অপরাধের ধরন অনুযায়ী পৃথক মামলায় যুক্ত হচ্ছেন আসামিরা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সারাদেশে সংঘটিত গণহত্যায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সরকার সংশ্লিষ্ট হাই প্রোফাইল ব্যক্তিদের পৃথকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। প্রথমে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনকে আসামি করা হলেও অপরাধের ধরন অনুযায়ী আসামি কমিয়ে মামলার সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন। এরই মধ্যে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের মামলা আলাদা করা হয়েছে। এ তালিকায় আছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীদ ওয়াজেদ জয়, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, আমির হোসেন আমু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ কয়েকজন আসামি। এছাড়া আছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ। প্রসিকিউশন সূত্র মতে, একটি মামলায় বহু সংখ্যক আসামি না করে পৃথক মামলায় জড়িত করা হলে মামলার গতি বাড়বে। এক্ষেত
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সারাদেশে সংঘটিত গণহত্যায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সরকার সংশ্লিষ্ট হাই প্রোফাইল ব্যক্তিদের পৃথকভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। প্রথমে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনকে আসামি করা হলেও অপরাধের ধরন অনুযায়ী আসামি কমিয়ে মামলার সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন। এরই মধ্যে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের মামলা আলাদা করা হয়েছে।
এ তালিকায় আছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীদ ওয়াজেদ জয়, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, আমির হোসেন আমু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ কয়েকজন আসামি। এছাড়া আছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ।
প্রসিকিউশন সূত্র মতে, একটি মামলায় বহু সংখ্যক আসামি না করে পৃথক মামলায় জড়িত করা হলে মামলার গতি বাড়বে। এক্ষেত্রে অপরাধের ধরন অনুযায়ী মামলা আলাদা করা হবে। অর্থাৎ যে যে অপরাধের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে; সেই মামলায় তাদের আসামি করা হবে। এভাবে অন্য অপরাধের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের সেই মামলায় আসামি করা হবে।
এর মধ্যে গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ২ নভেম্বর হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আরেকটি মামলায় মাহবুবউল আলম হানিফসহ চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর ওবায়দুল কাদেরসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছে। এরই আলোকে মামলাটি সাত, ছয়, পাঁচ, তিন এবং দুজন করে আসামি হিসেবে তদন্ত শুরু হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে আরও বেশ কয়েকটি আলোচিত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়তে পারে বলে প্রসিকিউশন সূত্র জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছে।
আরও পড়ুন
মানবতাবিরোধী অপরাধ/কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে ৮ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
কাদের-জয়সহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
পৃথিবীর যে-কোনো আদালত শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করবে
ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষীকে নিয়ে আইনজীবীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়
৪৫ জনের বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ৮ ডিসেম্বর
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি ও প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ১৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১ এই আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামী ৮ ডিসেম্বর দিন এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন।
এই মামলায় ৪৫ জন আসামির মধ্যে ১৭ জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে। এর মধ্যে ওই দিন ১৫ অক্টোবর ১৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালে হাজির করা ১৬ আসামি হলেন সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, আমির হোসেন আমু, মো. আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল ইসলাম, ডা. দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, শাজাহান খান, রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিম, সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
এর মধ্যে গ্রেফতার সাবেক মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি।
এর আগে গত ২০ জুলাই এই মামলার ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় তিন মাস বাড়িয়ে গত ১৫ অক্টোবর ধার্য করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এটি শুনানি হয়। কিন্তু এর মধ্যে ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা অপরাধের ধরন অনুযায়ী আসামিদের পৃথক করে বিচারের ব্যবস্থা করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে। এসব আসামির মধ্যে রয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়, সালমান এফ রহমান, জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও হারুন অর রশীদ।
