আলোচনা সম্মেলন (ন্যাশনাল ডায়লগ কনফারেন্স) আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন। এই সম্মেলনে সব পক্ষের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন, যাতে কোনো গোষ্ঠীই বাদ না পড়ে এবং সব ধরনের মানুষের স্বার্থ নিশ্চিত হয়। খবর এএফপি।
তিনি আরও জানান, মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া একটি বৈচিত্র্যময় দেশ। এখানে নানা জাতি, ধর্ম, ভাষার মানুষ বসবাস করে। এই বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সবার প্রতিনিধিত্ব রাখা সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার এই মন্তব্যে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ভবিষ্যতে গঠিত সরকারের প্রতিটি সদস্যকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে নির্বাচিত করা হবে, যাতে সার্বিক উন্নয়ন ও শান্তি নিশ্চিত করা যায়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার একনায়ক বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার পর আলোচনায় আসেন গোলানি। এরপর তিনি তার ছদ্মনাম ‘আবু মোহাম্মদ আল-গোলানি’ পরিত্যাগ করে নতুন নামে পরিচিত হতে শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি রাজনীতিতে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেন এবং সিরিয়ার ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক অঙ্গন তৈরি করতে উদ্যোগী হন।
শারা তার বক্তৃতায় বলেন, ‘সিরিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। তবে, এটা কেবল তখনই সম্ভব হবে যদি আমরা সকল পক্ষকে একত্রিত করতে পারি। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, এই শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া শুরু হবে একটি জাতীয় আলোচনা কমিটি গঠনের মাধ্যমে, যেখানে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলও অংশগ্রহণ করবে।
এছাড়া, শারা জানিয়ে দেন যে, আপাতত একটি ছোট দল গঠন করা হবে, যারা পার্লামেন্টে বসে সিরিয়ার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবে। তবে তিনি ভবিষ্যতে দেশের সংবিধান পরিবর্তন নিয়ে কাজ করার কথাও উল্লেখ করেন। একটি সংবিধান সংশোধন কমিটি গঠন করা হবে, যারা নতুন সংবিধান নিয়ে আলোচনা করবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী চার বছরের জন্য সিরিয়া পরিচালনা করবে, এর মধ্যে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে বলে তিনি পূর্বে জানিয়েছিলেন। আহমেদ আল-শারার এই মন্তব্যগুলো সিরিয়ার ভবিষ্যতের জন্য একটি আশার সঞ্চার করেছে, যেখানে দেশের সব গোষ্ঠীর সমান প্রতিনিধিত্ব এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হতে পারে।