ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ১০০ দিন হতে চলেছে। এই সময়ের মধ্যে দেশের অন্য সব ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। যা নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে চলছে ইতিবাচক আলোচনা।
দুর্নীতির কষাঘাত থেকে ক্রীড়াঙ্গনকে মুক্ত করার অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ। যেখানে রয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া, একইসঙ্গে সাহসিকতার পরিচয়।
দেশের পতাকাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ক্রীড়া সবসময়ই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সেই ক্রীড়াঙ্গনই এতদিন ছিল রাজনৈতিক খোলসে বন্দি এমন একটি স্থান যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দুর্নীতি। যেখানে ক্রীড়াবিদরা ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। ফেডারেশনগুলো নামেমাত্র কিছু প্রতিযোগিতার আয়োজন করে নিজেদের দায়ভার সেরেছে। যার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সুচিন্তিত নেতৃত্বে এই স্বল্প সময়ে যতটুকু পরিবর্তনই ক্রীড়াঙ্গনে হয়েছে তা নিয়ে আশাবাদী হওয়াই যায়। এখন পর্যন্ত বর্তমান সরকারের আমলে ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের শিরোপা জয়ের কৃতিত্বকে। স্বাগতিক নেপালকে ফাইনালে ২-১ গোলে পরাজিত করে বাংলাদেশ টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।
বাংলাদেশে ক্রীড়াঙ্গনে অন্যতম সেরা এই সাফল্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নারী দলকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। একইসঙ্গে নারী ফুটবলারদের বকেয়া বেতন দ্রুত পরিশোধেরও আশ্বাস দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই নারী দলের বকেয়া বেতনের বিষয়টি সমাধানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জানা গেছে।
নারী দলের দেশে ফেরার দিন গত ৩১ আগস্ট জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে এক কোটি টাকা অর্থ পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। ১১ দিনের মাথায় নির্দিষ্ট সেই অর্থের চেকও পেয়ে গেছেন সাবিনা খাতুনরা।
দায়িত্বভার গ্রহণের পরপরই গত ১৮ আগস্ট ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া খেলোয়াড়দের মান উন্নয়নে ‘বাংলাদেশ স্পোর্টস ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন, যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের হাই পারফরমেন্স, ক্রীড়ার সামগ্রিক সফলতা অর্জন, ক্রীড়াবিদদের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্রীড়া কৌশল ও নেতৃত্বগুণ উন্নয়ন তথা সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এই স্পোর্টস ইনস্টিটিউট কাজ করবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব/সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য গত ২১ আগস্ট সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যেই উক্ত কমিটি কর্তৃক একটি খসড়া নীতিমালা উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিভাগীয়-জেলা ক্রীড়া সংস্থা ভেঙে এডহক কমিটি :
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও যে বড় পরিবর্তন আসবে তা অনুমেয় ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ক্রীড়া সংস্থাসমূহের কার্যক্রম সুষ্ঠু, সক্রিয়, সচল ও নির্বিঘ্ন রাখার প্রয়োজনে সরকার গঠনের দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশের সব জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, সব জেলা ও বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, সব উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ও উপজেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা ভেঙে দেওয়া হয়। এটাই ছিল ক্রীড়াঙ্গনকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রথম পদক্ষেপ।
ক্রীড়া সংস্থাগুলোতে সর্বজন গ্রহণযোগ্য ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে এডহক কমিটি গঠন করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ক্রীড়াঙ্গন সংষ্কারে সার্চ কমিটি গঠন
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিদ্যমান ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন, বোর্ড ও সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব সরকারের কাছে উপস্থাপনের নিমিত্তে ২৯ আগস্ট সার্চ কমিটি গঠন করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন জোবায়েদুর রহমান রানাকে। সার্চ কমিটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৮ এর আলোকে ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ও সংস্থাগুলোর চলমান কার্যক্রম সম্পর্কিত বিষয় পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে পেশ করবে। এ ছাড়া এই কমিটিকে ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্মকাণ্ড-সহ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালা বিশদ পর্যালোচনা করে সুপারিশমালা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।
৪২ ফেডারেশনের সভাপতি অপসারণ