আরও পড়ুন
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে বৈশ্বিক অ্যাম্বাসেডর ও উপদেষ্টা নিয়োগ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় অবশ্যই কার্যকর হবে: খোকন
শেখ হাসিনার আরও ৩ মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন
চানখাঁরপুলে ছয় হত্যা: তদন্ত কর্মকর্তার পরবর্তী জেরা ২৩ নভেম্বর
সজীব ওয়াজেদ জয়
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামি হয়েছেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা তদন্ত করছে। এরই মধ্যে তদন্তের কাজ এগিয়ে চলছে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে পলকের সঙ্গে জয়ের কথোপকথনের কল রেকর্ড পাওয়া গেছে। তাতে গণঅভ্যুত্থান দমনের বিষয়ে জয়ের সঙ্গে পলক আলোচনা করেছেন, এমন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। জয় ছিলেন পলকের মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময়কার অপরাধের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে জয়ের সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটির বিষয়টি মাথায় রেখেই মামলার তদন্ত হচ্ছে। তিনি তার সরকারি পদ ও অবস্থানকে ব্যবহার করে ইন্টারনেট বন্ধ করে গণঅভ্যুত্থান দমনের চেষ্টা করেছিলেন বলে প্রসিকিউশন সূত্র দাবি করেছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের গ্রেফতার করে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে হাজির করতে বলা হয়। এই মামলায় আসামিদের মধ্যে জয়ও একজন। এই মামলার আসামিদের ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত করে একাধিক মামলা করা হবে বলে প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে।
এই ছোট ছোট গ্রুপের মধ্যে আছেন ওবায়দুল কাদের ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ সাতজন, সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক, সজীব ওয়াজেদ জয় ও জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও হারুন অর রশীদ। এছাড়া হাসানুল হক ইনু ও মাহবুব উল আলম হানিফের মামলায় আলাদা করে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনার মামলার রায়ের কপি এখনো পায়নি প্রসিকিউশন
শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচার না করার অনুরোধ সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির
যেভাবে রাজসাক্ষী হন সাবেক আইজিপি মামুন
রায় ঘোষণার সময় কাঠগড়ায় তসবিহ জপেন সাবেক আইজিপি মামুন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসাইন তামিম জাগো নিউজকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের একদম শুরু থেকেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন এরই মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে। তাদের ‘প্রোডাকশন অ্যারেস্ট’ বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছিল। এখন তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে এই ৪৫ জনের মামলাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাসানুল হক ইনু ও মাহবুবউল আলম হানিফের মামলা দুটি ভাগে ভাগ করে আলাদা আলাদা বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ।
গাজী তামিম বলেন, এরকম ওবায়দুল কাদেরসহ সাতজনের একসঙ্গে বিচারের জন্য ভাগ করা হয়েছে। যাদের অপরাধের ধরন একই, তাদের একসঙ্গে করা হয়েছে। অথবা যদি কারও পৃথক অপরাধ থাকে তা আলাদা করা হয়েছে। এভাবেই ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে করা মামলাটা বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আলাদা আলাদা ভাগে মামলাটির তদন্ত চলছে। তার মধ্যে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের মামলা অন্যতম। এছাড়া সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ এই দুজনের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে অথবা একসঙ্গে ফরমাল চার্জ দেওয়া হতে পারে। অপরাধের ন্যাচারটা অনেকটাই সেইম, একই রকম।
প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা প্রসিকিউটর আরও বলেন, কমান্ড রেসপনসিবিলিটির দায়ে সালমান এফ রহমান ও তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হতে পারে। জয়ের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির অভিযোগ আনা হতে পারে।
প্রসিকিউটর মোহাম্মদ মিজানুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনের আলোকে এবং তাদের পরামর্শে এসব মামলা আলাদা করা হয়েছে। প্রথম যখন মামলাটি শুরু হয়, তখন একসঙ্গে ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালে কমপ্লেইন কেইস ছিল। কিন্তু, পরে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলা একত্রে ছিল। পরে সেটি তিনটা ভাগে ভাগ করা হয়। এতে আইনগত কোনো বাধা নেই। আইনের রুলসে দেওয়া আছে মামলা একসঙ্গে হবে, নাকি আলাদা হবে। প্রথমে মিস কেইস করা হয়, তখন একত্রে ছিল। পরে আলাদা করা হয়।
এফএইচ/এমএমএআর/এমএফএ/এমএস
What's Your Reaction?