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনে বিভিন্ন ফেডারেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান থাকলেও অতীতে শুধু সভাপতি পদটিতে কখনই কোনো নির্বাচন হয়নি। সরকার মনোনীত ব্যক্তিদেরকেই ফেডারেশনের সর্বোচ্চ পদে আসীন করা হতো। নতুন সরকার আসার পর গত ১০ সেপ্টেম্বর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে একযোগে দেশের ৪২টি ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিদের অপসারণ করা হয়। এছাড়া আগেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল দাবা, কাবাডি ও ব্রিজ ফেডারেশনের সভাপতিকে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৮ এর ২২ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দেশের বিদ্যমান ফেডারেশন/ অ্যাসোসিয়েশন/বোর্ড/সংস্থার কার্যক্রম অধিকতর সক্রিয় ও সংস্কারের উদ্দেশ্যে সভাপতিদের অপসারণ করা হয়।
বিভিন্ন ফেডারেশন থেকে এনএসসির ১৬ কর্মকতাকে অপসারণ
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিভিন্ন ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনে তাদের ১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সচিব মো. আমিনুল ইসলাম সাক্ষরিত এক আদেশে অপসারণ করেছে।
বিস্ময়ের কথা হলো গত সরকারের আমলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাঠকর্মী থেকে শুরু করে পরিচালক পর্যন্ত সব পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা জায়গা করে নিয়েছিলেন বিভিন্ন ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনে। এর মধ্যে কিছু ছিলেন নির্বাচিত কমিটিতে, কিছু এডহক কমিটিতে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৮ মোতাবেক তাদের অপসারণ করা হয়েছে।
ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও শুরু হওয়া সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গত ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন। ক্রীড়াঙ্গনে অনিয়ম, দুর্নীতি ধরিয়ে দেবার জন্য সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী রিপোর্টের উপর জোড় দেবার আহ্বান জানান ক্রীড়া উপদেষ্টা। পাশাপাশি বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতারও আহ্বান জানিয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন মিডিয়ার ক্রীড়া বিভাগের প্রধান, যুগ্ম ক্রীড়া সম্পাদক, দেশের শীর্ষ ক্রীড়া সাংবাদিকরা এই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। ক্রীড়াঙ্গনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ কিছু সুচিন্তিত মতামত এসময় সাংবাদিকদের কাছ থেকে উঠে এসেছে। যার আলোকে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
অডিটের অভাবে ৩৬ ফেডারেশনের অর্থ ছাড় স্থগিত
নির্ধারিত সময়ে অডিট রিপোর্ট জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ৩২টি ফেডারশেন ও অ্যাসোসিয়েশনের অর্থ ছাড়করণ সাময়িক স্থগিত করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) । যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার অনুমোদনেই এই সংক্রান্ত চিঠি জারি করে এনএসসি।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ফেডারেশনগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অভিভাবক সংস্থাটি বিশেষভাবে কাজ করছে। তারই অংশ হিসেবে এনএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) এর তদারকির উদাসীনতায় অতীতে ফেডারেশনগুলো আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আইন ২০১৮ সালের ২৩ নম্বর ধারায় প্রতিটি ফেডারেশনের আয়-ব্যয় হিসাব বিবরণী ও অডিট প্রতিবেদন পরবর্তী বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে দাখিল করার নির্দেশনা রয়েছে। এ রকম বিধান থাকলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিগত সময় ফেডারেশনগুলোকে এ ব্যপারে কোনো তাগিদ দেয়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে নিজেদের কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করে ফেডারেশগুলোতে চিঠি দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৩ ফেডারেশন অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছে। বাকি ৩২ ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশন অডিট রিপোর্ট জমা দেয়নি এনএসসিতে। ক্রিকেট বোর্ড ছাড়া দেশের বাকি সকল ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশন আর্থিক অনুদান প্রদান করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সারা বছর চার কিস্তিতে এই অর্থ ছাড় দেওয়া হয়। প্রতিটি কিস্তির বিপরীতে ভ্যাট/ট্যাক্স প্রদান করে ফেডারেশন। ফেডারেশনগুলো জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে আর্থিক হিসাব দিলেও তাদের বাৎসরিক আয়-ব্যয় ও অডিট রিপোর্ট এনএসসিতে জমা দেয় না।
খেলোয়াড়, সংগঠক, রেফারি ও কোচদের সঙ্গে মতবিনিময়
গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন খেলার কোচ, রেফারি, সংগঠক ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সকলের সুনির্দিষ্ট মতামত নিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
এই ধরনের উদ্যোগ এত কম সময়ের মধ্যে কোনো সরকারই নিতে পারেনি।
চট্টগ্রামের স্টেডিয়ামসহ আন্তর্জাতিক ভেন্যু সংস্কারের ঘোষণা
বিভিন্ন জেলায় আন্তর্জাতিক কিছু ভেন্যু অবহেলার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সেসব ভেন্যু একে একে পরিদর্শন করে সেগুলো খেলার উপযোগী করতে সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে ১৯ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচকে সামনে রেখে তিনি চট্টগ্রামে দুটি স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেছেন।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম এবং এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের ঘুরে দেখেন আসিফ মাহমুদ। এ সময় তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে (এনএসসি) ব্যবস্থা নিয়ে স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শুরু করতে বলেন। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য বিপিএলের আগেই সংস্কার কাজ শেষ করার তাগিদ দেন তিনি।
পরে ক্রীড়া উপদেষ্টা ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আফসোসের নাম চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। ১৯ বছর আগে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে এখানে। রক্ষণাবেক্ষণ নেই, মাঠের বেহাল অবস্থা। গ্যালারি, মাঠ কিংবা প্রবেশপথ, তাকানো যাচ্ছে না কোনদিকেই। বিপিএলের সময় বিদেশি ক্রিকেটাররা এখানে আসেন অনুশীলন করতে। এবার সংস্কারের ছোঁয়া পড়বে এখানেও।’
প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা
গত ১২ অক্টোবর দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মিনি স্টেডিয়াম স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা ছাত্র-জনতা অভ্যূত্থানকে স্মরণ করে বিভিন্ন উপজেলায় বীর ও শহীদদের নামে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দেন। এমসয় দেবহাটা উপজেলার মিনি স্টেডিয়ামের নাম ‘শহীদ আসিফ স্টেডিয়াম’ হিসেবে নামকরণ করা হবে বলে তিনি জানান।
৯টি ফেডারেশনে এডহক কমিটি ঘোষণা :
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) সচিব মো. আমিনুল ইসলামের স্বাক্ষর করা এক প্রজ্ঞাপনে গতকাল ৯টি ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ফেডারেশনগুলো হলো হকি ফেডারেশন, ব্রিজ ফেডারেশন, এ্যাথলেটিকস ফেডারেশন, স্কোয়াশ ফেডারেশন, টেনিস ফেডারেশন, কাবাডি ফেডারেশন, বিলিয়ার্ড ও স্লুকার ফেডারেশন, বাস্কেটবল ফেডারেশন, দাবা ফেডারেশন।
শহীদদের নামে তিন স্টেডিয়ামের নামকরণ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের নামে দেশের বিভিন্ন স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তারই ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে নিহত দুজন শহীদের স্মরণে দুটি মাঠের নামকরণ করা হয়েছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে গুলিতে নিহত টাঙ্গাইলের ১৪ বছরের স্কুলছাত্র মারুফ মিয়ার নামে টাঙ্গাইল জেলা স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ মারুফ স্টেডিয়াম। রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিহত রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ফারহান ফাইয়াজের নামে জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণের মাঠের নামকরণ করা হয়েছে শহীদ ফারহান ফাইয়াজ খেলার মাঠ।
এছাড়া কুষ্টিয়া জেলার শেখ কামাল স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের নির্যাতনে মারা যান আবরার ফাহাদ।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা তার ফেসবুক পেজে এক পোস্টে নামকরণের এই ঘোষণা দেওয়ার পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই স্বল্প সময়ে ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্যও এসেছে। যার মধ্যে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা অর্জন ছিল সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এছাড়া পাকিস্তানের মাটিতে স্বাগতিকদের টেস্টে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। সাম্প্রতীক সময়ে এটাই ক্রিকেটে অন্যতম বড় অর্জন।
সাফ অনুর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ চ্যাম্পিয়ন দল দেশে আসার দিনই সংবর্ধনার আয়োজন করেন।
দেশের শীর্ষ দুই ফেডারেশন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর সভাপতি পরিবর্তন ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচন ছিল ক্রীড়াঙ্গনের গত তিন মাসে উল্লেখযোগ্য দুটি ঘটনা।
গত ২১ আগস্ট যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি বোর্ড সভায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন নাজমুল হাসান পাপন। তার পদত্যাগে বিসিবির নতুন সভাপতি নির্বাচিত হন সাবেক ক্রিকেটার ও নির্বাচক ফারুক আহমেদ।
আগামী বছরের অক্টোবরে মেয়াদ শেষ হবার কথা ছিল পাপনের। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হবার পর আত্মগোপনে চলে যান পাপন।
২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১২৩ ভোট পেয়ে চার বছরের জন্য নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তাবিথ আউয়াল। এর মাধ্যমে টানা ১৬ বছরের সভাপতির দায়িত্বে থাকা কাজী মো. সালাউদ্দিন যুগের অবসান হলো। এবারের ভোটে অংশ নেননি সালাউদ্দিন।
দেশের খেলাধুলাকে বৈশ্বিক মানে উন্নীতকরণসহ আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় প্রস্তুত ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাসহ একটি আন্তর্জাতিক মানের স্পোর্টস ভিলেজ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা এ সরকারের রয়েছে।